হাজরায় বিরোধী দলনেতার সভা শেষের ২৪ ঘণ্টাও পেরোয়নি৷পাল্টা সভা করল শাসকদল৷ মঙ্গলবার হাজরায় সভায় কে ছিলেন না।অভিষেক এবং দলনেত্রী মেঘালয় সফরে থাকায় ছিলেন না ঠিকই তবে, ওই সভায় বক্তা হিসেবে ছিলেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়,সুব্রত বক্সি, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, অরূপ বিশ্বাস, মদন মিত্র, কুণাল ঘোষ,ফিরহাদ হাকিম সহ অন্যান্য নেতা-নেত্রীরা।সভা ঘিরে ছিল জনসমুদ্র।শুধুই কালো মাথার ভিড়।
শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন,যে হিরো হওয়ার জন্য এসেছিলেন সে মা বলতো। এখন মা-কে গালাগাল দেয়। শুভেন্দু এখন মা-কে যা বলছে, কোনও সন্তান এমন কথা বলে না। জন গণ মন অধিনায়িকা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুভেন্দুকে টাকা নিতে দেখা গিয়েছে। ও নিজের পাড়ায় জিততে পারে না। ওপেন চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, ভারতবর্ষের একটি দলও যদি মঞ্চ বেঁধে দাবি করে, তাদের দলে কোনও চোর নেই, তাহলে সেই দলের হয়ে আমি চাকর বৃত্তি করবো।
তোপ দেগে শোভনদেব বলেন, বিজেপি শাসিত রাজ্যে চোর ভর্তি। রাজনৈতিক ভাবে লড়াই করার ক্ষমতা নেই, কুৎসা-অপপ্রচার করছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাঠশালা খুললে, সেখানে নরেন্দ্র মোদিকে ছাত্র হয়ে ভর্তি হলে, তাহলে দেশ চালাতে পারবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী কাজ করেছে, যে কোনও মহিলা বলে দেবেন। বাংলার মহিলাদের বুক চিতিয়ে মাথা উঁচু করে বাঁচতে শিখিয়েছে। নারী ক্ষমতায়ন করেছেন।
সুব্রত বক্সি বলেন, বাংলার মাটিতে দাঁড়িয়ে বহু সংগ্রাম আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে তৃণমূল কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। মঞ্চে দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লড়াই-সংগ্রামের দীর্ঘ ইতিহাসের বৃত্তান্ত বর্ণনা করেন রাজ্য সভাপতি।বলেন, দিল্লির বুক থেকে বিজেপি সরকারকে উৎখাত করতে হবে।
নেত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, এই সভা শো-রুম। গোটা গোডাউন সম্পর্কে কোনও ধারণা নেই। কাল দু’জন এসেছিলেন। একজন লাল্টুস, একজন ফানটুস। অবলাকান্তের দল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক মেঘালয় গিয়েছে। সেখানে তোমাদের সরকার রয়েছে। আগামী বছর আর থাকবে না। শুভেন্দু কি জানতো ১২ ডিসেম্বর লালন শেখের সিবিআই হেফাজতে অস্বাভাবিক মৃত্যু হবে? যদি তাই হয়, তাহলে শুভেন্দু ছাড় পাবে না।
পঞ্চায়েতে আধা সামরিক বাহিনী চাইছে শুভেন্দু, আমি বলি আধা কেন ফুল বাহিনী নিলেও কিছু করতে পারবে না। মানুষ জন-গণ-মন অধিনায়িকা মমতা বন্দ্যোপাধ্যাইকেই চায়। অন্ধকার করে ভোট জিতে বড় বড় কথা। সময় হলে মানুষ জবাব দেবেন। শুভেন্দু আসলে সংবাদমাধ্যমে ভেসে থাকতে বড় বড় কথা বলছে।
অরূপ বিশ্বাসের বক্তব্য, কালকে যারা সভা করেছেন, আজ এসে দেখে যান ১০ গোলে বিজেপি হেরেছে। শুভেন্দুবাবু আপনাকে চ্যালেঞ্জ করছি, শুধু একটি ওয়ার্ড তৃণমূলের মিটিং করবে, আপনার সভার থেকে বড় হবে। যেখানেই বিরোধী দল সেখানেই সিবিআই-ইডি। দিল্লিতে মোদির কারখানার বিশেষ ওয়াশিং মেশিনে ধুয়ে সবাই সাধু হয়েছে। মিথ্যা-কুৎসা-অপপ্রচার করে বেঁচে থাকার চেষ্টা। রাজনৈতিকভাবে ভাবে পেরে উঠছে না, শুধু এজেন্সি দিয়ে ভয় দেখাচ্ছে। আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সন্তান। অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারি আমরা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতদিন আছেন, ততদিন বিজেপির বাংলা দখলের স্বপ্নপূরণ হবে না। এ রাজ্যের বিজেপির নেতারা দিল্লিতে গিয়ে বাংলার মানুষকে ভাতে মারার চেষ্টা করছে। তাদের বাংলা থেকে উৎখাত করতে হবে।
মদন মিত্র তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বলেন,যারা তৃণমূল কংগ্রেস করেন, তাঁদের একটি কাজ বলছি। আজ সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ছবি এসেছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাঁটছেন আর অভিষেক ব্যাগ ধরে রয়েছেন। এই ছবি পোস্ট করে দিন। বাজারের আলু, মুলো, পটল নিয়ে বেশি কথা বলতে চাই না। দলটার নাম তৃণমূল কংগ্রেস। নেত্রীর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বি কেয়ারফুল। আমাদের বেশি চমকাবেন না, আমরা যেখানে দাঁড়াই সেখানে একটা করে চমকাই তলা তৈরি হয়।
১২ ডিসেম্বর বলছে, আমি সিবিআই কর্তাকে জানতে চাইবো, এখন বাংলার একটা পচা বিজেপির নেতা আপনাদের অপারেশন জানতে পারছে। তাই ১২ তারিখ লালন শেখের লাশ বেরোয়। লালন শেখের মৃত্যুর দায়িত্ব কেন সিবিআই নেবে না? প্রকাশ্য জনসভায় আমরা আওয়াজ তুলছি, এটা হত্যা নাকি আত্মহত্যা সেটা সিবিআইকে প্রমাণ করতে হবে। আমি হাইকোর্ট সুপ্রিম কোর্ট বুঝি না, আমি একটাই কোর্ট বুঝি, সেটা মানুষের কোর্ট।
কুণাল ঘোষ বলেন, ৮০ শতাংশ কেন আক্রমণ। শুভেন্দু বড় নেতা বলে নয়। শুভেন্দু, বাবা শিশির, ভাইরা, অধিকারী প্রাইভেট লিমিটেড ৮০% পদ নিয়েছিলে, ৮০% গালাগালও তোমাকে খেতে হবে।দুটি সরকার। কেন্দ্রের সরকার জনবিরোধী। রাজ্যের সরকার জনদরদী। উন্নয়নে পেরে উঠছে না বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেকের নামে মিথ্যা-কুৎসা-অপপ্রচার।
আজ সভায় জনসমুদ্র ছিল।অথচ গতকাল দূর দূরান্ত থেকে লোক এনেও সভা ভরাতে পারেনি বিজেপি। কাল হাজরায় তৃণমূল নয়, ও দিলীপ ঘোষকে গালাগাল করতে এসেছিল। হাজরায় যতবার এসেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি গিয়ে শুধু দাও দাও করেছে। আগে লিস্ট দিক, শুভেন্দু আর ওর পরিবার কতগুলি পদে ছিল, তারপর বড় বড় কথা বলবে।
বাঙালির খাদ্যাভ্যাস, সংস্কৃতি নিয়ে কটাক্ষ করেন বিজেপির বহিরাগত নেতারা।তৃণমূল বড় দল। ভালো কাজ হচ্ছে। দু’একজন ভুল করছে, কিন্তু তার জন্য ৯৯% খারাপ হতে পারে না। আমারও অভিমান আছে। আমিও বলেছি। কিন্তু নিজের মেরুদণ্ড বিক্রি করে বিজেপিতে গিয়ে পাশের বাড়ির কাকুকে বাবা বলে ডাকিনি। যে শুভেন্দু কথায় কথায় বলে সিবিআই কার বাড়ি কোথায় যাবে। এজেন্সি দিয়ে মেরে ভয় দেখাচ্ছে? শুভেন্দু তারিখ বলেছে, ওকে কলার ধরে গ্রেফতার করে জেরা করা উচিত।
সারদায় সুদীপ্ত সেন বয়ান দিয়েছে। কাঁথি পুরসভায় দুর্নীতি করেছে শুভেন্দু।কুণাল বলেন, আদি বিজেপি নেতারা এবার দেখুন, শুভেন্দুকে নিয়ে কেমন লাগছে। দিলীপবাবু কেমন লাগছে? শুভেন্দু আপনাকেই তো গালাগাল দিচ্ছে।আসলে বিজেপির পায়ের তলায় মাটি সরছে। শুভেন্দুর পায়ের তলা থেকে মাটি সরছে। পূর্ব মেদিনীপুরের ভিত আলগা হয়ে গেছে। শুভেন্দুকে ঝাঁটাপেটা করে বাংলার মা-বোনেরা তাড়াবে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক মেঘালয় গিয়েছে, দেখবেন কয়েক মাসের মধ্যে দ্বিতীয় কোনও রাজ্যে তৃণমূলের মুখ্যমন্ত্রী শপথ নেবেন।২০২৪-এ লালকেল্লা থেকে ১৫ অগাস্ট জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন তাঁতের শাড়ি, পায়ে হাওয়াই চপ্পল পড়ে বাংলার মেয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ফিরহাদ হাকিম বলেন,শুভেন্দু অত গুরুত্বপূর্ণ কেউ নয়, আমরা সভা করছি বিজেপি মানুষকে ভুল বুঝিয়ে মিথ্যা বলেছে তার জন্য। বিজেপি আমাদের নকল করছে। গুজরাত নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকল্পের নকল করে প্রচার করছে। তাই বলছি, বাংলা আজকের যেটা ভাবে গোটা দেশ আগামিকাল সেটা ভাবে।
বিজেপি শুভেন্দুর মতো পাল্টি বাজদের জায়গা দেয় না, ব্যবহার করে ফেলে দেয়। গুজরাতে যেমন পাল্টি খাওয়া হার্দিক প্যাটেলকে মন্ত্রিসভায় জায়গা দেয় না। সিবিআই-ইডি দিয়ে আমাদের ভয় দেখানো যাবে না। আমরা ভয় পাই না।
বগটুইতে সিবিআই যেটা করেছে, তার জবাব বিজেপিকে আগামিদিন দিতে হবে। লালন শেখের পরিবার অভিযোগ করেছে, তাকে হত্যা করা হয়েছে। ৫০ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে। দিতে পারেনি বলে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। গ্রামের মানুষ বলছে, বিচার চাই। সিবিআই হত্যা করলে সেটাও হত্যা। সিবিআই-তে অনেক দক্ষ-যোগ্য অফিসার আছেন।কিন্তু তাদের দিয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করছে।আমাদের রাজ্যের পুলিশও অনেক ভাল কাজ করে। অনেক জটিল কেসের সমাধান করেছে।
দলনেত্রীর সঙ্গে মেঘালয় উড়ে গিয়েছে অভিষেক৷ দলীয় সূত্রের খবর, আগামী ১৫ ডিসেম্বর তিনি কলকাতায় ফিরবেন৷ তারই মাঝে সোমবার হাজরার প্রতিবাদ সভা থেকে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় নাম না করে অভিষেককে আক্রমণ করেন বিরোধী দলনেতা৷ সে কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়ে ফিরহাদ বলেন, প্রলাপ বকে কোনও লাভ হবে না।