নিজের গড়েই শুভেন্দু অধিকারীকে কোণঠাসা করা তৃণমূলের লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্যে এবার দলীয় নেতা কুণাল ঘোষকে বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছে দল৷ পঞ্চায়েত নির্বাচন এবং হলদিয়া পুরসভার নির্বাচনকে সামনে রেখে মঙ্গলবার থেকেই পূর্ব মেদিনীপুরের দু’টি সাংগঠনিক জেলার নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় রেখে চলার দায়িত্ব নিয়ে বৈঠক করলেন তৃণমূল রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ ৷ সৌমেন মহাপাত্র , অখিল গিরি, অন্যান্য যুব নেতৃত্ব থেকে শুরু করে জেলা নেতৃত্ব এই বৈঠকে যোগদান করেন।
পূর্ব মেদিনীপুরে তৃণমূলের দু’টি সাংগঠনিক জেলা রয়েছে৷ সেগুলি হল কাঁথি এবং তমলুক৷ ওই দুই সাংগঠনিক জেলার সভাপতিদের পাশাপাশি পঞ্চায়েত নির্বাচন এবং হলদিয়া পুরভোটে বিশেষ দায়িত্ব সামলাবেন কুণাল৷ দুই সাংগঠনিক জেলা এবং ব্লক কমিটির নেতাদের মধ্যে সমন্বয় রেখে আজই কাজ শুরু করলেন তিনি৷
পঞ্চায়েত নির্বাচনের পাশাপাশি হলদিয়াতেও পুরভোট আসন্ন৷ ইতিমধ্যেই হলদিয়া পুরসভার বোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়েছে৷ হলদিয়া পুরভোটে প্রার্থী পদ পাওয়ার মতো বিষয়গুলিকে নিয়ে দলের মধ্যে অন্তর্কলহ বা দ্বন্দ্ব যাতে সামনে না আসে তা নিশ্চিত করতেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কুণালকে।
তিনি কিন্তু স্পষ্ট বলছেন , এটা কোনও নতুন দায়িত্ব নয়। অন্যান্য জেলার মতো এই জেলাতেও নানান কর্মসূচি আছে। তিনি বলেন, আমাদের দলে পর্যবেক্ষক বলে কোনও পদ এই মুহূর্তে নেই। এখানকার জেলা নেতৃত্ব যথেষ্ট ভাল কাজ করছেন । আমাকে দলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সংগঠনের জন্য একটু বেশি সময় দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন, সেই অনুযায়ী আমার জেলায় আসা।
এমনকি, দলের নির্দেশ অনুযায়ী এবার থেকে বেশ কিছুদিন তিনি এই পূর্ব মেদনীপুরে থাকবেন। এদিন হলদিয়ায় রীতিমতো গৃহপ্রবেশের অনুষ্ঠান করেন এবং তার এই থাকা নিয়ে যেভাবে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী মন্তব্য করেছেন, তাকে কটাক্ষ করে কুণালের সাফ কথা , আমার এখানে আশা নিয়ে যেভাবে শুভেন্দু থেকে শুরু করে বিজেপির অন্যান্য নেতারা সকাল থেকে গালাগাল করছেন তাতে একটা জিনিস স্পষ্ট পুরো বিষয়টা ঠিক পথে এগোচ্ছে। এই প্রসঙ্গে শুভেন্দু অধিকারী গড় সংক্রান্ত প্রশ্নে মঙ্গলবার কাঁথিতে বসে কুণাল ঘোষ বলেন, ‘আমি কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে আসিনি। ও আমার গড়পাড়ে ফ্ল্যাট নিয়ে থাকলে। আমার এখানে থাকায় কী দোষ? জানি তো জানি কোন ওষুধে ওর গা চিড়বিড় করে। আমি এখানে আসলে ওর গায়ে জ্বালা ধরে কেন? আমরা সবাই মিলে টক্কর দিচ্ছি।”
কুণাল অভিযোগ করেন, নন্দীগ্রামে কারচুপি করে জিতেছে শুভেন্দু । তাই ওরা বারবার কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের কথা বলে। মানুষ বিশ্বাসঘাতকদের বিশ্বাস করে না।আসলে নন্দীগ্রামের মানুষ শুভেন্দুকে বিশ্বাস করে না। আদি বিজেপির নেতারা বাধ্য হচ্ছেন শুভেন্দুর মতো গদ্দার , চোর, ধান্দাবাজের জন্য স্লোগান দিতে। শুভেন্দুর মতো ডাকাতের জন্য আদি বিজেপিকে জিন্দাবাদ বলতে হয়। তাই আদি বিজেপি কর্মীরা বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। আদি বিজেপি নেতারা, অনেক যুবনেতা তো বলে দিয়েছেন যে তারা বিজেপির এই নীতি সমর্থন করেন না।
তাই আদি বিজেপি কর্মীদের বলবো আপনারা যে যে বিষয় নিয়ে লড়াই করছেন সেটা তো অধিকারী প্রাইভেট লিমিটেডের বিরুদ্ধে, শুভেন্দুর বিরুদ্ধে। শুভেন্দু যেভাবে বিজেপিতে গিয়ে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন সেটা আদি বিজেপিরা কেন মেনে নেবেন এই প্রশ্নও তোলেন কুণাল। নন্দীগ্রাম শুভেন্দু অধিকারীকে প্রত্যাখ্যান করেছে। প্রতি পদক্ষেপে শুভেন্দু বুঝতে পারবেন পূর্ব মেদিনীপুর, কাঁথি, নন্দীগ্রামের মানুষ অধিকারী প্রাইভেট লিমিটেডের বিশ্বাসঘাতকতাকে মেনে নেয়নি।
তিনি অভিযোগ করেন , বাংলা থেকে কর নিচ্ছে কেন্দ্র আর টাকা দেওয়ার সময় বলছে কেন্দ্রের টাকা। এটা কেন হবে? এমনকি টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে । যদি বাংলাকে টাকা দেবেই না তাহলে যারা বাংলার কর দেন সেই করদাতাদের করমুক্ত ঘোষণা করা হোক ,এই দাবিও তোলেন।
কু- মন্তব্য নিয়ে কুণালের বক্তব্য, যে অধিকারী পরিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দয়ায় রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠা পেয়েছে তারা যখন তৃণমূলের পিঠে ছুরি মেরে বিজেপিতে গিয়ে আশ্রয় নেয়, তার জন্য দুএকটা কথা বলতে একটু দ্বিধাবোধ করি না। বরং শুভেন্দু যে ভাষায় কথা বলে সেই ভাষায় কথা বলার অভ্যাস আমার নেই।
কুণাল মনে করিয়ে দেন, শুভেন্দু ওর বাবাকে হিংসা করে। বাবার কাছ থেকে ক্ষমতা কারতে চায়, বাবার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান বয়কট করে। তার মনুষ্য জ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন আছে। শুভেন্দু অধিকারী কিসের নেতা ? যে নিজের এলাকায় বাড়ির বুথে জিততে পারে না, তাকে অন্তত নেতা বলা যায় না।
কুণালের কটাক্ষ, বিজেপি পরিষদীয় দল রান্নার গ্যাস ডিজেল পেট্রোলের দাম বৃদ্ধি , সারের দাম বৃদ্ধি, ওষুধের দাম বৃদ্ধি, এসব বিষয় নিয়ে কোনও বৈঠক করেন না।। তারা বৈঠক করছে সিএএ, এন আর সি নিয়ে। কীসের সিএএ?’ আসলে আসল ইসুগুলো থেকে চোখ ঘোরাতে এসব নাটক।
রাজ্য পুলিশ দিয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে বিজেপির দাবিদাওয়া প্রসঙ্গে এদিন কুণাল ঘোষ বলেন, “যদি এই রাজ্যে রাজ্য পুলিশ দিয়ে ভোট না হয়, তাহলে সবকটা রাজ্যে তা করতে হবে। বাংলায় এক আর ত্রিপুরায় অন্য নিয়ম এটা হয় না। ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটে গো-হারা হেরেছেন। আগে উনি সায়ন্তনের চিঠি পড়ুন। আগে ঘর সামলা, পরে ভাববি বাংলা।”
মোদি ২০১৬ সালে এরাজ্যে নির্মীয়মাণ সেতু ভাঙা নিয়ে যা বলেছিলেন। ঈশ্বর আপনাকে অভিশাপ দিল। বাংলায় যা যা বলেছিলেন তা এবার গুজরাটের মাটিতে বলুন?