বাজেটের অতিরিক্ত বরাদ্দ নিয়ে আলোচনায় মঙ্গলবার সংসদে কেন্দ্রীয় সরকারকে(Central Govt) তুলোধোনা করলেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল(TMC) সাংসদ মহুয়া মৈত্র(Mahua Moitra)। এদিন সংসদে বিজেপি(BJP) এবং মোদি সরকারের “খারাপ পারফরম্যান্সের” একের পর এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে প্রশ্ন করেন তাহলে আসল “পাপ্পু” কে?
লোকসভায় তৃণমূল সাংসদ দেশের অর্থব্যবস্থা থেকে শুরু করে বিরোধী রাজনৈতিক দলের সাংসদদের বিরুদ্ধে এজেন্সির ব্যবহারের মতো বর্তমানে দেশের প্রতিটি জ্বলন্ত ইস্যুকে তুলে ধরেন। দেশের অর্থব্যবস্থার বেহাল হাল তুলে ধরে তিনি সংসদে বলেন, “প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি এলেই সরকার বলতে শুরু করে, ভারত বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতি সম্পন্ন অর্থনীতির দেশ। সবাই কাজ পেয়েছে, পাকা বাড়ি, পানীয় জল, গ্যাস, ইলেক্ট্রিসিটি দেশের জনগণ সবকিছু পেয়েছে কিন্তু ৮-১০ মাস পরেই প্রকৃত ছবিটা সামনে চলে আসে।” নোট বাতিল থেকে শুরু করে মোদি সরকারের সমস্ত প্রকল্পে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে ধরে, তাদেরকেই পাপ্পু বলে মন্তব্য করলেন মহুয়া মৈত্র। উত্পাদন, শিল্প এবং অর্থনীতির সমস্ত পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি আক্রমণ করেন নরেন্দ্র মোদি সরকারকে।
তিনি বলেন দেশে একটি সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি হয়েছে, কারণ এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের তলোয়ার যাদের প্রচুর সম্পদ রয়েছে তাদের উপর ঝুলছে। তিনি সংসদে অভিযোগ করেন, ‘বিজেপি বিধায়কদের কোটি টাকায় কিনেছে তবুও ৯৫ শতাংশ বিরোধী সদস্যদের ইডি তদন্তের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। অথচ দোষী সাব্যস্ত হওয়ার হার মাত্র ০.৫ শতাংশ।’ নিজের বক্তব্যে বারবার ‘আব পাপ্পু কৌন হ্যায়’? প্রশ্ন তোলেন তিনি।
এদিন বিভিন্ন সাংসদদের প্রশ্নের জবাবে দেওয়া পরিসংখ্যানকে হাতিয়ার করেন মহুয়া মৈত্র। তিনি বলেন, আর্থিক বছরের ৮ মাস অতিক্রান্ত। অথচ ডিসেম্বরে এসে কেন্দ্রীয় সরকার জানাচ্ছে তাদের এখনও বাজেট হিসাবের অতিরিক্ত ৩.২৬ লক্ষ কোটি টাকা প্রয়োজন। এদিন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের বক্তব্যেরও উল্লেখ করেছেন মহুয়া। তাঁর মতে, ‘অর্থমন্ত্রী গতকাল আমাদের সম্পর্কে বলেছেন যে আমরা দেশের শত্রু এবং আমাদের মধ্যে হিংসার অনুভূতি রয়েছে।’ তিনি বলেন, এতদিন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকার কাউকে অক্ষম এবং ব্যর্থ বোঝাতে পাপ্পু শব্দটি ব্যবহার করে এসেছে কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া পরিসংখ্যানই বোঝাবে আসল পাপ্পু কে ?
এরপর পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, ২৬ মাসে সবচেয়ে কম শিল্পোৎপাদন, উৎপাদন ক্ষেত্রে হ্রাস ৫.৬ শতাংশ । মুদ্রার ভাণ্ডার এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে ৭২ বিলিয়ন ডলার কমে গিয়েছে। বিদেশমন্ত্রকের জবাব তুলে ধরে মহুয়া মৈত্র বলেন, ২০২২ সালের প্রথম ১০ মাসে ১ লক্ষ ৮৩ হাজার ৭৪১ জন ভারতীয় নাগরিকত্ব ছেড়েছেন। তিনি বলেন, “ধনী ব্যক্তিরা মোটা টাকা খরচ করে পর্তুগাল, গ্রিসের মতো দেশের নাগরিকত্ব নিতে প্রস্তত। এটাই কি সুস্বাস্থ্য অর্থনৈতিক পরিবেশের লক্ষণ? তাহলে এখন পাপ্পু কে?”
গত বাদল অধিবেশনে, জেডিইউ সাংসদ রাজীবরঞ্জন সিং এর প্রশ্নের জবাব উল্লেখ করে তিনি বলেন, “গত ১৭ বছরে আর্থিক তছরূপ আইনে ৫ হাজার ৪২২টি তদন্ত শুরু করেছে ইডি। যদিও সাজা দেওয়া হয়েছে মাত্র ২৩ জনকে। ফলে সাজাপ্রাপ্তের হার মাত্র ০.৫ শতাংশ।” তাঁর কথায়, ২০১১ সাল থেকে ১ হাজার ৬০০টি তদন্ত, ১ হাজার৮০০টি তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে ইডি। যদিও সাজা হয়েছে ১০ জনের।
মহুয়া বলেন, “ইডির জন্য জমি এবং কার্যালয় কিনতে বাজেটের অতিরিক্ত ২ হাজার ৯০০ কোটি টাকা চেয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। ইডির অভিযান, সাজা, তদন্তের টাকা জোগাচ্ছেন কর দাতারা। সাংসদদের কি এই “না খাউঙ্গা না খানে দুঙ্গা” সরকারকে জিজ্ঞেস করার অধিকার নেই, কেন ইডির মামলায় সাজা প্রাপ্তের হার এত কম?” তিনি জানান, ২০২২এর নভেম্বরে রাজ্য সারের খাতে যে অর্থ চেয়েছিল, তার মাত্র ৩৩ শতাংশ দেওয়া হয়েছে। তিনি নির্মলা সীতারামণের উদ্দেশ্যে বলেন, “আমরা আমাদের জীবন, যৌবন দেশের মানুষের কাজে উৎসর্গ করেছি। সরকারকে প্রশ্ন করা আমাদের ন্যায্য অধিকার। তেমনই ট্রেজারি বেঞ্চের রাজধর্ম হল তা শোনা এবং জবাব দেওয়া।” এছাড়াও মহুয়া মৈত্র জেপি নাড্ডার উদ্দেশ্যে কটাক্ষ করে বলেন, শাসকদলের জাতীয় সভাপতি নিজের রাজ্যেই দলকে জেতাতে পারেনি তাহলে আসল পাপ্পু কে?