‘কৃষ্ণ রাধা’ নামে সেন্সর ! কেন্দ্রের হাস্যকর আপত্তির র*ক্তচক্ষু সরিয়ে শুক্রবারই মুক্তি পাচ্ছে ‘এলএসডি’

0
1

সোহম চক্রবর্তী – সায়নী ঘোষ (Soham Chakraborty and Sayani Ghosh) অভিনীত নতুন বাংলা ছবি ‘লাল সুটকেসটা দেখেছেন?’-কে(LSD) ঘিরে কেন্দ্রের রাজনীতি। মুক্তির ঠিক এক দিন আগেই সেন্সরের করাল গ্রাসে এই ছবি। ছবির নাম, বেশ কিছু দৃশ্য এবং সিনেমায় ব্যবহৃত কিছু শব্দ নিয়ে হাস্যকর আপত্তি জানিয়েছিল সেন্সর বোর্ড (Central Board of Film Certification)। এরপরই গর্জে উঠেছে টলিউড। ছবি মুক্তি নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হওয়ার কারণে বৃহস্পতিবার বিকেলে কলকাতার প্রেসক্লাবে একটি সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয় টিম LSD – এর পক্ষ থেকে। উপস্থিত ছিলেন ছবির কলাকুশলী থেকে শুরু করে ডিস্ট্রিবিউটার প্রত্যেকেই। রাজনৈতিক দলের মুখপাত্র হিসেবে নয় বরং একজন অভিভাবক হিসেবেই এই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কুণাল ঘোষ(Kunal Ghosh)।

 

 

নির্মাতাদের তরফে বলা হয়, নিয়ম মেনে দীর্ঘদিন আগেই ছবিটি সেন্সর কর্তৃপক্ষের (CBFC) কাছে পাঠানো হয়েছিল। তাঁদের তরফে সাত থেকে আটটি সংলাপ বদলের কথা বলা হয়। এও জানানো হয় ছবির টাইটেল ট্র্যাকে এমন কিছু শব্দ আছে যা ব্যবহার করা যাবে না। অথচ এমন কোনও শব্দ ছিলই না যা বদলের প্রয়োজন হয়। তবুও নিয়ম মেনে সব পরিবর্তন করে ফের আবেদন করা হয়। তবুও সিনেমা মুক্তির একদিন আগে পর্যন্ত ইতিবাচক সাড়া না মেলায় প্রতিবাদে গর্জে ওঠেন সবাই। যদিও শেষ মুহূর্তে কিছু হটতে বাধ্য হল সেন্সর বোর্ড। কিন্তু এতে বাংলা সিনেমার যে পরিমান ক্ষতি হল তা কখনোই অভিপ্রেত ছিল না বলেই এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে জানান কুণাল ঘোষ। তিনি নিজে সেন্সর বোর্ড ও ইম্পার প্রাক্তন সদস্য। কুণাল বলেন, সেন্সরশিপের প্রক্রিয়ার মধ্যে থেকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়রানি করা হল। ডিজিটাল মাধ্যমে দেখা গেল সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়েছে। অথচ সাংবাদিক বৈঠক শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ আগে সার্টিফিকেট এল। সাংবাদিক বৈঠক হচ্ছে খবর পেয়ে এটা কি আটকে রাখা হল? কুণাল ঘোষ বলেন ছবিটা দেখে প্রত্যেকেই প্রশংসা করবেন। কিন্তু যেহেতু ছবিতে অভিনেতা অভিনেত্রীরা তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত তাই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ছবিটাকে আটকে দেওয়ার একটা চেষ্টা হল। যে শব্দগুলো নিয়ে সেন্সর বোর্ডের বিজেপির সক্রিয় সদস্য পার্থ সারথী চৌধুরী আপত্তি জানালেন সেগুলো নিঃসন্দেহে হাস্যকর। বিজেপি সেন্সর বোর্ডের তরফ থেকে যে যে কারণ দেখানো হয়েছে এই ছবিকে ছাড়পত্র না দেওয়ার জন্য, সেই কারণগুলোর পেছনে আদৌ কোন যুক্তি আছে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন কুণাল। তিনি বলেন, সেন্সর বোর্ডের কথা মতো কৃষ্ণ রাধা নাম রাখা যাবে না। হ্যালুসিনেশন ও ওভারডোজ শব্দ রাখা যাবে না। এগুলো কি চূড়ান্ত পাগলামির নমুনা নয়?

অভিনেতা প্রযোজক সোহম চক্রবর্তী এদিন জানান , তাদের অভিভাবক হিসেবেই কুণাল ঘোষ সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছেন। এই সাংবাদিক সম্মেলনে কোনও রাজনীতি নেই। বিনোদন জগতের একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক রোষানলের প্রতিবাদ সংগঠিত করার জন্যই বিষয়টি সকলের সামনে আনা হচ্ছে। সিনেমার সঙ্গে যুক্ত প্রতিটি মানুষের কাছে এই ঘটনা কোনোভাবেই অভিপ্রেত ছিল না। সোহম সেন্সর বোর্ডের কর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, “ভুলে যান আমি তৃণমূল বিধায়ক, সায়নী পার্টি করে। আমাদের যা শিক্ষা তাতে সমাজের কোনও ক্ষতি হবে না। আমরা একটা মেসেজ দেওয়ার চেষ্টা করেছি মাত্র। সেখানে পার্থসারথি চৌধুরী নামে বোর্ডের এক সদস্য আপত্তি জানালেন। ” বলেন পরিচালক এই বিষয়ে পার্থসারথি চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে , তিনি পরিষ্কার বলেন এই ইন্ডাস্ট্রির প্রতি তার কোনও দায়িত্ব নেই। এরপর ওই ব্যক্তির ওই চেয়ারে বসার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সোহম । অভিনেতা বলেন এই ছবিতে এমন অনেকেই কাজ করেছেন যারা বিজেপিতে গিয়েছিলেন, কিন্তু সিনেমার অভিনয় করার সময় কোন রাজনৈতিক প্রভাব কাজ করেনি। একে অন্যের মতাদর্শকে সম্মান জানিয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে বাংলার বিনোদন জগত। তাহলে বিজেপি কেন এই রাজনীতি করে সিনেমা জগতকে সমস্যার মধ্যে ফেলতে চাইছে?গানে ব্যবহৃত ‘হ্যালুসিনেশন’ আর ‘ওভারডোজ’ শব্দের জন্য একটা সিনেমাকে কি ‘A’ সার্টিফিকেট দিয়ে দেওয়া যায়, প্রশ্ন করেন সোহম। তিনি স্পষ্ট বলেন গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে রাজতন্ত্র কায়েম রাখার এক অপচেষ্টা করা হচ্ছে এবং দর্শক এর বিচার করবেন।

একটা বাংলা সিনেমাকে মুক্তির জন্য ছাড়পত্র দেওয়া হল না। আর যখনই সেই ঘটনাকে নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন হবে বলে খবর প্রকাশিত হল, তখনই সঙ্গে সঙ্গে ছাড়পত্র দিয়ে দেওয়ায় কাঠগড়ায় ভারতীয় সেন্সর বোর্ড। এই ছবির নায়িকা অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ (Sayani Ghosh)। সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত থেকে তিনি বলেন, “সবাইকে বলছি আমাদের পাশে দাড়ান। বাংলা ছবির পাশে দাড়ান। একটা সার্টিফিকেট পেতেই যদি এত সময় লেগে যায় তাহলে প্রযোজক ছবি নিয়ে এগোবেন কীভাবে? এই বয়কট কালচার কোথা থেকে আসছে সেটা সবাই জানে। ‘পদ্মাবতী’ বলা যাবে না ‘পদ্মাবত’ বলতে হবে। এমন সেন্সর বোর্ড চাই না যারা সমাজকে ১০০ বছর পিছিয়ে দেবে।” এখানেই শেষ নয়, অভিনেত্রী এদিন বেশ কিছু প্রশ্ন তুলে ধরেন সাংবাদিকদের সামনে। তিনি বলেন, “রাধে রাধে বা কৃষ্ণ শব্দতে কারও মোনোপলি রয়েছে? অভিনেতারা ভাবছেন এটা বললে কাজটা করতে পারব কিনা? আউট অফ দি বক্স কিছু হচ্ছে না বলে বলা হচ্ছে। তাহলে আগামীদিনে বাইরে থেকে কেউ এসে বাংলা ছবির বাজারে লগ্নি করবেন? আমরা তো পলিটিক্সের বাইরে নয়। আমরাও তার অংশ। তার সঙ্গে রয়েছি বলেই কি এই হয়রানি?”

একটা বাংলা সিনেমা সব ধরনের দর্শকের জন্য বানানো হয়েছিল। সেখানে ‘A’ সার্টিফিকেট মানেই তো লিমিটেড দর্শক হয়ে গেল। তাহলে কি এইভাবে বাংলা ছবির বাজার কে ব্যাহত করার চেষ্টা করছে না কেন্দ্র? সিনে জগতে এখন এই প্রশ্নই সবার মাথায় ঘুরছে। সিনেমার সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকেই বলছেন দর্শক বিচার করবেন যে আদৌ ছবিতে কোন অ্যাডাল্ট কন্টেন্ট আছে কিনা। সায়নী বলেন, “যেসব গ্লোবাল কনটেন্টের সঙ্গে কাজ করতে চাইছি এসব বোকা বোকা কথা বলে বলে আমাদের পিছিয়ে দিতে চাইছেন। এই রাজ্যের শাসক দল থাকার পরও আমাদের নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ছি।” পরিচালক সায়ন্তন ঘোষাল (Sayantan Ghosal) সাংবাদিকদের জানান যে পার্থসারথি চৌধুরীর (Partha Sarathi Chowdhury) সঙ্গে গোটা বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে কথা কাটাকাটি ঝগড়ার জায়গায় চলে যায়। তিনি বলেন ড্রাগকে প্রমোট করা হয়েছে বলে এই ছবিতে অ্যাডাল্ট সার্টিফিকেট দেওয়ার যুক্তি খাড়া করা হয়। সিনেমার নাম পরিবর্তন থেকে শুরু করে একটি গানের ব্যবহৃত কৃষ্ণ রাধা শব্দ পরিবর্তনের হাস্যকর যুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করা হয় বলে জানান পরিচালক। সিনেমাতে যাঁরা অভিনয় করেছেন তাদের মধ্যে কেউ তৃণমূল করেন কেউ আবার বিজেপিতে আছেন। কিন্তু সিনেমা তৈরীর সময় কেউ কারো ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেনি বলেই মত পরিচালকের। ইচ্ছাকৃতভাবে বিনোদন জগতে রাজনীতিকে প্রবেশ করানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন সায়ন্তন। অভিনেতা পরিচালক অভিজিৎ গুহ বলেন যা যা পয়েন্ট সেন্সের বোর্ড তুলে ধরেছে সেগুলো যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেটা সবার কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে। ডিস্ট্রিবিউটর শতদীপ সাহা (Shatadeep Saha) বলেন, “আগের বছর ৮৬ টা ছবি ডিস্ট্রিবিউশন করেছি, কখনও এরকম দেখিনি। ”