চেনা মেজাজে মমতা: ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরে পুজো, রাস্তার দোকানে ভাজলেন সিঙাড়া-সাজলেন পান

0
2

সোমনাথ বিশ্বাস, আগরতলা

দু’দিনের ত্রিপুরা সফরে এসে প্রথমেই উদয়পুরে ত্রিপুরেশ্বরী মাতা-মন্দিরে পুজো দিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে ছিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রদেশ তৃণমূল নেতৃত্ব।

কলকাতা থেকে আগরতলা মহারাজা বীর বিক্রম বিমানবন্দরে নেমে সেখান থেকে সরাসরি প্রায় ৬৫ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে উদয়পুরের ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরে আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক। মন্দির কর্তৃপক্ষ আগে থেকেই পুজোর সমস্ত ব্যবস্থা সেরে রেখেছিলেন। তৃণমূল সুপ্রিম মন্দিরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই পূজারীরা তাঁর হাতে পুজোর ডালা বাড়িয়ে দেন। এরপর ভক্তি ভরে মায়ের কাছে পুজো দেন তৃণমূল নেত্রী।

ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরে পুজো শেষ করে আগরতলায় ফেরার পথে আচমকাই মাঝরাস্তায় বিশ্রামগঞ্জ বাজারে নেমে পড়েন তৃণমূল নেত্রী। ঢুকে পড়েন একটি তেলে ভাজার দোকানে। সেখানে নিজের হাতে লেচি তৈরি করে সিঙাড়া ভাজেন তিনি। উপস্থিত সকলকে তেলে ভাজা মুড়িও খাওয়ালেন। এরপর পাশের পানের দোকানে গিয়ে নিজে হাতে পান সাজলেন। সেখানে দাঁড়িয়েই নিজে চা খেলেন এবং সঙ্গে থাকা তৃণমূল নেতৃত্ব এবং সাংবাদিকদেরও চা খাওয়ালেন তৃণমূল নেত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর এই ভূমিকা থেকে বোঝার উপায় ছিল না তিনি নিজের রাজ্যে আছেন নাকি অন্য রাজ্যে ভোটের প্রচারে এসেছেন। আসলে এদিন আগরতলা বিমানবন্দরে নেমেই তিনি বুঝিয়ে দেন, তিনি যতটাই বাংলার মেয়ে ততটাই ত্রিপুরারও। বাংলা এবং ত্রিপুরাকে একেবারেই আলাদা চোখে দেখেন না তিনি। দুই রাজ্যের মানুষকেই হৃদয় থেকে ভালোবাসেন তৃণমূল নেত্রী। এদিন আচমকা তেলেভাজা ও চায়ের দোকানে তৃণমূল নেত্রীর ঢুকে পড়া সেই বার্তায় দেয়।

বাংলাতেও মুখ্যমন্ত্রী যখন জেলায় জেলায় যান তখন তাঁকে এমন ভূমিকায় বারে বারে দেখা গিয়েছে। কখনও দর্জিলিংয়ে গিয়ে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের সঙ্গে হাতে হাতে মোমো বানাচ্ছেন তো কখনও বীরভূম-নদিয়ায় চায়ের দোকানে গিয়ে চা বানাচ্ছেন এবং তা সকলকে পরিবেশন করছেন। ত্রিপুরাতেও সেই চেনা মেজাজই ধরা দিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এবং ত্রিপুরাবাসীকে বার্তা দিলেন “মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক আমি তোমাদেরই লোক”।

অন্যদিকে, বিশালগঞ্জ বাজারে রাধাগোবিন্দ মিষ্টান্ন ভান্ডারের যে দোকানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঢুকেছিলেন রাতারাতি তা বিখ্যাত হয়ে গিয়েছে। জানাজানি হওয়ার পর মানুষ ভিড় করছেন সেই দোকান দেখার জন্য। দোকানের মালিক অভিজিৎ ঘোষ বলেন, “মমতাদি আচমকা তাঁর দোকানে হাজির এটা তিনি যেন কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছেন না। সবকিছুই যেন স্বপ্নের মত লাগছে। ভাষায় বোঝাতে পারবো না কতটা আপ্লুত আমি। দিদিকে সামনে থেকে দেখে তো বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছি।”

এদিকে তৃণমূল সূত্রে খবর, এদিন রাতে আগরতলাতেই থাকবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক। প্রদেশ নেতৃত্বর সঙ্গে জরুরি বৈঠক করবেন তাঁরা। আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি ত্রিপুরায় হাইভোল্টেজ বিধানসভা নির্বাচন। ভোটে দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে দুদিনের ত্রিপুরা সফরে এসেছেন তৃণমূল নেত্রী। বৈঠক থেকে তিনি নির্বাচনের রণকৌশল ও দিকনির্দেশ তৈরি করে দিতে পারেন ত্রিপুরা নেতৃত্বের জন্য।

আগামীকাল, মঙ্গলবার আগরতলায় দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে বর্ণাঢ্য রোড-শো করবেন তৃণমূল সুপ্রিমো।রবীন্দ্রভবন থেকে শুরু হবে পদযাত্রা। সেখান থেকে রাজবাড়ি, অ্যাকশন গেট, কামান চৌমুহনী, সূর্য চৌমুহনী, বটতলা, শঙ্কর চৌমুহনী, বিদুরকর্তা চৌমুহনী ঘুরে রবীন্দ্রভবনে এসেই শেষ হবে মিছিল। সেখানেই জনসভা করবেন তৃণমূল সুপ্রিমো।

আরও পড়ুন- রবির পরে সোমেও ধাক্কা পদ্ম শিবিরে, ফেসবুকে পোস্ট করে বিজেপি ছাড়লেন কাঞ্চনা