জি ২৪ ঘণ্টায় সাক্ষাৎকার: ফেসবুকে দর্শক সংখ্যার নিরিখে মিঠুনকে গোহারা হারালেন কুণাল

0
1

জি ২৪ঘণ্টায় সাক্ষাৎকার। আগের দিন ৭টার জবাব পরের দিন রাত ১০টায়। সওয়াল-জবাব যাই হোক, জনতার দরবারে মিঠুন চক্রবর্তীকে (Mithun Chakraborty) বলে বলে ১০ গোল দিলেন কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh)। ‘প্রজাপতি’ বিতর্কের জল অনেকদূর গড়িয়েছে। তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছিলেন, মিঠুনের অভিনয়ের জন্যই ছবিটি ফ্লপ করবে। এর প্রেক্ষিতে কুণালকে ‘গঙ্গারাম‘ বলে কটাক্ষ করেন বিজেপি নেতা মিঠুন। তার মোক্ষম জবাব দেন কুণাল ঘোষ। তিনি বলেন, “আমি সরাসরি তাঁর মুখোশ খুলে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। সেকারণেই তাঁর রাগ”। কুণালের কথায়, “এই ‘গঙ্গারাম’কে দিয়েই প্রণব মুখোপাধ্যায়কে (Pranab Mukharjee) বলিয়ে পদ্মশ্রীর সুপারিশ করেন, তখন ‘গঙ্গারাম’ বলে মনে থাকে না!“ আর এই তর্ক-বিতর্কে জনতা কিন্তু এগিয়ে রাখল তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদককেই। ফেসবুকে জি ২৪ঘণ্টার পেজে মিঠুনের সাক্ষাৎকারের ভিউ যেখানে ৪৩ হাজার, সেখানে কুণাল ঘোষের সাক্ষাৎকারে ভিউ ১লক্ষ ৫৬ হাজার (প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত)। দুটি ক্ষেত্রেই সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন চ্যানেলের ডেপুটি এডিটর মৌপিয়া নন্দী। সেখানে দর্শক সংখ্যার নিরিখে অর্থাৎ জনপ্রিয়তার, গ্রহণযোগ্যতার মাপকাঠিতে মহাগুরুকে গোহারা হারিয়েছেন কুণাল।

বিজেপি-র নেতার সাক্ষাৎকারটি সম্প্রচার হয় নিউজ চ্যানেলের (News Channel) হিসেবে প্রাইম টাইম – সন্ধে ৭টায়। কুণালের পাল্টা জবাব সম্প্রচারিক হয় পরের দিন রাত দশটায়। সেই সাক্ষাৎকার দুটি জি ২৪ঘণ্টার ফেসবুক পেজে (Face Book Page) পোস্ট করা হয়। আগেরদিন সন্ধের করা একটি পোস্টকে পরেরদিন রাতের পোস্ট হারিয়ে দেয় ভিউয়ারশিপে। কুণালের সাক্ষাৎকারটি ফেসবুকে দেওয়া মাত্রই ঝড়ের গতিতে ভিউ হতে থাকে। সঙ্গে লাইকের বন্যা। অনেকেই সেটা শেয়ার করেন। ভিউ ও রিচের ঊর্ধ্বগতি দেখে চ্যানেল থেকে এরপর কুণালের সাক্ষাৎকালের বিশেষ বিশেষ অংশ আলাদা ভাবে কেটে পোস্ট করা হয়। সেগুলিও গোগ্রাসে গিলতে থাকেন দর্শকরা।

কী ছিল কুণাল ঘোষের জবাবে?
সাক্ষাৎকারে তৃণমূল মুখপাত্রকে “এলি তেলি গঙ্গারাম” বলে কটাক্ষ করেছিলেন বিজেপি নেতা মিঠুন। তার জবাবে কুণাল ঘোষ বলেন, “মিঠুন চক্রবর্তী অভিনয় জগতের একটা বিরাট নাম। মৃগয়া, ডিস্কো ডান্সার-সহ এখনকার কিছু বাংলা ছবি নিশ্চয় ভালো। কিন্তু দেখবেন মিঠুন চক্রবর্তীর একটি ছবি রয়েছে। সেটি হল ‘অ্যালান’। সেখানে উনি ভিলেনের রোল করেছেন। মিঠুনদা বেসিক ভিলেন চরিত্রে খুবই ভালো অভিনয় করেন। ওঁর হিরোর চরিত্র দেখে বুঝতে পারবেন না। ওঁকে দেখলে মনে হবে স্বাভাবিক। কিন্তু ভিলেন। রিল এবং রিয়েল লাইফেও। আসল-নকল সব একাকার। খলনায়ক। মনে এক, মুখে এক। মাথায় এক, চোখে এক।“

মিঠুন চক্রবর্তীর দলবদল নিয়ে কুণাল বললেন, “মিঠুনদা এতবড় অভিনেতা হলেও তাঁর রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব রয়েছে। মমতাদি এমপি করেছিলেন। উনি বলেছিলেন, আমাকে জীবনে কেউ কিছু দেয়নি। মমতা আমার বোন। আমি সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকব। যেই সিবিআই-ইডি চলে এল উনি বিজেপিতে চলে গিয়ে সেই মমতাদিকে আক্রমণ করতে শুরু করলেন। এখন ববিদা হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিয়েছেন। সেইসব কারণে উনি এসব বলছেন।“

তাঁর সাক্ষাতকারে পদ্ম সম্মান নিয়ে মিঠুন বলেছিলেন, “পদ্মশ্রীর অফার প্রতি বছরের মতো এবারও এসেছে। আমি বলেছি, পদ্মশ্রী নেব না। পদ্মশ্রীকে সম্মান জানিয়েই বলছি যারা পদ্মশ্রী পেয়েছেন তাদের থেকে আমার অবদান কম কিছু নয়। পদ্মভূষণ দিলে ভাবব।“ পাল্টা কুণালর বলেন, “ভাবব মানে কী! যারা পদ্ম সম্মান পাচ্ছেন তারা ইতিমধ্যেই তা জেনে গিয়েছেন। পদ্মশ্রীতে উনি নাম না রাখতে বলেছেন। তার মানে ওঁকে কেউ বিবেচনা করেননি। তবে এটা ঠিক যে যখন অক্ষয় কুমার পদ্মশ্রী পেয়েছিলেন তখন মিঠুনদা তা পেতে পারতেন না? এইসব ক্ষোভ থেকেই প্রণববাবুর কাছে তাঁর যাওয়া। এখন সম্মান না পেয়ে এসব বলছেন।“ প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রয়াত প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছে মিঠুনকে যে কুণাল ঘোষই নিয়ে গিয়েছিলেন সেকথাও জানান তিনি। কুণালের দাবি, “এই গঙ্গারামকে দিয়ে যখন প্রণব মুখোপাধ্যায়কে বলিয়ে পদ্মশ্রীর সুপারিশ করেন, তখন ‘গঙ্গারাম’ মনে থাকে না। এই ‘গঙ্গারামে’র সঙ্গে ২০১১ সালে মমতাদি ক্ষমতায় আসার পর, রাইটার্সে গিয়ে মমতা আমায় ক্ষমা করে দাও! কে বলেছিল? মিঠুন চক্রবর্তী বলেছিল“। অত্যন্ত নিরপেক্ষতার সঙ্গেই দুটি সাক্ষাৎকার নেন মৌপিয়া নন্দী। একজনের করা অভিযোগের জবাব অন্যজনকে দেওয়া পূর্ণ সুযোগ দেন তিনি। মিঠুন তাঁর সাক্ষাৎকারে বলেন ছিলেন, এঁদের (পড়ুন কুণালকে) একা দৌড়তে দিলেও দ্বিতীয় হবে। এখন দর্শকের পছন্দের নিরিখে মিঠুনকে বহুযোজন দূরে ফেলে এগিয়ে গিয়েছে কুণাল ঘোষ। এবার প্রথম কে আর দ্বিতীয় কে? উত্তর দেবেন মহাগুরু!