“যে বুথে আমি হেরেছি সেই বুথে আগে জলের লাইন দেব। আর যে বুথে জিতেছি, সেই বুথে তো জলের লাইন দেবই। যাঁরা বিরোধী রাজনীতি করেন, জলের কানেকশন (Water Connection) তাঁদের বাড়ি আগে দেওয়া হবে। এই দৃষ্টান্ত আমাদের গড়ে তুলতে হবে। আমি যখন সাংসদ নির্বাচিত হয়েছি, তখন আমার কাছে দল-ধর্ম-বর্ণ, কিছুই প্রাধান্য পায় না। আমি মানুষের প্রতিনিধি। মানুষকে সেবা করাই আমার ধর্ম। ২০২৪-এর মার্চ মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করে ডায়মণ্ড হারবারের সমস্ত মানুষের বাড়িতে নলবাহিত পরিশ্রুত পানীয় জল (Purified drinking water) পৌঁছে দেওয়া হবে। একটি অঞ্চলের একটি বাড়িও বঞ্চিত হবে না।” বজবজে (Budge Budge) আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জল সরবরাহ বর্ধিতকরণ প্রকল্পের উদ্বোধন করতে এসে দৃপ্ত কণ্ঠে এমনটাই ঘোষণা করলেন সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)।
২০১১ সালে রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পর তখন সবেমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) মা-মাটি-মানুষের সরকারের বয়স মাত্র তিন বছর। সবকিছু তখনও গুছিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। প্রথমবারে জন্য ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্র থেকে ভোটে লড়ছেন অভিষেক। প্রচারে এসে মানুষের সমস্যা তাঁর চোখে পড়ে। মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি, পরিশ্রুত পানীয় জলের। সেই দাবি না মিটলে ভোট বয়কট করা হবে। অভিষেক কথা দিয়েছিলেন, সাংসদ নির্বাচিত হলে সমস্যার সমাধান হবে। সেদিনের সেকথা তুলে ধরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “২০১৪ সালে ভোট প্রচারে এসে কথা দিয়েছিলাম সাংসদ নির্বাচিত হলে আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জল সরবরাহ করে মানুষের কষ্ট দূর করব, আজ সেই স্বপ্নপূরণ হল।”
নির্বাচনী প্রচারে ভাঁওতা নয়। শুধু নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি নয়। যা বলেন তাই করেন। এবার ডায়মন্ড হারবারবাসীর দীর্ঘদিনের চাহিদার সমাধান করলেন ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। পশ্চিমবঙ্গের জনস্বাস্থ্য কারিগরী দফতর অভিষেকের এই স্বপ্নের প্রকল্পের রূপায়ণ করেছে। যা থেকে উপকৃত হবেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। জনস্বাস্থ্য কারিগরী দফতরের তৎকালীন মন্ত্রী প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের কাছে এই প্রকল্পের জন্য দরবার করেছিলেন অভিষেক। বর্ষীয়ান সুব্রতবাবু এক তরুণ সাংসদের এমন উদ্যমী মনোভাব দেখে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে বিষয়টি তুলে ধরেন। বাকিটা ইতিহাস। বরাদ্দ ৫৬৪ কোটি টাকায় ৭৮৬কিমি বিস্তীর্ণ পাইপ লাইনে গড়ে ওঠা এই আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জল প্রকল্প।
এদিন বজবজে আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জল সরবরাহ বর্ধিতকরণ প্রকল্প উদ্বোধনের শুরুতেই তাই রাজ্যের প্রয়াত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে স্মরণ করে বলেন, “একটি বৃত্ত সম্পূর্ণ হল। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য স্বর্গীয় সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের অবদান ভোলার নয়। আজ তিনি থাকলে সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন।” অভিষেক জানান আগামী ৩০ বছর ডায়মন্ড হারবারের মানুষের পানীয় জলের অভাব মেটাবে এই প্রকল্প। অভিষেক এদিন হুঁশিয়ারির সুরে বলেন, পঞ্চায়েত থেকে কারু জলের লাইন কেটে দেওয়ার যদি কোনও অভিযোগ ওঠে তাহলে তার বিরুদ্ধে পুলিশ স্বত্বপ্রণোদিত হয়ে ব্যবস্থা নেবে। আর এখন হেল্পলাইন চালু হয়েছে। কারও কোনও সমস্যা হলে, কোনও অভিযোগ থাকলে সরাসরি ফোন করে জানাতে বলেন। পরিচয় গোপন থাকবে। সকলের সব খবর তাঁর গোচরে চলে আসবে। তাই সবকিছুর মধ্যে যেন স্বচ্ছতা বজায় থাকে, তার নির্দেশও দেন অভিষেক।
এদিন কেন্দ্রকেও একহাত নেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ। নরেন্দ্র মোদির লোক দেখানো “সবকা সাথ সবকা বিকাশ”-এর নাম তুলে ধরে অভিষেক বলেন, “সবকা সাথ সবকা বিকাশ” একমাত্র প্রমাণিত করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।” কেন্দ্রের সবকা সাথ সবকা বিকাশ প্রসঙ্গে ১০০ দিনের কাজে রাজ্যকে বঞ্চিত করার অভিযোগও তুলেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বিধানসভা নির্বাচনে গো-হারার জন্যই প্রতিশোধ তুলতে কেন্দ্র একমাত্র রাজ্য হিসেবে বাংলার ১০০ দিনের টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন অভিষেক। তবে তিনি জানিয়েদেন, যতদিন বাংলার মানুষের অভিভাবকের নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ততদিন পর্যন্ত রাজ্যের মানুষকে ভাতে মারার কেন্দ্রীয় চক্রান্ত সফল হবে না। বরং, যাঁরা চক্রান্ত করছে, তাদের বাড়া ভাতে ছাই পড়বে। রাজনীতি রাজনীতির জায়গায়। উন্নয়ন ও পরিষেবার প্রদানের ক্ষেত্রে কোনও আপোস নয় বলেই জানান অভিষেক।