একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে একে একে মুকুল রায়, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, সব্যসাচী দত্তের পর বিজেপি থেকে তৃণমূলে ঘর ওয়াপসির নবতম সংযোজন ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিং। মাঝে বেশ কয়েকজন দলবদলু নেতা ও বিধায়কও ঘরে ফিরেছেন। লোকসভা নির্বাচনের আগে এই ছবি বঙ্গ বিজেপির জন্য যে অশনি সঙ্কেত তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তালিকায় রয়েছেন আরও কিছু সাংসদ-বিধায়ক-নেতারা।
খুব স্বাভাবিকভাবেই এখনও তৃণমূল থেকে বিজেপিতে আসা যে সকল নেতা-নেত্রীরা টিকে রয়েছেন, তাঁদের ঘিরে সন্দেহ ও অবিশ্বাসের একটা বাতাবরণ তৈরি হয়েছে গেরুয়া শিবিরের অন্দরে। একুশের বিধানসভা ভোটে ১৩৪ জন দলবদলুকে টিকিট দিয়েছিলেন দিলীপ ঘোষ, কৈলাস বিজয়বর্গীয়রা। নির্বাচনে ভরাডুবির পর অনেকেই পদ্ম ছেড়ে জোরাফুল শিবিরে যোগ দিয়েছেন। আর এখন যা পরিস্থিতি, তাতে বাকিরা যে কোনওদিন তৃণমূলে ভিড়তে পারেন এমন সন্দেহ অমূলক নয়। তাই সেই নেতানেত্রীরা লোকসভা ভোটের মুখে ডোবানোর চেয়ে আগেই তাঁদের ছেঁটে ফেলার জন্য গেরুয়া শিবিরের একটি অংশ চাপ তৈরি করতে চাইছে নেতৃত্বের উপর। যাতে দলবদলুদের আগেভাগে তাড়িয়ে নতুন একটি টিম নিয়ে লোকসভার ময়দানে নামানো যায়।

এদিকে, অর্জুন সিংয়ের ফুলবদলের ২৪ঘন্টা কাটতে না কাটতেই একটি বৈঠকে যোগ দিতে দিল্লি গেলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ। জানা গিয়েছে, ওই বৈঠকে অর্জুন সিংয়ের সাংসদপদ এবং কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা প্রত্যাহার নিয়ে আলোচনা হতে পারে। অর্জুনের দলবদলের পর ব্যারাকপুররে গেরুয়া শিবিরের সাংগঠনিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হওয়ার কথা। আবার রাজ্যে বিজেপির একটি সাংগঠনিক বৈঠকেও দিল্লি থেকে ভার্চুয়ালি অংশ নেওয়ার কথা দিলীপ ঘোষের।
এদিকে,বর্তমান যে ত্রয়ী বঙ্গ বিজেপিকে কার্যত কুক্ষিগত করে রেখেছেন সেই সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারী ও অমিতাভ চক্রবর্তীর অপদার্থতা নিয়ে ফের সোচ্চার বঙ্গ বিজেপির একটি অংশ। তাঁদের নেতৃত্ব নিয়েও দিল্লি নেতাদের কাছে নালিশ ঠুকবেন দিলীপ।


শুভেন্দুর উপর ইতিমধ্যেই আস্থা হারাতে শুরু করেছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তাঁরা শুভেন্দুর ফোন ধরেন না বলে সূত্রের খবর। সম্প্রতি, জয়পুরে সর্বভারতীয় বিজেপির চিন্তন বৈঠকে বিজেপি শাসিত সমস্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও যেখানে বিজেপি প্রধান বিরোধী দল সেই রাজ্যের বিরোধী দলেতাদের আমন্ত্রণ করা হয়েছিল। কিন্তু এ রাজ্য থেকে ডাক পাননি শুভেন্দু। খুব স্বাভাবিকভাবেই রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, দলবদলু শুভেন্দুর উপর কী তাহলে বিজেপি নেতৃত্বের বিশ্বাস উঠে গিয়েছে? এবার কী শুভেন্দুর উপর সন্দেহ প্রকাশ করছে গেরুয়া শিবিরের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক? সেই ভাবনায় ইন্ধন দিতেই কী দিল্লিতে দিলীপ ঘোষ? রাজনৈতিক মহল বলছে, রাজনীতিতে কোনওকিছুই অসম্ভব নয়।