আঁতকে ওঠার মতো ঘটনা। রক্ষকই ভক্ষক! উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা সীমান্তবর্তী এলাকায় বিএসএফের জওয়ানদের হাতে গণধর্ষণের শিকার এক মহিলা! যা নিয়ে তোলপাড় গোটা রাজ্য। অভিযুক্ত BSF জওয়ানদের যৌনলালসায় এতটাই পৈশাচিক ছিল যে, নিগৃহীতা মহিলার কোল থেকে তাঁর ২ বছরের শিশুকে ছুঁড়ে ফেলা হয়। তারপর গণধর্ষণ করা হয়। নির্যাতিতার শারীরিক এখন অত্যন্ত সংকটজনক। হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন। গ্রেফতার করা হয়েছে অভিযুক্ত দুই বিএসএস কনস্টেবলকে।
এমন ঘটনায় উঠেছে নিন্দার ঝড় উঠেছে। এমন নারকীয় ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে আগামীকাল, রবিবার তৃণমূল কংগ্রেসের এক প্রতিনিধি দল যাচ্ছে বাগদায়। পাশাপাশি গোটা রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ সংঘটিত করা হবে বলে জানিয়েছেন তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ।
আজ শনিবার এক সাংবাদিক বৈঠকে কুণাল ঘোষ বলেন, “ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটেছে বাগদা সীমান্তবর্তী এলাকায়। একজন মহিলাকে গণধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছে BSF জওয়ানদের বিরুদ্ধে। তিনি চিকিৎসাধীন। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন, ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবস থেকে মহিলাদের নিরাপত্তার কথা মুখে বলছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু বাস্তবে কী ঘটছে, সেটা দেখাই যাচ্ছে। মহিলাদের সম্মান নেই। নিরাপত্তা নেই।”
তবে সামগ্রিকভাবে তৃণমূল যে BSF-এর বিরুদ্ধে নয় সেটা স্পষ্ট করেন কুণাল। তাঁর কথায়, “তৃণমূল কংগ্রেস সামগ্রিকভাবে BSF-এর বিরুদ্ধে নয়। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে ও অধীনে থাকা BSF-এর জওয়ানরা যা ঘটলো, তাতে বলতেই হচ্ছে রক্ষকই ভক্ষক।”
এরপরই সুর চড়িয়ে কুণাল বলেন, “বিজেপি নিজেদের স্বার্থে BSF-কে ব্যবহার করছে। এই কু-কর্ম করার জন্যই কী সীমান্ত ১৫ কিলোমিটার থেকে ৫০ কিলোমিটার করা হয়েছে। এটা জোর করে করেছে। এটা রাজ্যের অধিকারে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিবাদ করেছেন। কিন্তু কর্ণপাত করেনি কেন্দ্র। কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। একজন মা তাঁর শিশুকে নিয়ে যাচ্ছেন। সেই মায়ের কোল থেকে শিশুকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে গণধর্ষণ করছে। কোনও কৈফিয়ত নেয়নি। অন্তঃসত্ত্বা বিলকিস বানোর ১১ জন গণধর্ষণকারীকে গুজরাতের বিজেপি কারামুক্ত করল। ভয়ে গ্রাম ছাড়ছে মানুষ।”
কুণাল ঘোষ আরও বলেন, “BSF-এর যাঁরা দক্ষ, যাঁরা ভালো কাজ করেন, তাঁদেরকে সীমান্তে রাখা হচ্ছে না। ভাল কাজ করা লোকগুলিকে তুলে এনে বিজেপির চারআনার নেতাদের ব্যক্তিগত দেহরক্ষীর কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। মিছিলে হাঁটানো হচ্ছে। তাই সীমান্তের পাহারায় যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের দক্ষতা নিয়ে সমীক্ষা হওয়া উচিত। এরা সীমান্ত পাহারা দেবে নাকি ধর্ষণ করবে। শীতলকুচির ভুল থেকে শিক্ষা নেয়নি কেন্দ্র। কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে? কোনও তদন্ত করেছে শীতলকুচির নিয়ে ?
এরপরই কুণালের সংযোজন, “কেন্দ্রীয় বাহিনীকে আমরা অসম্মানের পক্ষে নেই। কিন্তু বিজেপি তাদেরকে নিয়ে শাখা সংগঠনের মতো ব্যবহার করছে। যে BSF-এর কাজ পাচার আটকানোর, তারা ধর্ষণ করে বেড়াচ্ছে। পাচারের অভিযোগ আসলে তা রোখার দায়িত্ব BSF-এর। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আপনার বাহিনী ভয়ঙ্কর কাণ্ড ঘটাচ্ছে। বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স এখন বিজেপি সিকিউরিটি ফোর্স হয়েছে। BSF তাদের কর্তব্য পালন করবেন, মানুষ তাঁদের ভালোবাসবে। কিন্তু বিজেপির জন্য BSF-এর অপকীর্তি বাড়ছে। মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে। আগামিকাল, রবিবার তৃণমূলের প্রতিনিধি দল বাগদায় যাবে। সেখানে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন হবে। সারা বাংলায় কেন্দ্রের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের প্রতিবাদ জানাচ্ছে।”
উল্লেখ্য, নিগৃহীতা মহিলা বাগদা থানা এলাকার সীমান্ত অঞ্চল দিয়ে যাচ্ছিলেন। কোলে ছিল ২ বছরের শিশুসন্তান। তখনই মহিলাকে ধরে সীমান্তে কর্তব্যরত বিএসএফ জওয়ানরা। ক্যাম্পে নিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। এরপর ক্যাম্প লাগোয়া নির্জন জায়গায় বিএসএস জওয়ান ও আধিকারিকরাই ওই মহিলাকে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ। এমনকী, তাঁর কোল থেকে ছুঁড়ে ফেলা হয় শিশুসন্তানকে।
আরও পড়ুন:Sonali Phogat: চাঞ্চল্যকর ভিডিও ফাঁস ! বিজেপি নেত্রীর রহস্যমৃত্যুতে পুলিশের জালে আরও ২