সুদীপ্ত সেনের বিস্ফোরক স্বীকারোক্তির পর শুভেন্দুকে গ্রেফতারের দাবিতে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে তৃণমূল

0
1

“শুভেন্দু অধিকারী ব্ল্যাকমেল করে আমার কাছ থেকে টাকা নিত। একবার নয় অনেকবার। কাঁথিতে ডেকে পাঠাতো।” শুক্রবার সারদাকর্তা সুদীপ্ত সেনের (Sudipta Sen) সংবাদমাধ্যমের সামনে এমন বিস্ফোরক স্বীকারোক্তির পর তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। এই মর্মে সারদাকর্তা (Sarada) আগেই কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High court) প্রধান বিচারপতি এবং কলকাতার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের (Chief Metropolitan Magistrate of Calcutta) কাছে তাঁর দ্বিতীয় চিঠি দিয়েছেন। আর এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই শুভেন্দুকে গ্রেফতারের দাবিতে সরব হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস (TMC)। এবার বৃহত্তর আন্দোলনের পথে নামতে চলেছে তৃণমূল (TMC)।

আজ, শনিবার সাংবাদিক বৈঠক করে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারন সম্পাদক কুনাল ঘোষ (Kunal Ghosh)। সোমবার, শুভেন্দুকে গ্রেফতারের দাবিতে সল্টলেক সিজিও কমপ্লেক্সে (CGO complex in Saltlake) সিবিআই দফতরের বাইরে একটি বিশাল সভার আয়োজন করা হয়েছে তৃণমূল ছাত্র-যুব সংগঠনের পক্ষ থেকে। যেখানে মূল বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি তৃনাঙ্কুর ভট্টাচার্য, যুব সভানেত্রী সায়নী ঘোষ (Sayani ghosh), তৃণমূলের রাজ্য সাধারন সম্পাদক কুনাল ঘোষ (kunal ghosh), বিধায়ক বাবুল সুপ্রিয়-সহ নেতৃত্ব।

ওইদিনই পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়ায় একটি মিছিল ও তারপর দুর্গাচকে সভা হবে শুভেন্দুকে গ্রেফতারের দাবিতে। যেখানে উপস্থিত থাকবেন মানস ভুঁইয়া, শিউলি সাহা, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবারই পূর্ব মেদিনীপুরে অধিকারী পরিবারের হোমটাউন কাঁথিতে রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরির নেতৃত্বে একটি মিছিল ও সভা হবে শুভেন্দুকে গ্রেফতারের দাবিতে। যেখানে সকলস্তরের তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা অংশ নেবেন। এবং রাজ্যের তিনটি পৃথক জায়গায় এই সভা ও মিছিলগুলি হবে একই সময়, দুপুর তিনটে।

এরপর মঙ্গলবার, বেলা ১১.৩০ মিনিটে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে সারদাকর্তা সুদীপ্ত সেনের থেকে প্রতারণা ও ব্ল্যাকমেল করে টাকা নেওয়ার ইস্যুতে অভিযোগ জানাতে এবং রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের হস্তক্ষেপ দাবি করেন রাজভবনে যাবে তৃণমূলের ৮ সদস্যের এক প্রতিনিধি দল। যার নেতৃত্বে থাকবেন রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু। এছাড়াও প্রতিনিধিদলের বাকি সদস্যরা হলেন মানস ভূঁইয়া, তাপস রায়, কুণাল ঘোষ, শশী পাঁজা, ফিরোজা বিবি, অর্জুন সিং, সায়নী ঘোষ।

এদিন সাংবাদিক বৈঠকে ফের শুভেন্দু অধিকারীকে তুলোধনা করেন কুণাল ঘোষ। তিনি বলেন, “সারদা কেলেঙ্কারিতে বহুমানুষ ক্ষতিগ্রস্থ, বিপর্যস্ত। শুধু আমানতকারী নয়, অনেক কর্মীও কাজ হারিয়ে বিপর্যস্ত। এই মামলায় সুদীপ্ত সেনের বয়ান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সারদা কেলেঙ্কারি মামলায় সুদীপ্ত সেন আগেও একটি চিঠি দিয়েছিলেন আদালতকে। পরে দ্বিতীয় চিঠি দিয়েছেন। কিছু ষড়যন্ত্রকারী অন্যের কাঁধে বন্দুক রেখেছে নিজেদের আখের গুছিয়েছে। সারদায় অন্যতম প্রধান ষড়যন্ত্রকারী ও সুবিধাভোগী হল শুভেন্দু অধিকারী। সাংবাদিকদের সামনে সেটা সারদাকর্তা বলেছেন, ব্ল্যাকমেল করে দফায় দফায় কীভাবে তার থেকে টাকা নিয়েছে শুভেন্দু। সারদাকর্তার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল শুভেন্দুর। পশ্চিমবঙ্গে এত জায়গা থাকতে কেন বারবার কাঁথি পুরসভায় তৎকালীন সময়ে টাকা দিতেন সুদীপ্ত সেন? শুভেন্দু নগদেও সারদাকর্তার থেকে টাকা নিয়েছে। অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে শুভেন্দুকে।”

শুভেন্দু বাংলার মানুষের সঙ্গে বেইমানি করেছে। ব্ল্যাকমেল করে বারেবারে সুদীপ্ত সেনের থেকে টাকা নিয়েছে। তৃণমূলের সঙ্গেও বেইমানি করেছে। ছোটবেলায় বাবার ছায়ায়, আর জ্ঞান হওয়ার পর থেকে দিদির দয়ায়, তৃণমূলের আবেগে নেতা হয়েছে। এখন সিবিআই-ইডি থেকে বাঁচতে বিজেপিতে গেছে মেরুদণ্ডহীন, চোর, ক্রিমিনাল, তোলাবাজ, ব্ল্যাকমেলার শুভেন্দু অধিকারী। বিজেপি আর রাজ্যপাল তাকে সুরক্ষা দিচ্ছে, তাই সিবিআই-ইডিতে অনেক দক্ষ অফিসার থাকা সত্ত্বেও গ্রেফতার করা হচ্ছে না। নারদায় সিবিআইয়ের এফআইআর-এ নাম রয়েছে। সারদাকর্তার থেকে ব্ল্যাকমেল করে টাকা নিয়েছে। কেন তাঁকে গ্রেফতার করা হবে না? রাজ্যপাল ওকে সুরক্ষা দিচ্ছে। দুপুরে ফোন করে ১০মিনিটের মধ্যে ঢুকে যায় বিজেপির লোকেরা। রাজভবনকে নাট্যমঞ্চ করেছে বিজেপি। রাজ্যপাল কথায় কথায় বিজেপিকে সময় দেন। বিজেপির পার্টি অফিস হয়েছে রাজভবন। আমরা সময় চেয়েছি। এবার দেখি শুভেন্দুকে নিয়ে কী পদক্ষেপ নেন উনি।”

সারদাকর্তার চাঞ্চল্যকর বয়ানের পর শুভেন্দু সংবাদমাধ্যমের সামনে প্রতিক্রিয়া না দিয়েই কার্যত পালিয়ে যান। এ প্রসঙ্গে কুণাল ঘোষ শুভেন্দুকে কটাক্ষ করে বলেন, “আসলে শুভেন্দু নিজেও জানে সে চোর, সুদীপ্ত সেনের থেকে টাকা নিয়েছে। কাঁথিতে সুদীপ্ত সেন কেন যেতেন, কার কথায় যেতেন, সেটা সবাই জানেন। শুভেন্দু একজন নদের নিমাই। ফালতু কথা বলে পালিয়ে গেলে হবে? সঠিক পথে তদন্ত হলেআজ না হয় কাল গ্রেফতার হতেই হবে। সুদীপ্ত সেন মুখ খোলার পর আতঙ্কে পাগলের মতো আচরণ করছে বলে শোনা যাচ্ছে। ওর বাড়ির পাশের লোকেরা এমনটাই বলছে।”