নিয়োগ দুর্নীতি থেকে পাচার কাণ্ড কিংবা ভোট পরবর্তী হিংসাকাণ্ড থেকে হত্যাকাণ্ড, রাজ্যে একাধিক হাইভোল্টেজ মামলার তদন্তে দায়িত্বে রয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই (CBI)। কিন্তু বিভিন্ন মামলায় তাদের তদন্তের অগ্রগতিতে একেবারেই খুশি নয় কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)। খুব স্বাভাবিকভাবেই কলকাতা হাইকোর্টের প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে (Central Investigation Agency)।
গরুপাচার কাণ্ডে অনুব্রত মণ্ডলের (Anubrata Mondal) পর এবার শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি (SSC Recruitment Scam) মামলায় মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ের (Kalyanmay Ganguly) জামিন সংক্রান্ত মামলায় সিবিআইকে কলকাতা হাইকোর্টের প্রশ্ন, “জোরালো যুক্তি না থাকলে একজনকে কতদিন বন্দি করে রাখতে পারবেন?” অনেকেই মনে করছেন, বিচারপতির এমন মন্তব্য সিবিআইয়ের প্রতি অনাস্থার সামিল বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল।
যদিও কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়কে আজ, বুধবার জামিন দেয়নি বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ। তবে তদন্তে নেমে যাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে তথ্য প্রমাণ দিতে বারবার হোঁচট খাচ্ছে সিবিআই। বুধবার কল্যাণময়ের জামিন মামলা শুনানিতে তা আরও একবার স্পষ্ট হল। কেন কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ের জামিনের বিরোধিতা করা হচ্ছে তার স্বপক্ষে পর্যাপ্ত যুক্তি খাড়া করতে পারেনি সিবিআই। গত ১৩ ডিসেম্বর জামিনের আবেদন করেন কল্যাণময়। জামিনের বিরোধিতা করে সিবিআই। কী জন্য বিরোধিতা? তা সিবিআইয়ের কাছে জানতে চেয়েছিল আদালত। কিন্তু গত ২২ ডিসেম্বর জামিন মামলার পরবর্তী শুনানিতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার জবাবে অসন্তোষ প্রকাশ করে আদালত। এদিনও সিবিআইকে বিচারপতি বাগচী বলেন, “নিয়োগ দুর্নীতিতে আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি ভাল করে তদন্ত করুন। অযোগ্যদের তো আর ভালোবেসে চাকরি দেওয়া হয়নি!”
উল্লেখ্য, ১১৩ দিন ধরে জেলে রয়েছেন কল্যাণময়। তাঁর বিরুদ্ধে চার্জশিটও পেশ হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কল্যাণময়ের আইনজীবী বলেন, তাঁর মক্কেলের শারীরিক সমস্যা রয়েছে। তা ছাড়া স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ কমিটির উপদেষ্টা ছিলেন শান্তিপ্রসাদ সিনহা। তাঁর দেওয়া সুপারিশপত্র মেনেই নিয়োগপত্র করা হয়েছে। বুধবার এ ব্যাপারে আদালতের প্রশ্নের জবাবে সিবিআই জানিয়েছে, প্যানেলের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও প্রচুর অযোগ্যকে নিয়োগ করা হয়েছে। তদন্তে বেনিয়ম দেখেই গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। আগামিকাল, বৃহস্পতিবার ফের এই মামলার শুনানি রয়েছে।
প্রসঙ্গত, এর আগে এসএসসি শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলায় সিবিআই তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে ”হতাশা” প্রকাশ করেন ”আশাহত” বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ভরা আদালতে স্পষ্ট কথায় নিজের চরম ”হতাশা” ব্যক্ত করে বিচারপতি জানিয়েছিলেন, তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে তিনি ”খুশি” নন। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সেইসময় শোরগোল ফেলে দেওয়া তির্যক মন্তব্য, ”ডজন খানেক সিবিআই তদন্ত শেষে নোবেল পুরস্কার হবে! মনে হচ্ছে সিবিআই-এর থেকে সিট ভাল। টানেলের শেষে কোনও আলো দেখতে পাচ্ছি না। আমি ক্লান্ত। নভেম্বর মাসে প্রথম সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলাম। তারপর কী হয়েছে? কিছুই নয়। ক্লান্ত আমি। নভেম্বরের পর থেকে কিছুই করেনি সিবিআই। কাকে তদন্ত করতে বলব!”