আবাস যোজনার সমীক্ষায় সমস্যা না হয় আশা-অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের, পুলিশকে জানানোর নির্দেশ মুখ্যসচিবের

0
1

প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় কেন্দ্র বরাদ্দ দেওয়ার পর থেকেই সঠিক মানুষের হাতে যাতে টাকা পৌঁছয়, সে বিষয়ে সতর্ক প্রশাসন। এই বিষয়ে বাড়ি বাড়ি সমীক্ষা করতে যাচ্ছেন আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা। কিন্তু সেখানেও নানা অভিযোগ উঠছে। ইতিমধ্যেই এক আশাকর্মীর অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। এবার আবাস যোজনার উপভোক্তাদের বাড়ি গিয়ে সমীক্ষা (Survey) করতে আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা যাতে কোনও সমস্যায় না পড়েন সেবিষয়ে পুলিশ-প্রশাসনকে সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী (Harikrishna Diwedi)। তিনি জানান, প্রয়োজনে পুলিশি (Police) নিরাপত্তার ঘেরাটোপে কর্মীদের সমীক্ষা করতে পাঠাতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্পের অগ্রগতি খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার বিভিন্ন জেলার জেলাশাসক এবং অতিরিক্ত জেলাশাসকের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যসচিব। সেখানেই তিনি এই নির্দেশ দেন। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, বেশ কিছু আবাস যোজনার প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। তিনি স্পষ্ট জানান, যাঁদের পাকা বাড়ি রয়েছে, আবাস যোজনার বাড়ি তাঁদের জন্য নয়। কেউ অশান্তির চেষ্টা করলে পুলিশকে জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যসচিব।

আবাস যোজনার বাড়ি তৈরির সমীক্ষার কাজে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের নিয়োগ করেছে রাজ্য সরকার। সেই কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন জেলায় তাঁদের হেনস্থার মুখে পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ। সোমবার, বসিরহাটের স্বরূপ নগরের আইসিডিএস কর্মী রেবা বিশ্বাস রায়ের আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনার পর তা নতুন মাত্রা যোগ করে। আবাস প্রকল্পের সমীক্ষা করার কাজে যোগ দেবেন না বলে আন্দোলন শুরু করেছেন আশা কর্মীরা। বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি কলকাতাতেও ছড়িয়ে পড়েছে আন্দোলন।

মঙ্গলবার আশা কর্মীরা ওয়েলিংটন থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল করেন। এই মিছিলের জেরে ধর্মতলা চত্বরে যান চলাচল কার্যত স্তব্ধ হয়ে যায়। এই অবস্থায় মুখ্যসচিবের এই নির্দেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে প্রশাসনিক মহলের অভিমত।

এদিকে বেশ কিছু জেলায় আবাস প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে মুখ্যসচিব এদিনের বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বলেও নবান্ন সূত্রে খবর। মালদহ, মুর্শিদাবাদ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, কোচবিহার, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনা-সহ বেশ কয়েকটি জেলার কাজের অগ্রগতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন মুখ্যসচিব। পাশাপাশি, আবাস যোজনার নিয়ম মেনে তালিকা তৈরি না করার জন্যও কয়েকটি জেলাকে তিনি সতর্ক করে দেন। হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী স্পষ্ট ভাবে জানান,
• পাকা বাড়ি রয়েছে এমন উপভোক্তা কোনওভাবেই আবাস যোজনার বাড়ি পাবেন না। যদি নাম উঠে থাকে দ্রুত তা বাতিল করার নির্দেশ দেন তিনি।
• একইসঙ্গে তিনি নির্দেশ দেন, কোনও প্রভাবশালীর কথা শুনে চলা যাবে না।
• যেখানে ঝামেলা হচ্ছে, সেখানে জেলাশাসকদের যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
• কোথাও কোনও আইনশৃঙ্খলার অবনতির খবর পেলে সঙ্গে সঙ্গে রাজ্য সরকারকে তা জানাতে হবে।
• জেলা পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করার ওপরেও জোর দেওয়া হয়েছে।

মুখ্যসচিব স্পষ্ট জানিয়ে দেন, প্রকল্প সংক্রান্ত যা নিয়ম কানুন রয়েছে, তা মানতেই হবে। যে উপভোক্তারা বেআইনিভাবে বাড়ি পেয়েছেন, তাঁরা কোনও রাজনৈতিক দলের কি না বা কোনও প্রভাব খাটাচ্ছেন কি না তাও নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। কোথাও কোনও রকম প্রভাব খাটানোর চেষ্টা হলে পুলিশ সুপার যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেবেন বলে জানান মুখ্যসচিব। তিনি বলেন, সঠিক উপভোক্তাদের তালিকা তৈরি করতে হবে। প্রয়োজনে প্রতিটি ব্লক অফিসারের সঙ্গে বৈঠক করতে হবে। কোথায় কোথায় ত্রুটি হয়ে রয়েছে তা খুঁজে বের করার কথাও বলেন তিনি।