BBC কার্যালয়ে জারি আয়কর অভিযান, তথ্যচিত্র মামলায় একসুর ধনকড় ও RSS-এর গলায়

0
2

বিবিসির (BBC) কার্যালয়ে আয়কর (Income Tax) ‘সমীক্ষা’ ইতিমধ্যে ৫৫ ঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছে। শেষ পাওয়া খবর পর্যন্ত এখনও বিবিসি-র দিল্লি (Delhi) ও মুম্বাই (Mumbai) কার্যালয়ে আয়-ব্যয়ের নথি খতিয়ে দেখছেন আয়কর দফতরের আধিকারিকেরা। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ এই অভিযান শুরু হয়। সংবাদমাধ্যমের ওপর এই আক্রমণে নিন্দায় সরব হয়েছে সব মহল। তবে বৃহস্পতিবার নাম না করে বিবিসিকেই কাঠগড়ায় তুললেন উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড় (Jagdeep Dhankhar)। তবে বিবিসির নাম না উচ্চারণ করলেও ‘মোদি’ তথ্যচিত্র নিয়ে যখন সরগরম দেশের রাজনীতি, ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের মুম্বই এবং দিল্লির দফতরে আয়কর ‘সমীক্ষা’ চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় সংস্থা, তখন ধনকড়ের এই মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি ভারত বিরোধী শক্তি সুপ্রিম কোর্টকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছে বলেই অভিযোগ রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (RSS)। 

বুধবার দিল্লিতে নিজের বাসভবনে পশ্চিমি সংবাদমাধ্যমের প্রতি ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে ধনকড় বলেন, ভারতের গৌরবময় অগ্রগতিকে ছোট করার ষড়যন্ত্র চলছে। আমাদের দেশের তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের প্রবণতা হল যা বিদেশি তাই নিষ্কলুষ। এরপর নাম না করে আমেরিকা-ইরাক (America Iraq) যুদ্ধ চলাকালীন পশ্চিমি সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ধনকড়। তিনি বলেন, গত শতাব্দীতে একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের তরফে দাবি করা হয়েছিল, এক জনের কাছে জনজীবন বিপর্যস্ত করার মতো যুদ্ধাস্ত্র রয়েছে। যদিও পরে সেই দাবি মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়।

পাশাপাশি সম্প্রতি আরএসএস মুখপাত্র পাঞ্চজন্য-(Panchajanya)এর একটি সম্পাদকীয় নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court of India) মূলত দেশের স্বার্থকে রক্ষা করার জন্য রয়েছে। কিন্তু দেশবিরোধী শক্তি দেশের গণতন্ত্র, উদারনীতির সুযোগ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টকে খারাপ ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। পাশাপাশি বিবিসির তথ্যচিত্রটিকেও মিথ্যা এবং কাল্পনিক বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও কিছু সন্ত্রাসবাদী মানবাধিকারের নাম ব্যবহার করে সুপ্রিম কোর্টের উন্নয়নের গতিকে রোধ করছে বলেও দাবি করা হয়েছে ওই সম্পাদকীয় নিবন্ধে।

উল্লেখ্য, ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গাতে নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) ভূমিকা নিয়ে একটি তথ্যচিত্র (Documentary) সম্প্রতি প্রকাশ করেছিল বিবিসি। যা নিয়ে সমালোচনা করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। এমনকি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক (Rishi Sunak) ও ব্রিটিশ সংসদে দাঁড়িয়ে বিবিসির তথ্যচিত্রের বিরুদ্ধ মত পোষণ করেন। এই বিতর্কের মাঝেই এবার বিবিসির অফিসে কেন্দ্রীয় সংস্থার হানা ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে বিতর্কিত তথ্যচিত্র ঘিরে বিবিসি বহুদিন ধরেই আলোচনার কেন্দ্রে ছিল। সেই জায়গা থেকে সুপ্রিম কোর্টের কাছে এই তথ্যচিত্র ব্লক করার কেন্দ্রীয় নির্দেশের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের হয়। এদিকে মামলা দায়ের হয়েছিল ভারতে বিবিসির কার্যক্রম বন্ধের আর্জি জানিয়েও। ‘ইন্ডিয়া দ্যা মোদি কেয়েশ্চন’ শীর্ষক ওই বিতর্কিত তথ্যচিত্র ভারতে দেখায়নি বিবিসি। তবে তা ইউটিউবে আপলোড করা হয়েছিল। তবে ভারত সরকার সেই তথ্যচিত্রটি ‘ব্লক’ করে দিয়েছিল।

এসবের মাঝেই বিগত দুই দিন ধরে দিল্লি এবং মুম্বইয়ে অবস্থিত বিবিসির অফিসে সার্ভে চালায় আয়কর দফতরের আধিকারিকরা। জানা গিয়েছে, ‘সার্ভে’ চলাকালীন বেশ কিছু ল্যাপটপ স্ক্যান করেছেন আধাকিরিকরা। আয়কর কর কর্তৃপক্ষ বিবিসির ‘অননুমোদিত কর সুবিধা, কর ফাঁকি, বিমুখতা এবং অসহযোগিতার’ অভিযোগের তদন্ত করছে বলে জানা গিয়েছে সূত্র মারফত। জানা গিয়েছে, বিবিসিকে অতীতেও নোটিশ দেওয়া হয়েছিল কিন্তু তারা সেই নোটিশ অনুযায়ী পদক্ষেপ করেনি। সূত্রের দাবি, ২০১২ সাল থেকে বিবিসির পুরো হিসেব নিকেশ খতিয়ে দেখা হয় এই আয়কর সার্ভে চলাকালীন।