মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেনের (Amartya Sen) বাড়ি সম্পর্কিত যে কাগজ দেখাচ্ছেন তা প্রাসঙ্গিক নয়। অমর্ত্য সেন বিশ্বভারতীর ১৩ ডেসিমেল জমি দখল করে রেখেছেন, এই দাবিতেই অনড় কর্তৃপক্ষ। বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর (Bidyut Chakraborty) কথায়, “সরকার পক্ষ, প্রশাসনের লোকজন থাকুন। বিশ্বভারতীর (Viswabharati) লোকজনও উপস্থিত থাকুন। সবার উপস্থিতিতে জমির মাপজোক করা হোক।”
গতকাল, সোমবার নোবেলজয়ীর শান্তিনিকেতনের বাড়ি “প্রতীচী”তে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বিশ্বভারতীর পক্ষ থেকে ২৪ জানুয়ারি চিঠি দেওয়া হয়েছিল। তিনি নাকি ১৩ ডেসিমেল জমি দখল করে রেখেছেন। আমি ক’দিন ধরে অনেক ভাবে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেছি। বিশ্বভারতীকে যখন জমিটা দেওয়া হয়েছিল সেই কাগজ আমি নিয়ে এসেছি।” এর পরই ১৯৮৪ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কোন দাগের কোন জমি দিয়েছিল তার বিবরণ পাঠ করেন মুখ্যমন্ত্রী। এই প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘‘যে জমিটা লিজ়ে দেওয়া হয়েছিল তা ১.৩৮৮ একর। আর ওরা (বিশ্বভারতী) বলছে ১.২৫ একর। ‘এল আর’ রেকর্ড বলছে, ১.৩৮ একর। তাই অমর্ত্য সেন ঠিক বলছেন। ১৯৫৬ সালের ‘আরএস’ রিপোর্টেও একই তথ্যা রয়েছে।” পাশাপাশি, বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতির ছোঁয়া লাগানো হচ্ছে বলেও নিশানা করেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে উপাচার্য বলেন, “বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নির্ধারণ করেন সেন্ট্রাল গর্ভমেন্ট কেন্দ্রীয় সরকার। ফলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এটা মনে রাখা উচিত ছিল।”জমি বিতর্কে উপাচার্যের দাবি, বিশ্বভারতীর ‘বিপুল পরিমাণ’ জমি দখল হয়ে রয়েছে। তিনি নিয়ম মেনে সেগুলি উদ্ধারের চেষ্টা করছেন। সে কারণেই তিনি চান অমর্ত্য ওই জমি ফিরিয়ে দিয়ে অন্যদের বার্তা দিন।
অন্যদিকে, অমর্ত্য সেনকে পরিকল্পিত ভাবে অপমান করা হচ্ছে বলে দাবি করেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। বিশ্বভারতীর উপাচার্যের কণ্ঠে রাজনীতির সুর আছে বলেও ইঙ্গিত দেন কুণাল। তিনি বলেন, “বিশ্বভারতী এবং অমর্ত্য সেন নিয়ে যে অনভিপ্রেত বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তা নিয়ে নথি তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী যা যা বলার সবই বলেছেন। বিশ্বভারতীর উপাচার্য নতুন করে যদি বিতর্ক তৈরি করতে চান সেটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আমরা রাজনৈতিকভাবে বিষয়টির মধ্যে ঢুকতে চাই না। কিন্তু বাংলার গর্ব, গোটা দেশের গর্ব নোবেল জয়ী অমর্ত্য সেনকে যদি লাগাতার অপমান করা হয়, কুৎসা করা হয়, তাহলে তা বাংলার মানুষ মেনে নেবেন না। মুখ্যমন্ত্রী গোটা বাংলার বক্তব্য ও আবেগের যথাযথ প্রতিনিধিত্ব করছেন।”
উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে নিশানা করে কুণালের আরও সংযোজন, “যাঁরা সমালোচনা করছেন তাঁদের মনে রাখা দরকার, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাতবারের সাংসদ, তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী, দু’বার রেলমন্ত্রী, সবমিলিয়ে চারবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। সুতরাং, কার কোথায় কিসে নিয়োগ, কতটা অংশ বলা যায়, কতটা বলা যায় না সেটা মুখ্যমন্ত্রী ভালই জানেন। একজন মুখ্যমন্ত্রী যখন কোনও তথ্য তুলে ধরে নথি পেশ করে কিছু বলছেন, তখন সেই বক্তব্যকে কলুষিত করার চেষ্টা করা বোধহয় বুদ্ধিমানের কাজ নয়। এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। তাঁর কণ্ঠে কোন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্ব হচ্ছে, তাও স্পষ্ট। পাশাপাশি কুণালের সাফ কথা, অমর্ত্য সেনকে পরিকল্পিতভাবে অপমান করার চেষ্টা করলে বাংলার মানুষ ক্ষমা করবেন না।