খায়রুল আলম, ঢাকা : আন্ত:দেশীয় তিস্তা নদীর ৪১৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বাংলাদেশে রয়েছে শুধু ১২১ কিলোমিটার। যদিও এখানেই বসবাস করছে নদী অববাহিকার ৭১ শতাংশ বাসিন্দা। নদীটির উজানে সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গে বাঁধ দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে একের পর এক জলবিদ্যুৎ প্রকল্প।
এতে নদীর জলপ্রবাহও এখন দিনে দিনে শীর্ণ হয়ে আসছে। পানিপ্রবাহ কমতে থাকায় বাংলাদেশ অংশের বাসিন্দারাইএখন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
উজানে দেয়া বাঁধগুলোর কারণে শুষ্ক মৌসুমে মারাত্মক খরা মোকাবেলা করতে হচ্ছে তাদের। আবার বর্ষা মৌসুমে বাঁধগুলো খুলে দেয়ার কারণে মারাত্মক বন্যারও শিকার হচ্ছে তারা।বর্তমানে ভারতে তিস্তার ওপর বিদ্যমান ও নির্মাণাধীন জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের সংখ্যা ২০। প্রস্তাব ও পরিকল্পনা রয়েছে এর চেয়েও বেশিসংখ্যক প্রকল্প বাস্তবায়নের। হাতেগোনা কয়েকটি বাদ দিয়ে এসব জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের অধিকাংশেই অবস্থান নদীটির সিকিম অংশে। এনভায়রনমেন্টাল জাস্টিস এটলাসের তথ্য অনুযায়ী,তিস্তার শুধু সিকিম অংশেই ২৮টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে ভারত সরকারের। প্রকল্পগুলোর জন্য বাঁধ নির্মাণ করতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশের আগেই শীর্ণ হয়ে যাচ্ছে তিস্তা নদী। আবার সেখানেও আরো কয়েকটি বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে ভারত সরকারের।
বাংলাদেশের অধিকারে রয়েছে তিস্তা অববাহিকার মাত্র ১৭ শতাংশ এলাকা, যার পুরোটাই রংপুর বিভাগে অবস্থিত। যদিও অববাহিকার মোট বাসিন্দার ৭১ শতাংশেরই বসবাস এখানে। নদী ও পানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উজানে ভারত অংশে বিশেষ করে সিকিমে নদী অববাহিকার বাসিন্দা অনেক কম। যদিও এ কম মানুষ অধ্যুষিত এলাকাগুলোতেই এখন নদীর প্রবাহ রুদ্ধ করে একের পর এক অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে অববাহিকার উজান ও ভাটির বাসিন্দাদের মধ্যে জীবনমানের দিক থেকে বড় ধরনের বৈষম্য তৈরি হয়েছে।
বৃষ্টি ও পাহাড়ি বরফ গলা জলনির্ভর নদী তিস্তায় পানিপ্রবাহ সারা বছর সমান থাকে না।নদীটির মোট পানিপ্রবাহের ৯০ শতাংশই হয় জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চার মাসে।বাকি ১০ শতাংশ প্রবাহিত হয় বছরের অন্য আট মাসে। জলপ্রবাহ
কমে গিয়ে এ সময়ে শীর্ণ হয়ে ওঠে তিস্তা। এমনকি খরা
মৌসুমে বাংলাদেশ অংশে পানির গড় প্রবাহ সেকেন্ডে ১৪ ঘনমিটারে নেমে আসার নজিরও রয়েছে। সিকিমে একের পর এক বাঁধ দিয়ে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ নিয়ে আপত্তি রয়েছে খোদ ভারতেই। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও এ নিয়ে বেশ কয়েকবার উষ্মা প্রকাশ করেছেন। এমনকি সিকিমেও এসব জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে স্থানীয় লেপচা বাসিন্দারা।
রংপুর বিভাগের তিস্তা-তীরবর্তী বাসিন্দাদের জীবন-জীবিকাও এখন হুমকিতে। শুষ্ক মৌসুমে পানিপ্রবাহ না থাকায় দীর্ঘায়িত খরায় মারাত্মক বিপর্যয়ের শিকার হচ্ছে কৃষিনির্ভর এলাকাটির বাসিন্দারা। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মত্স্য আহরণ কার্যক্রমও। আবার বর্ষা মৌসুমে নদীর ভারতীয় অংশে অবস্থিত বাঁধগুলোর ফটক খুলে দিয়ে পানির অতিরিক্ত প্রবাহ ছেড়ে দেয়া হয় ভাটির দিকে। এতে প্রতি বছরই মারাত্মক বন্যায় প্লাবিত হচ্ছে দেশের তিস্তা অববাহিকা অঞ্চলটি। বিষয়টি এখন দেশের দরিদ্রতম বিভাগ রংপুরের বাসিন্দাদের জীবনমান উন্নয়নের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দুই দেশের ৫৪টি আন্তঃসীমান্ত নদ-নদীর মধ্যে তিস্তা চতুর্থ
বৃহত্তম। ভারতে সিকিমের সো লামো হ্রদে উৎপত্তি হয়ে পশ্চিমবঙ্গের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে নদীটির। নীলফামারীর ডিমলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের পর লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা হয়ে আবার কুড়িগ্রামের চিলমারির কাছাকাছি এসে ব্রহ্মপুত্রে মিশেছে নদীটি।
আরও পড়ুন:‘আশা করি আলোচনা ফলপ্রসূ হবে’ মোদির সঙ্গে বৈঠকের আগে বললেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী