খায়রুল আলম,ঢাকা : অবশেষে মেট্রোরেল যুগে প্রবেশ করলো বাংলাদেশ। বহুল প্রতীক্ষিত স্বপ্নের মেট্রো রেল উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মেট্রোরেলের প্রথম যাত্রী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা টিকিট কেটে মেট্রোরেলে চড়ে উত্তরার দিয়াবাড়ি স্টেশন থেকে আগারগাঁও স্টেশনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন।
মেট্রো রেলকে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির মুকুটে আরেকটি পালক হিসেবে অভিহিত করেলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মেট্রো রেলের উদ্বোধন করে তিনি বলেছেন, ‘আজকে আমরা বাংলাদেশের অহংকারে আরেকটি পালক সংযোজন করতে পারলাম।’ বুধবার উত্তরার দিয়াবাড়িতে বক্তব্য রাখার সময় এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। মেট্রোরেল প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক টাকা খরচ করে মেট্রোরেল করা হয়েছে। এই মেট্রোরেল সংরক্ষণ করা সবার দায়িত্ব। যাতে মেট্রোরেলের কোনও কিছু নষ্ট না হয়, সে জন্য তিনি সবাইকে তা ব্যবহারে যত্নশীল হতে আহ্বান জানিয়েছেন।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সবাইকে নিয়ম মেনে মেট্রোরেল ব্যবহার করতে হবে।
প্রথম যাত্রায় প্রধানমন্ত্রীর ভ্রমণসঙ্গী হয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, স্কুল কলেজ ও মাদরাসা শিক্ষার্থী, মসজিদের ইমাম, পোশাককর্মী, রিকশা চালক, সবজি বিক্রেতা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী এবং সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা।
বেলা ১১টার দিকে উত্তরার ১৫ নম্বর সেক্টরের ‘সি’ ব্লকের মাঠে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এই বৃহৎ অবকাঠামো উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিনুল্লা নুরী, মেট্রোরেল কোম্পানির এমডি এম এন সিদ্দিকসহ সরকারের পদস্থ কর্মকর্তারা।
৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা ব্যয়ে উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ২১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ চলছে জাপানের উন্নয়ন সংস্থা জাইকার সহযোগিতায়।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্নপূরণ হল। উত্তরায় আনুষ্ঠানের শেষে আজ দুপুর দুটোর সময় দিয়াবাড়ি (উত্তরা) স্টেশন থেকে মেট্রোরেল আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রী নিয়ে আগারগাঁওয়ের দিকে ছোটে।সাধারণ যাত্রীরা অবশ্য মেট্রোরেলে চড়তে পারবেন আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল আটটা থেকে।
ঢাকায় মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আজ উদ্বোধনের পর মেট্রোরেল চলাচল করবে সীমিতভাবে। আগামী ২৬ মার্চ থেকে উত্তরা-আগারগাঁও পথে পুরোদমে যাত্রী নিয়ে চলাচল করবে মেট্রোরেল। উত্তরা–আগারগাঁও পথের জন্য ৬ কোচবিশিষ্ট ১০টি ট্রেন প্রস্তুত করা হয়েছে।
প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রথম তিন মাস মেট্রোরেল মাঝের কোনও স্টেশনে থামবে না। ১০ মিনিট পরপর ট্রেন যাত্রা শুরু করবে। দিনে চলবে ৪ ঘণ্টা—সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। প্রতিটি ট্রেন সর্বোচ্চ ২০০ যাত্রী নিয়ে চলাচল করবে। সপ্তাহে এক দিন মঙ্গলবার ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে। অবশ্য টিকিট কাটা, ওঠানামা ও চলাচলে মানুষের অভ্যস্ততা তৈরি হলে ঘন ঘন ট্রেন চলবে, সব স্টেশনে থামবে এবং যাত্রীও বেশি নেওয়া হবে। 
ডিএমটিসিএল কর্মকর্তারা বলছেন, মেট্রোরেলের মূল পরিকল্পনায় প্রতি সাড়ে তিন মিনিট অন্তর ট্রেন চলার কথা। মাঝের স্টেশনে যাত্রাবিরতির সময় হবে ৩০ সেকেন্ড।
ভিড় বেশি হলে একটি ট্রেন কত যাত্রী নিতে পারবে, তার একটি হিসাবও আছে। ডিএমটিসিএল বলছে, একেকটি ট্রেনে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৩০৮ জন যাত্রী চলাচল করতে পারবেন। বসার ব্যবস্থা রয়েছে ৩০৬ জনের। ট্রেনের সাড়ে ৯ ফুট চওড়া কোচের দুই পাশে আসন থাকবে। মাঝে প্রশস্ত জায়গায় যাত্রীরা দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করতে পারবেন। বুধবারের প্রথম ট্রেনটি আগারগাঁও স্টেশনের তিনতলায় এসে ট্রেন থামবে।










































































































































