নেপাল ও ভুটানেও পার্থ-যোগ ! ইডির নজরে উত্তরের  একাধিক সমবায় ব্যাঙ্ক

0
2

পার্থ-ঘনিষ্ঠ অর্পিতার ফ্ল্যাটের কোটি কোটি নগদের উৎস কী ? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের আধিকারিকরা। আর এর মধ্যেই সামনে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।ইডির দাবি, চাকরি সংক্রান্ত লেনদেনের জন্য জেলায় জেলায় নিয়োগ করা ছিল পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের একাধিক এজেন্ট। তাদের মাধ্যমেই চাকরির টাকা পৌঁছত প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর কাছে। এজেন্টদের মাধ্যমে কীভাবে টাকা হাতবদল হত, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই মিলেছে হাওয়ালা যোগ।

পার্থ গ্রেফতার হতেই মুখ খুলতে শুরু করেছেন অনেকেই। সূত্রের খবর, নোটবন্দির সময় উত্তরবঙ্গের একাধিক সমবায় ব্যাংক থেকে পার্থর বিশাল অঙ্কের কালো টাকা সাদা হয়েছে। শুধু উত্তরবঙ্গ নয়, পার্শ্ববর্তী রাজ্য সিকিম ও প্রতিবেশী দেশ নেপাল ও ভুটান ঘুরে হাওয়ালার মাধ্যমে টাকা পৌঁছেছে কলকাতায়।

ইডির দাবি, সমবায় ব্যাংক থেকে কালো টাকা সাদা করার পুরো বিষয়টি তত্ত্বাবধান করেছিলেন উত্তরবঙ্গের এক নেতা। কীভাবে, কখন, কোন ব্যাংকে কত টাকা জমা পড়বে, সেই টাকা কার অ্যাকাউন্টে ঢুকবে বা কত টাকা নগদে তোলা হবে, সেসবই ওই নেতার নির্দেশে হত।নোটবন্দি পর্বে দফায় দফায় একাধিক জেলার সমবায় ব্যাংক থেকে একই পদ্ধতিতে ওই অবৈধ কোটি কোটি  টাকা বৈধ করা হয়েছে। ইডি সূত্রের খবর, অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করা বেশ কিছু নথিতে এমন টাকা লেনদেনের কিছু সাংকেতিক শব্দ পাওয়া গিয়েছে। তাতে সমবায় ব্যাংকের উল্লেখও আছে। তার রেশ ধরেই আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহারের একাধিক সমবায় ব্যাংকের নোটবন্দি সময়কালীন লেনদেনের তথ্য যাচাই করে দেখতে চাইছে ইডি।

নোটবন্দির সময় বেছে বেছে কিছু সমবায় সমিতির মাধ্যমেও সেই সময় কোটি কোটি টাকা ব্যাংকে জমা করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে ঋণদানকারী কৃষি সমবায় সমিতিও রয়েছে। ওই সমিতিগুলিতে কৃষকদের ঋণের টাকা পরিশোধ করে দেওয়া হয়েছিল কালো টাকায়। পরে তাঁদের নামে নতুন ঋণ তুলে সেই টাকা নিয়ে নেওয়া হয়েছিল। এইভাবেই কোটি কোটি টাকা সাদা করা হয়েছে বলে ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে।

নোট বদলানোর নির্দিষ্ট সময়সীমার পরেও সিকিম, নেপাল ও ভুটানের ব্যাংকে বাতিল হওয়া ভারতীয় নোট বদলাতে বাড়তি সময় মিলেছিল। তবে সেক্ষেত্রে বিশেষভাবে লাভবান হয়েছিল ব্যবসায়ীরাই। উত্তরবঙ্গের বহু ব্যবসায়ীর নেপাল, ভুটান ও সিকিমে ব্যবসা রয়েছে। তিন জায়গাতেই অনেকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টও আছে। সূত্রের খবর, সেই বাড়তি সময়ের সুযোগ নিয়ে অপসারিত মন্ত্রীর বহু কালো টাকা বেনামে নেপাল, ভুটান ও সিকিমের ব্যাংকে জমা হয়েছিল। হাওয়ালার মাধ্যমে সেই টাকা কলকাতা থেকে এসেছিল শিলিগুড়িতে। সাদা হওয়ার পর ওই ব্যবসায়ীদের তত্ত্বাবধানে সেগুলি হাওয়ালার মাধ্যমেই কলকাতায় ফেরত যায়। হাওয়ালার লেনদেনে ১০ শতাংশ হারে টাকাও নাকি দিতে হয়েছিল প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীকে।

চাকরির নামে টাকা তোলার ক্ষেত্রে কোচবিহারের এক প্রভাবশালী নেত্রীর সঙ্গে পার্থর ঘনিষ্ঠতাও এখন আতসকাচের তলায়। শুধু কোচবিহারই নয়, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, এমনকি মালদা থেকেও ওই নেত্রীর মাধ্যমে চাকরির সুপারিশ ও লেনদেনের অর্থ কলকাতায় যেত বলেই খবর। মন্ত্রীর টাকা সাদা করতে ওই নেত্রীর ভূমিকাও ছিল গুরুত্বপূর্ণ। সব মিলিয়ে হাওয়ালায় টাকা লেনদেনের এই নতুন তথ্য অর্পিতার ফ্ল্যাটের নগদের উৎসের খোঁজে কোনও দিশা দেখাতে পারে কি না, সেটাই এখন দেখার।