সোমবার বিজ্ঞপ্তি জারি করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা(Ration Project)। অন্যদিকে তার পরিবর্তে মমতা সরকারের মডেলকে হাতিয়ার করে কেন্দ্রীয় গরিব অন্ন সুরক্ষা যোজনায় ২ টাকা কেজির চাল-গমকে ‘বিনামূল্যে’র চমক দিয়েছে মোদি সরকার(Modi Govt)। ২৩-এর নির্বাচনকে নজরে রেখে পুরনো প্রকল্পকে নতুনভাবে চালু করা হয়েছে। নাম বদলে নতুন এই প্রকল্পে আবার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে গ্রাহকদের মাথাপিছু ৫ কেজি অতিরিক্ত খাদ্যশস্য। সাধারণ মানুষ কম রেশন পাওয়ায় কেন্দ্রের লাভের ঘরে ঢুকছে ১ লক্ষ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। নতুন প্রকল্পের নামে মানুষকে বঞ্চিত করে মোদি সরকারের এহেন সস্তার প্রচারের বিরোধিতায় সরব হল তৃণমূল সহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলি। পাশাপাশি কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করতে চলেছেন রেশন ডিলাররা(Dealer)।
ইন্ডিয়া ফেয়ার প্রাইস শপ ডিলারস ফেডারেশনের তরফে মঙ্গলবার জয়পুরে একটি বৈঠকের ডাক দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, পিএমজেকেএওয়াই প্রকল্প বন্ধের প্রতিবাদে তাঁরা আগামী ১১ জানুয়ারি দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। তবে সেই কর্মসূচি কী ভাবে আয়োজিত হবে, সে প্রসঙ্গে কিছুই জানানো হয়নি। এপ্রসঙ্গে ইন্ডিয়া ফেয়ার প্রাইস শপ ডিলারস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসু বলেন, “বরাদ্দ কমিয়ে নয়া প্রকল্পে গরিব মানুষকে বঞ্চনা করল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার।এই প্রকল্পে গরিব মানুষ যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হবেন, তেমনই আমরাও ক্ষতির সম্মুখীন হব। তাই আমাদের ক্ষোভের কথা কেন্দ্রের কাছে পৌঁছে দিতেই আমরা প্রতিবাদের পথ বেছে নিয়েছি।”
এদিকে কেন্দ্রের এহেন জালিয়াতির বিরোধিতায় সরব হয়েছে তৃণমূল। এ প্রসঙ্গে তৃণমূল সাংসদ ডাঃ শান্তনু সেন বলেন, “বিজেপি জমানায় সব জিনিসের দাম বাড়ছে। দাম কমছে মানুষের। একের পর এক নির্বাচন কেন্দ্রিক রাজনীতি করে চলেছে মোদি সরকার। উত্তর প্রদেশের নির্বাচনের আগে রান্নার গ্যাসের দাম কমেছে। নির্বাচন শেষেই আবার দাম বেড়েছে। এবার রেশন নিয়ে রাজনীতি। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গরিব মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমৃত্যু তিনি বিনামূল্যে রেশন দিতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আর বিজেপি সরকার মানুষের সঙ্গে জালিয়াতি করে চলেছে। সাম্প্রতিক রেশন নিয়ে এই সিদ্ধান্ত তারই প্রমাণ।”
সন্ধ্যারানী টুডু(ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রমন্ত্রী পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ) বলেন, “রেশনে পুরোনো ব্যবস্থাকে নতুন মোড়কে এনে কার্যত গরীব মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার চক্রান্ত শুরু করেছে বিজেপি। এর আগে উজ্জ্বলা যোজনার নামে উন্নয়নের ‘গ্যাস ‘ খাওয়ানো হয়েছে। আদিবাসী এলাকাগুলিতে একশো দিনের কাজ অন্যতম রোজগার ছিল মানুষের। সেই প্রকল্পের টাকাও আটকে রাখা হয়েছে। এবার রেশন নিয়ে কারসাজি শুরু হল। লক্ষ লক্ষ মানুষকে রেশন থেকে বঞ্চিত করার জন্যই কেন্দ্র লোকদেখানো সমীক্ষা করবে। জঙ্গলমহলের মানুষ জানেন ওদের খেলা গরীবদের বঞ্চিত করার জন্য। দিদি ছাড়া কেউ গরিবদের পাশে দাঁড়ায় না, এটা জঙ্গলমহল জানে।”
রাজ্যের বিদ্যুৎ মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, “আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর ভাবনা, তাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত বিভিন্ন প্রকল্প বাংলার আর্থ-সামাজিক চিত্রটাকেই আমূল বদলে দিয়েছে। এক ব্যতিক্রমী মাত্রা পেয়েছে রাজ্যের আর্থিক প্রগতি। তৃণমূলস্তরে পৌঁছে গিয়েছে তার সুফল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চালু করা রেশন মডেলে তারই স্পষ্ট প্রতিফলন ঘটেছে। অবাক কাণ্ড, মুখে লম্বা-চওড়া বুলি আওড়ে জননেত্রীর ভাবনাকে নকল করে রাজনৈতিক ফয়দা লুটতে চাইছে বিজেপি। কন্যাশ্রী,বিনামূল্যে রেশন- সবেতেই জননেত্রীর প্রকল্পকে এইভাবেই নকল করার অপচেষ্টা ওদের মধ্যে। কিন্তু মানুষ ধরে ফেলেছেন বিজেপির ভাঁওতাবাজি।”
তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, “এটা কেন্দ্রের রেশন জালিয়াতি। প্রথমত এমন ভাব ধরা হচ্ছে যেন তারা বিনামূল্য খাদ্যশস্য দিচ্ছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকল্পকে নকল করে প্রশংসা কুড়ানোর চেষ্টা। দ্বিতীয়ত, যেটা আগে ছিল, যা বন্ধ করে নতুন চালু হচ্ছে তাতে কেন্দ্রের বিপুল টাকা বাঁচানো হচ্ছে। যাতে খাদ্যশস্য কম দিচ্ছে কেন্দ্র এবং সাধারণ মানুষকে প্রতারণা করা হচ্ছে। যেটা আগে তৃণমূল সহ অন্যান্য বিরোধীদের চাপে চালু হয়েছিল। সেটা বন্ধ করে এখন যেটা চালু হচ্ছে সেটা ‘রেশন জালিয়াতি।”