পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ছিলেন রিমা, আজই বিয়ের তারিখ ঠিক হওয়ার কথা ছিল

0
2

একেই বলে নিয়তির পরিহাস। পার্ক সার্কাসে মানসিক অবসাদগ্রস্ত পুলিশ কনস্টেবলের এলোপাথাড়ি গুলি প্রাণ কেড়ে নিয়েছে হাওড়ার দাশনগরের ২৮ বছরের রিমা সিংহ। আচমকা এমন ঘটনায় কার্যত মাথায় বাজ পড়ে রিমার পরিবারের সদস্যদের। তাঁরা কিছুই জানতেন না। বিকেল ৪টে নাগাদ টিভির খবর দেখে বুঝতে পারেন সর্বনাশ হয়েছে তাঁদের পরিবারেই।

আরও পড়ুন : প্রয়াত পাকিস্তানের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি পারভেজ মুশারফ

 

রিমার মা কান্নায় ভেঙে পড়েন। কথা বলার মতো জায়গায় তিনি নেই। তার মাঝেও জানালেন, রিমা ছিলেন তাঁদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। দারিদ্র তাঁদের নিত্যসঙ্গী। নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর সংসার। বাবা অসুস্থ। রিমার বাবার ৫ বছর কারখানা বন্ধ। মেয়ের সামান্য রোজগার আর ধারদেনা করেই কোনওরকমে চলে সংসার। ছোট ভাই পড়াশুনা করে। ফিজিওথেরাপির ট্রেনিং করছিলেন রিমা। সেখান থেকে যৎসামান্য উপার্জন হতো। স্থানী কোনও মাসিক বেতন ছিল না। প্রতিদিনের মতো এদিনও কাজে বেরিয়েছিলেন রিমা। কিন্তু দাশনগরের বাড়িতে আর ফিরবেন না হাসিখুশি রিমা। ফিরবে তাঁর নিথর দেহ।

অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে রিমার মা বলেন, “আমার মেয়ে এভাবে চলে যাবে ভাবতেই পারছি না। মেয়ে আর আমার ঘরে ফিরবে না। খবরে দেখাচ্ছে। তখন জানতো পারলাম। দুপুর ১২টা নাগাদ আজ বাড়িতে থেকে বেরিয়েছে। কিছুই জানতাম না। বাড়িওয়ালা বৌমার কাছ থেকে জানতে পারি টিভিতে এমন খবর দেখাচ্ছে। বিয়ের ঠিক হয়ে গিয়েছিল। নিনেই ছেলে পছন্দ করেছিল। আজই বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক হওয়ার কথা ছিল।হবু শ্বশুর বাড়ির তরফে লোক আসার কথা ছিল। কিন্তু সব শেষ।”

রিমার মা আরও জানান, মেয়ে কলেজ শেষ করতে পারেনি। কলা বিভাগের ছাত্রী ছিল। দ্বিতীয় বর্ষ পর্যন্ত পড়েছে। তারপর সংসারের প্রয়োজনে রোজগারের জন্য বেরোতে হতো। রিমা চাইতন ছোট ভাই পড়াশুনা করুক। ভাইকে তাই কাজ করতে দিতেন না।

যে যুবকের সঙ্গে রিমার বিয়ের ঠিক হয়েছিল তিনি জানিয়েছেন, “প্রথমে টিভিতে খবরটা দেখি। নাম, বাড়ির ঠিকানা, বয়স সবই যখন মিলে যাচ্ছে, তখননিশ্চিত হওয়ার জন্য ওর মোবাইলে ফোন করি। বেনিয়াপুকুর থানার পুলিশ ফোন তুললে, জানতে পারি রিমার সঙ্গেই এমন ঘটনা ঘটেছে।”

এদিকে রিমার আকস্মিক মৃত্যুতে তাঁর পাড়া প্রতিবেশিদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সকলেই বাকরুদ্ধ।