সঞ্জীব গোয়েঙ্কা স্বাগতই, শুধু ৩১-এর আগে সরুক এটিকে

0
3

অভিজিৎ ঘোষ: শতাব্দী প্রাচীন মোহনবাগান ক্লাবের সঙ্গে এটিকে নাম থাকা নিয়ে বিতর্ক ক্রমশ বাড়ছে। মোহনবাগান নামের সঙ্গে বাংলার মানুষের আবেগ, অনুভূতি, ভালবাসা জড়িয়ে রয়েছে। শুধু বাংলার আবেগ বলি কেন, আবেগ জড়িয়ে বাংলার বাইরে অন্য রাজ্যে কিংবা বিদেশে থাকা অসংখ্য বাঙালির। কিন্তু ক্লাব কর্তাদের একাংশ লগ্নিকারীদের কাছে সদস্য সমর্থকদের ভিলেন সাজাতে মরিয়া। অন্দরের খবর রাখেন এমন বাগানপ্রেমীদের অনেকেই এই অপচেষ্টা বুঝতে পারছেন। তাই ক্ষোভ ক্রমশ ধূমায়িত হচ্ছে।

প্রথমেই স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, সঞ্জীব গোয়েঙ্কা মোহনবাগানে স্বাগত। শুধু স্বাগত বললে ভুল বলা হবে, এই মুহূর্তে টোটাল মার্কেটিংয়ের যুগে, প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার লড়াইয়ে গোয়েঙ্কাগোষ্ঠী এগিয়ে এসে হাতে হাত ধরায় ক্লাব সমর্থকরা খুশি, কৃতজ্ঞ। রমাপ্রসাদ গোয়েঙ্কা, অর্থাৎ সঞ্জীব গোয়েঙ্কার পিতৃদেব শুধু বাঙালি বললে ভুল হবে, ছিলেন আগমার্কা মোহনবাগানী। মোহনবাগান তাঁর কাছে ছিল প্যাশন আর তাঁর সমস্ত ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড ছিল এই বাংলাকে ঘিরে। শ্রদ্ধেয় সঞ্জীব গোয়েঙ্কা সেই পথ অনুসরণ করে মোহনবাগানপ্রেমী, সদস্য। অনেক ছোটবেলা থেকে ক্লাবে যাতায়াত। বাংলাকে ঘিরেই তাঁর ব্যবসার কলেবর বৃদ্ধি। আর এখন তো সেই ক্লাবের লগ্নিকারী। বাগান সমর্থকরা জানেন, এই কর্পোরেট আবহাওয়ায় টিকে থাকতে গেলে কর্পোরেট গোষ্ঠীর হাত ধরতেই হবে। এবং বাংলায় সঞ্জীব গোয়েঙ্কার চেয়ে আর ভাল ব্র‍্যান্ড কী হতে পারে! কিন্তু সমর্থকদের দাবি একটাই। মোহনবাগানের নামের সঙ্গে এটিকে নামটি সরিয়ে দেওয়া হোক। মোহনবাগানের আবেগের সঙ্গে এটিকে নামটি যায় না।

এখানেই আসছে নাম সরানোর পক্ষে যুক্তি। সমর্থকদের বক্তব্য, এটিকে নামটি একটি ফুটবল ক্লাবের নাম। এই ক্লাবের সঙ্গে কলকাতার ময়দানের ক্লাবগুলির রেষারেষিও ছিল। তাদের নামের সঙ্গে মোহনবাগানের নাম জড়িয়ে যাওয়ার অর্থই হল মোহনবাগানের অস্তিত্ব খাটো হয়ে যাওয়া। এটা কিছুতেই মানা যায় না। মোহনবাগান নামে যাদের হৃদ-স্পন্দিত হয়, তারা কিছুতেই এটা মানতে চাইছেন না।

সমর্থকরা যুক্তির বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলছেন, আগেও লগ্নিকারীরা মোহনবাগানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। ছিল তো একসময়ে ম্যাকডোয়েলস মোহনবাগান। তখন তো আপত্তি হয়নি। হয়নি কারণ, ওই সংস্থার সঙ্গে ফুটবলের কোনও যোগসূত্র ছিল না। জানা ছিল চুক্তি শেষে নামও খসে পড়বে। কিন্তু এখানে তেমনটা নয়।

আর এই জায়গা থেকেই পালটা প্রশ্ন উঠছে তাহলে সমাধানের নামগুলি কী হতে পারে? সমর্থকরাই জবাবে পরিস্কার ভাষায় জানাচ্ছেন, সঞ্জীববাবুর যে কোনও সংস্থার নাম বাগানের সঙ্গে জুড়তে পারে। উদাহরণ দিয়ে তাঁরা বলছেন, কেন ‘সিইএসসি মোহনবাগান’ হতে পারে। হতে পারে ‘আরপিজি মোহনবাগান’। গোয়েঙ্কা ইন্ডাস্ট্রির যে কোনও সংস্থার নাম এক্ষেত্রে স্বাগত। মোহনবাগানের আবেগ এবং যুক্তিটা শ্রদ্ধেয় সঞ্জীববাবু বুঝতে পারছেন আশা করি।

এই জায়গায় দাঁড়িয়ে ক্লাব কর্তাদের একাংশ ডজ মেরে সদস্য সমর্থকদের ভিলেন বানানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। তাঁরা সঞ্জীববাবুকে বোঝাচ্ছেন, ওরা আসলে আপনার বিরোধী। আপনি মোহনবাগান চালান এটা ওরা চাইছে না। এই বক্তব্য সর্বৈব মিথ্যাচার এবং ক্লাবের ওই একাংশ কর্তাদের এটা অপদার্থতার যুক্তি। ক্লাব সমর্থকদের একজনও সঞ্জীব গোয়েঙ্কার বিরোধী নন। তাঁরা শুধু তাঁকে নয়, গোয়েঙ্কা গোষ্ঠীকে শ্রদ্ধার আসনে রেখেছেন। তাঁরা শুধু চান মোহনবাগানের থেকে এটিকে নামের বিয়োগ। কারণ বাংলায় মোহনবাগানের যে ঐতিহ্য, সেই নামের সঙ্গে এটিকে যায় না।

সমর্থকদের আবেগে নিমপাতা বাঁটা ফেলে দিতে প্রেস বিবৃতিতে ‘মার্জার’ শব্দটি ব্যবহার করছেন সেই একাংশের কর্তারা। তাতে পরিস্থিতি আরও ঘোরাল হচ্ছে। আর সেই সুযোগে ক্লাবের সেই কর্তারা গোয়েঙ্কা সাহেবকে গোয়েবেলসিয় কায়দায় ভুল বুঝিয়ে চলেছেন। উদ্দেশ্য সমর্থদের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বাড়িয়ে দেওয়া। অভিমানে তারা যদি ধীরে ধীরে সরতে থাকেন, মুখ ঘুরিয়ে নিতে থাকেন, তাহলে লাভটা কাদের? নিশ্চিত বুঝতে পারছেন শ্রদ্ধেয় সঞ্জীব গোয়েঙ্কা।

পরিশেষে বলি, শ্রদ্ধেয় সঞ্জীব গোয়েঙ্কা, আপনি মোহনবাগানে স্বাগত। সমর্থকরা কৃতজ্ঞ এমন আদ্যন্ত মোহনবাগানপ্রেমী লগ্নিকারী পেয়ে। আগামী ৩১ অক্টোবর মোহনবাগানের ইসি বৈঠক। মোহনবাগান যাদের নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে, তাদের হয়ে অনুরোধ রইল ক্লাব কর্তাদের কাছে, সেদিনই সরকারিভাবে সরিয়ে নেওয়া হোক মোহনবাগান থেকে এটিকে নামটি।

আবেগে বাগান, অনুভবে বাগান, চিন্তায় বাগান, ভালবাসায় মোহনবাগান।