ডুমুরদহে পার্ল চাষে নতুন দিশা, গ্রামের পুকুরেই আধুনিক ‘ইমেজ পার্ল’

0
1

সুমন করাতি, হুগলি

পার্ল চাষে( pearl cultivation) নতুন দিশা। গ্রামের পুকুরের মিষ্টি জলে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পার্ল চাষ করে দিশা দেখাচ্ছে ডুমুরদহ(Dumurdaha) ১ পঞ্চায়েতের টাকিপাড়া গ্রাম। প্রযুক্তিকে (Technology) ব্যবহার করে আধুনিক উপায় যেভাবে দৃষ্টিনন্দন মুক্ত চাষ হচ্ছে তা দেখলে সাধারণ মানুষের পার্ল চাষ (Pearl cultivation) সম্পর্কে ধারণা বদলে যাবে।

আমাদের কাছে পার্ল মানেই তার আকার গোল। কিন্তু এই নতুন পদ্ধতিতে চাষ করে নানা অবয়বের পার্ল মিলছে। কোনও পার্ল অশোক স্তম্ভের আকারের, কোনটা দেখলে মনে হবে যেন মা দুর্গার মুখের আদলে তৈরি। এক নজরে তাকিয়ে থাকলে অবাক হতে হয় বৈকি। চাষিরা বলছেন ঝিনুকের ভিতর প্রায় ২ বছর ধরে এই পার্ল তৈরি হয়।

কীভাবে তৈরি হয় এই পার্ল?

সরকারি প্রকল্পের অধীনে ডুমুরদহ ফিশারম্যান কো-অপারেটিভের(Fisherman co-operative)  মহিলারা মিষ্টি জলে পার্ল চাষ করছেন। উড়িষ্যার বালেশ্বর থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে ২০১৮ সালে ডুমুরদহে প্রথম এই পার্ল চাষ শুরু হয়। মিষ্টি জলের যে ঝিনুক হয় সেই ঝিনুককে সংগ্রহ করে এনে দু তিন রকম সলিউশন মিশিয়ে ছাঁচে ফেলে তৈরি করা নিউক্লিয়াস ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। তারপর দিন সাতেক জলের মধ্যে ওষুধ মিশিয়ে ঝিনুক গুলোকে তার মধ্যেই রেখে দেওয়া হয়। তার পরে এই ঝিনুক গুলোকে খাঁচার মধ্যে ভরে পুকুরে নামিয়ে দেওয়া হয়। পুকুরে প্রাকৃতিক ভাবে প্রায় দেড় থেকে দুবছর সময় নিয়ে নানা আকৃতির এই পার্ল গুলো তৈরি হয়। এর পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছে ডিজাইনার পার্ল বা ইমেজ পার্ল। ঝিনুকের মধ্যে আটকে থাকা অবস্থাতেই পার্ল গুলো কে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে রাজস্থান সুরাট সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায়। সেখানে ঝিনুক কেটে পার্ল গুলো বের করা হয়। পালিশ করার  পর এই পার্ল দিয়েই তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের গয়না।

সম্প্রতি ভারতবর্ষে পার্ল এর  চাহিদা ও বাজার বেশ বেড়েছে। এক-একটি খাঁচার মধ্যে চল্লিশটি করে ঝিনুক প্রসেস করে পুকুরের মধ্যে নামিয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে দেখা যায় প্রতিটি ঝিনুকে দুটি করে পার্ল  তৈরি হচ্ছে। হোলসেল বাজারে এক একটি  ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যে পুকুর গুলিতে পার্ল চাষ করা হচ্ছে, সেখানে আগে থেকেই বিভিন্ন ধরনের মাছ চাষ হয়।তাই এই চাষের জন্য আলাদা করে খরচও খুব বেশি নয়। বাণিজ্যিকভাবে সফল হলে গ্রামের মহিলারা অনেকটাই স্বনির্ভর হতে পারবেন বলে মনে করছেন এই পার্ল চাষে যুক্ত সোসাইটির সদস্যরা।  চাষি আল্পনা বিশ্বাস বলেন, নতুন ধরনের একটা কিছু করতে পেরে তিনি খুবই খুশি। রীতিমতো প্রশিক্ষণ নেওয়ার পরই তিনি এই পার্ল চাষ করছেন। পরবর্তী সময় তাঁকে দেখে আরও অনেকেই উৎসাহী হয়েছেন। নেচার এনভায়রনমেন্ট অফ ওয়াইল্ড লাইফ সোসাইটির টিম লিডার অরিজিৎ চক্রবর্তী বলেন, একেবারে প্রাকৃতিক পরিবেশে প্রাকৃতিক উপায়ে পার্ল চাষ হচ্ছে। তবে প্রথাগত পার্ল যেমন হয় এটা সেটা নয়। তবে বাজারে ইমেজ পার্লের চাহিদা খুব বেশি। বিভিন্ন ধরনরে ছাঁচ দিয়ে তৈরী হচ্ছে। গ্রামের মহিলারা প্রশিক্ষণ নিয়ে এই কাজে যুক্ত হয়েছেন। পার্ল চাষে সাবসিডিও দেওয়া হচ্ছে। মহিলাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন স্থানীয় পুরুষরা।