“শ্রমিকবন্ধু” তৃণমূল, ২৮শে সমাবেশের আগে অভিষেকের আগমনী বার্তা দিতে হলদিয়ায় কুণাল-ঋতব্রত

0
2

সোমনাথ বিশ্বাস, হলদিয়া : আগামী ২৮ মে পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়ায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঐতিহাসিক শ্রমিক সমাবেশ। সেজে উঠেছে হলদিয়া। হাওড়া পেরিয়ে কোলাঘাটে পা রাখতেই দেখা গেল সেই ছবি। তৃণমূলের ফ্ল্যাগ-ফেস্টুন-পোস্টার-ব্যানারে ছয়লায় গোটা হলদিয়া শিল্পাঞ্চল চত্বর। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের মেগা সমাবেশের ৪৮ ঘন্টা আগেই “শ্রমিকবন্ধু” তৃণমূল, “শিল্পবন্ধু” তৃণমূল বার্তা নিয়ে হাজির তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ এবং শ্রমিক সংগঠন INTTUC-এর রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়।

বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিজের তৃতীয় ইনিংসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শপথ নেওয়ার পরই সদর্পে ঘোষণা করেছিলেন আগামীতে তাঁর লক্ষ্য হতে চলেছে শিল্প এবং কর্মসংস্থান। রাজ্য সরকার যখন এই মহৎ লক্ষ্য নিয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে, ঠিক সেই সময় রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল রাজ্য সরকারের পাশে দাঁড়িয়ে সহায়ক ভূমিকা নিতে চলেছে।

তৃণমূল যে “শিল্পবন্ধু”, “শ্রমিকবন্ধু”, শ্রমিকরাই সম্পদ, এই ভাবমূর্তিকে তুলে ধরতে আগামী শনিবার হলদিয়ার রাণীচক হংহতি ময়দানে আসছেন আভিষেক। তার আগে শ্রমিক বন্ধুদের কাছে অভিষেকের আগমনী বার্তা পৌঁছে দিতে এবং সভার প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে বাংলার অন্যতম শিল্পতালুক হলদিয়ায় হাজির হয়ে ।মহিষাদলে একটি বিশাল প্রস্তুতি সভা করলেন কুণাল, ঋতব্রত। ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক তিলক চক্রবর্তী।

আগামিদিনে রাজ্যে শ্রমিকদের ভূমিকা কী হবে, শ্রমিক স্বার্থে ঘাসফুল শিবিরের কী পদক্ষেপ, তা নিয়েই আইএনটিটিইউসির ডাকে এই অভিষেকের সমাবেশ আজ, বৃহস্পতিবার মহিষাদলের প্রস্তুতি সভা থেকে তা বুঝিয়ে দিলেন কুণাল ঘোষ। এদিন মহিষাদল, রথতলার মাঠে বক্তব্যের শুরুতেই কুণাল স্থানীয় মানুষ ও শ্রমিক পরিবারের সদস্যদের কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, “বেইমান, গদ্দাররা নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করে দল ছেড়েছিল। বিধানসভা ভোটের ঠিক আগেই এই মাঠে এসে আমি জনসভা করেছিলাম। আপনারা তৃণমূলের তিলক চক্রবর্তীকে জিতিয়েছেন। তাই সর্বাগ্রে আপনাদের প্রণাম, শুভেচ্ছা জানাই।”

এরপর অভিষেকের শ্রমিক সমাবেশের বার্তা দিতে গিয়ে কুণাল বলেন, “পূর্ব মেদিনীপুর শুধু নয়, সারা বাংলার ইতিহাসে বৃহত্তম শ্রমিক সমাবেশ হতে চলেছে আগামী ২৮ মে। প্রধান বক্তা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আপনারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখেছেন। তাঁর লড়াই দেখেছেন। তাঁর যৌবন দেখেছেন। মমতা মানেই জনজোয়ার। মমতা মানেই আবেগ। বিরোধী নেত্রী হিসেবে আপসহীন সংগ্রাম দেখেছেন। এখন প্রশাসনিক দক্ষতা দেখেছেন। আগামীর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ডাক এসেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন মধ্য গগণের সূর্য। আর পরশু পূব দিকে আরেকটি সূর্য উঠছে। হলদিয়ায় সূর্য উঠছে। সূর্য হয়ে আসছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যোগ্য উত্তরসূরি অভিষেক।”

শ্রমিকদের উদ্দেশে কুণালের বার্তা, “হলদিয়া আমাদের গর্ব। সিটু বিশ্বাস ঘাতকতা করেছে। কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠনের কোনও অস্তিত্ব এখন কার্যত নেই। আর তৃণমূল শ্রমিক স্বার্থে শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করছে। হলদিয়ায় শ্রমিক সমস্যা বাম আমল থেকেই। এখন ধীরে ধীরে তার সমাধান হচ্ছে। এখানে শ্রমিকরা বেতন কম পায়। আমাদের দলের শ্রমিক সংগঠনের নেতা ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় সেই সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। তৃণমূল হলদিয়ায় ঘুঘুরবাসা ভাঙবে। শ্রমিকরা ন্যায্য পারিশ্রমিক, মজুরি পাবেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, শ্রমিকদের কেউ বঞ্চিত করলে তাদের বিরুদ্ধে FIR করুন। যাঁরা শ্রমিকদের ভবিষ্যত নিয়ে ছেলেখেলা করছেন, তাদের ভুল সংশোধন করতে বলা হচ্ছে। তারপরেও সংশোধন করা না হলে পার্টি তাঁদের সমর্থন করবে না।”

শ্রমিক বিরোধী বাম-বিজেপিকেও নিশানা করেন কুণাল। তাঁর কথায়, “এই হলদিয়া শিল্পাঞ্চলকে ব্যবহার করে অধিকারীরা নিজেদের সাম্রাজ্য বিস্তার করেছে। গদ্দার, বেইমান, অধিকারী প্রাইভেট লিমিটেড বিজেপিকে আপনার ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন। অধিকারীরা দাদা থেকে দাদু হয়ে যাবে। কিন্তু সরকারে আসতে পারবে না। মামলা থেকে বাঁচতে বিজেপির কাছে মেরুদণ্ডহীনের মতো আত্মসমর্পণ করেছেন। সিপিএমও নিজেদের পার্টির হোল টাইমারদের সব চাকরি দিয়েছে। সিপিএম, বিজেপি, কংগ্রেসের কথা শুনবেন না। সব জায়গায় লড়াই করছে তৃণমূল। তাই শ্রমিক স্বার্থে, শিল্প স্বার্থে তৃণমূলের সঙ্গে থাকুন। পাহাড় ভাঙার গান গেয়ে তৃণমূল দিল্লির দিকে চোখে চোখ রেখে লড়াই করবে। আর তৃণমূলের সম্মেলন মানে শুধু নেতৃত্ব নয়, কলকারখানায় যাঁরা কাজ করেন, সেই শ্রমিক বন্ধুরাই হলেন দলের সম্পদ।”

তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় শিল্পক্ষেত্রের উপর যে অত্যাচার, বঞ্চনা শুরু করেছে কেন্দ্রের মোদি সরকার, সেই তথ্য তুলে ধরেন। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে বেসরকারিকরনের বিরোধিতা থেকে রাজ্যের কয়েক লক্ষ সংগঠিত এবং অসংগঠিত শ্রমিকের স্বার্থে তৃণমূলের লড়াইয়ের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন এদিনের সভায়। শিল্প এবং শ্রমিক স্বার্থবিরোধী অংশকে উৎখাত করার ডাকও দেন তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের রাজ্য সভাপতি।

আরও পড়ুন:ঝড়-বৃষ্টির দাপটে নাকাল হতে পারে কলকাতা- সহ রাজ্য, পূর্বাভাস হাওয়া অফিসের