
রাফায়েল নাদাল কাঁদছেন রজার ফেডেরারের জন্য। সে কি! ওঁরা দুজনে তো পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী। চিরদিন একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন ম্যাচ জেতার জন্য। ম্যাচ হেরে একজন কেঁদেছেন আর অন্য জন হেসেছেন গ্র্যান্ড স্ল্যাম মঞ্চে। তাহলে একজনের জন্য আরেকজনের কান্না কেন?
আসলে লন্ডনের ওটু কোর্টে ১৯২২-এর সেপ্টেম্বরের বিশেষ এক শুক্রবারের রাতে টেনিসের বর্তমান দুই রাজা যে একসঙ্গে কাঁদলেন তা-ই নয়, কাঁদলো গোটা স্টেডিয়াম, কাঁদলেন সারা বিশ্বের সমস্ত ক্রীড়াপ্রেমীরা। পবিত্র কান্নার এই নির্মল ছবি ও ভিডিও দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়লো গণমাধ্যমে। ফেডেরারের বিদায়ী ম্যাচের এই গরিমাময় বিষন্ন ছবি অমর হয়ে রইলো। মাঠে ছিলেন কিংবদন্তি টেনিস শিল্পী বিয়র্ন বর্গ। ছিলেন যাঁর নামে ট্রফি ( লেভার কাপ ) তিনি স্বয়ং। রড লেভার। লেভার লিখলেন, ‘ সবাইকেই একদিন চলে যেতে হয়। কিন্তু যত বড়ো খেলোয়াড় ততই যেন কঠিন হয়ে দাঁড়ায় বিদায় জানানো। রজার, তোমার সঙ্গে হেসেছি, কেঁদেছি, উৎসব করেছি। ভবিষ্যতেও করবো। বন্ধু হওয়ার জন্য ধন্যবাদ। ‘
আর, অশ্রুসিক্ত নাদাল কী বললেন?
‘ রজার চলে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে আমারই একটা প্রধান অংশ চলে যাচ্ছে। আমি খুব খুশি যে এভাবে বন্ধু হিসেবে রজারের কেরিয়ার শেষ করার সাক্ষী থাকতে পারলাম। ‘
নাদালের দিকে তাকিয়ে রজার বললেন, ‘ আমি এই দৃশ্যটাই সবচেয়ে বেশি মনে রাখবো। যে আবেগ আজ তোমাদের মুখে দেখলাম। ‘
জীবনের শেষ ম্যাচ খেলে ফেললেন রজার। কাঁদলো টেনিস, কাঁদলো গ্যালারি, কাঁদলেন ভক্তেরা। মাঠে ছিলেন জিম ক্যুরিয়ার, জন ম্যাকেনরো এবং ক্রীড়া ও সংস্কৃতি জগতের বহু বরেণ্য ব্যক্তিত্ব। ক্রিকেটার বিরাট কোহলি আবেগবিহ্বল হয়ে লিখলেন, ‘ কে ভেবেছিল প্রতিপক্ষরা এভাবে একে অন্যের জন্য অনুভব করতে পারে! এ জন্যই তো খেলা এত সুন্দর। দুজনের প্রতি শুধুই সম্মান আর শ্রদ্ধা। ‘
পেশাদারিত্ব একপাশে সরিয়ে রেখে কান্নাহাসির দোল দোলানো নরম মানুষটি বেরিয়ে এসেছেন অশ্রু ঝলোমলো। শুধু খেলোয়াড় কেন, একজন মানুষ আরেকজনের জন্য কাঁদছেন সর্বসমক্ষে, এর চেয়ে সুন্দর দৃশ্য আর কিই বা হতে পারে!
কে বলে বাজার সত্য, বাকি সব মিথ্যা?
রজার ফেডেরারের বিদায়ী ম্যাচে রাফায়েল নাদালের চোখের জল পৃথিবীর সমস্ত কৃত্রিমতাকে হেলায় উড়িয়ে দিয়ে আরেকবার সত্য ও সুন্দরের জয় ঘোষণা করলো। ইটকাঠের এই কর্কশ দুনিয়ায় নাদালের ভেজা চোখ নতুন করে বেঁচে ওঠার ভরসা জোগায়।
ফেডেরার তাঁর কেরিয়ারে মোট আটটি উইম্বলডন শিরোপা এবং ছয়টি অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতেছেন। জিতেছেন একটি ফ্রেঞ্চ ওপেন। দীর্ঘ ২২ বছরের তারায় তারায় ঝলমলে কেরিয়ারে অবশেষে ইতি। টেনিস ইতিহাসের অন্যতম স্বর্ণোজ্জ্বল অধ্যায়ের সমাপ্তি।
২০ বারের গ্র্যান্ডস্লাম জয়ী এই সুইস তারকা টেনিসের অন্যতম ‘ ঈশ্বর ‘ হিসেবে ইতিহাসে থেকে যাবেন।
সচিন তেন্ডুলকার কী বললেন?
‘ অসাধারণ কেরিয়ার রজার।
আমরা সবাই তোমার ঘরানার টেনিসের প্রেমে মজেছিলাম, ক্রমশ তা একটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল এবং অভ্যাসের অবসর নেই। তারা আমাদের জীবনের অংশ হয়ে গেছে। দারুণ সব স্মৃতির জন্য তোমায় অনেক ধন্যবাদ। ‘
এবার রজার স্বয়ং কী বললেন শোনা যাক।
‘ আপনারা সকলেই জানেন গত তিন বছর ধরে কী চ্যালেঞ্জের ( চোট ও সার্জারি )
মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি আমি, সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য অত্যন্ত পরিশ্রম করতে হয়েছে আমাকে। কিন্তু আমার শারীরিক ক্ষমতা আমাকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া শুরু করেছিল। এখন আমার বয়স ৪১ বছর। গত ২৪ বছরে ১৫০০-র বেশি ম্যাচ খেলেছি। এবার প্রতিযোগিতামূলক টেনিসকে বিদায় জানাতে হচ্ছে। সকলে ভালো থাকুন। ‘
আরও পড়ুন- হিজাব দহন,উৎপল সিনহার কলম