‘সকলকে নিয়ে চলতে হবে’, সায়ন্তনের দাবিকে সমর্থন দিলীপের, মুখে কুলুপ সুকান্তর

0
1

দলবদলুদের সিন্ডিকেট বন্ধ করে পুরনো নেতৃত্বদের সামনে সারিতে না আনলে বাংলায় অস্তিত্ব হারাবে বিজেপি। সম্প্রতি এমনই দাবি জানিয়ে নরেন্দ্র মোদি, জেপি নাড্ডাদের চিঠি লিখেছেন বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসু। একদা সহযোদ্ধা সায়ন্তনের এই চিঠিতে পূর্ণ সমর্থন জানাতে দেখা গেল রাজ্যের প্রাক্তন বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষকে। স্পষ্ট ভাষায় তিনি জানিয়ে দিলেন সকলকে নিয়ে চলতে হবে তাহলেই দলের অগ্রগতি সম্ভব। যদিও সায়ন্তনের এই অভিযোগ প্রসঙ্গে একটি শব্দও খরচ করলেন না বর্তমান সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।

২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় বড় সাফল্য পেয়েছিল বিজেপি। দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বে বাংলা থেকে এসেছিল ১৮টি আসন। যদিও তারপর ধীরে ধীরে জমি হারাতে শুরু করে রাজ্য গেরুয়া শিবির। দল বদলুদের ভিড় বাড়তে থাকে সেখানে। পেছনের সারিতে পড়ে যান পুরনো যোদ্ধারা। পুরনো নেতৃত্বদের ফিরিয়ে আনার দাবিতে বারবার দলের অন্তরে ক্ষোভ ফেটে পড়েছে। এবার কেন্দ্রকে সান্তনের চিঠির পর পুরনো সহযোদ্ধার পাশে দাঁড়ালেন দিলীপ। তিনি বলেন, সকলকে সঙ্গে নিয়ে লড়াই না করলে সাফল্য আসবে না। তাই সকলকে একসাথে চলতে হবে। দলে গুরুত্ব না পাওয়ায় পুরনো নেতৃত্বদের মধ্যে যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে তা অস্বীকার করার জায়গা নেই। অবিলম্বে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

দিলীপ ঘোষের পর বর্তমান রাজ্য সভাপতি হয়েছেন সুকান্ত মজুমদার। তার নেতৃত্বে আদি নেতাদের পিছনে সারিতে চলে যাওয়ার ঘটনা যেমন বেড়েছে ঠিক তেমনি বেড়েছে দল বদলে বিজেপিতে আসা নেতৃত্বের দাপট। বর্তমানে গেরুয়া শিবিরে দলবদ্ধদের সিন্ডিকেট চলছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে তা প্রকাশ্যে না বললেও স্বীকার করে নিচ্ছেন দলের একনিষ্ঠ কর্মী সমর্থকরা। এই পরিস্থিতিতে সায়ন্তনের চিঠির পর কোনও মন্তব্য করতে চাননি রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।

উল্লেখ্য, মোদি নাড্ডাদের উদ্দেশ্যে লেখা চিঠিতে সায়ন্তন যে অভিযোগ করেছেন তা হল

” নমস্কার নাড্ডাজি, শুভ দীপাবলি। আমার রাজ্যে বিজেপির পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এই চিঠি লিখছি। এই চিঠি অত্যন্ত দ্বিধা ও দুঃখের সঙ্গে লিখছি। ১৯৮০ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ কার্যকর্তার মাধ্যমে যে দল গড়ে উঠেছিল তা এখন ৫-৬ জন নব্যদের সিন্ডিকেটে পরিণত হয়েছে। এই নব্যরা ২০১৯ অথবা ২০-তে দলে এসেছে।

এই নেতারা ২০১৯ থেকে ২১-র মধ্যে বিজেপিতে যোগ দিয়েছে। ২০২১-এ এই নব্যদের নিরাপদ আসন দেওয়া হয়েছে, এক্ষেত্রে দলের পুরনো কর্মীদের দাবিকে অবহেলা করা হয়েছে। ফলস্বরূপ আমরা বেশিরভাগ নিশ্চিত আসনে হেরেছি। এগুলির মধ্যে আছে দুর্গাপুর পূর্ব, বিধাননগর, পানিহাটি, বারাকপুর, সিঙ্গুর, সিউড়ি, জলপাইগুড়ি, সপ্তগ্রাম, কালনা এবং ভবানীপুর। আমার আশা এইসব ভুল সত্ত্বেও আমরা নিজেদের সংশোধন করতে পারব। দুর্ভাগ্যবশত আগামী পঞ্চায়েত ভোটে হয়ত আমরা রাজ্যে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ব।

তৃণমূল বিপুলভাবে তাদের জমি হারাচ্ছে। তাদের কার্যকলাপ ও দুর্নীতি কারণে সাধারণ মানুষের মোহভঙ্গ হয়েছে। সিপিআইএম এই শাসক বিরোধিতাকে কাজে লাগাচ্ছে। সম্প্রতি তারা একটাও ট্রেন বা গাড়ি ভাড়া না করেই কলকাতায় ৩৫ হাজার যুবকর্মীদের নিয়ে জমায়েত করেছে।

দল সামাজিক মাধ্যমে ভীষণভাবে সক্রিয়। ফেসবুক ইউটিউব-এর মাধ্যমে একটা ভ্রান্ত ধারণা কয়েকজন নেতা ছড়িয়ে চলেছেন। এইসব ফেসবুক প্রোফাইল ও ইউটিউব চ্যানেলকে নিজেদের কব্জায় নিয়ে তাঁরা নিজেদের ঢাক পেটাচ্ছেন। এই ধরনের কাজ আমাদের স্বার্থকে বিঘ্নিত করছে। এই ধরনের কাজ এভাবে চলতে থাকলে আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে আবার লড়াইটা টিএমসি এবং সিপিআইএমের মধ্যেই হবে।

বর্তমানে এই নব্যরা বেশিরভাগ জেলা কমিটির সভাপতি হয়েছেন এবং তাদের লোকেরাই সিংহভাগ কমিটিতে রয়েছেন। আমি নব্যদের বিরোধী নই কিন্তু তাদের কোনও দায়িত্ব দেওয়ার আগে তাদেরও কিছু সময় দিতে হবে। বিরোধী দলনেতা এবং দলের কয়েকজন সাংসদ এমন মন্তব্য তৃণমূল নেতাদের সম্পর্কে করছেন যাতে সাধারণ মানুষের মনে হচ্ছে এটা দুই তৃণমূলের মধ্যে ঝগড়া। আমার স্বনির্বন্ধ অনুরোধ, এইসব নেতাদের দলের আদর্শগত দিক সামনে রেখে ইস্যু তৈরি করতে বলা হোক।

শুধু আমাদের মূল জাতীয় ইস্যুগুলোই এখন বিজেপিকে সমর্থন দিতে পারে। এই ধারণা আবার তৈরি হয়েছে যে, ইডি-সিবিআই থেকে বাঁচতেই অনেক দলবদলু বিজেপিতে এসে জুটেছে। এই ধারণাও তৈরি হয়েছে, যে রাজ্যে বিজেপি তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। এটা দলবদলু তৃণমূল নেতাদের সংগঠনে পরিণত হয়েছে। আমরা আবার একমাত্র বিকল্প হয়ে উঠতে পারি যদি ২০১৯ এর সাংগঠনিক কৌশল ফিরিয়ে আনি।

আশা করি আপনি আপনার সুচিন্তিত ভাবনা দিয়ে সঠিক পদক্ষেপ করবেন।”