বিজেপির বৈঠকে লকেটের কড়া প্রশ্নবাণে জর্জরিত গেরুয়া শিবিরের “ভোট পরিচালক” গোষ্ঠী

0
1

একুশের বিধানসভা ভোটের পর থেকে বাংলায় একের পর এক ভোটে ভরাডুবি হয়েছে বিজেপির। উপনির্বাচন হোক কিংবা পুরভোট, রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল সুলভ কোনও ফলাফলের ধারে কাছ দিয়ে যায়নি গেরুয়া শিবির। সর্বশেষ ১০৮টি পৌরসভা ভোটেও চরম বিপর্যয় ঘটেছে। এবং বাংলার বুকে এমন করুণ পরিণতির ময়নাতদন্ত করতে শনিবার ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে এক বিশেষ সাংগঠনিক বৈঠকের আয়োজন করেছিল রাজ্য বিজেপি।

বৈঠকে রাজ্য নেতৃত্বের ক্ষমতাসীন শিবিরের একটি অংশ সন্ত্রাস, রিগিং, ছাপ্পার তত্ত্ব খাড়া করে নিজেদের অপদার্থতা আড়ালের চেষ্টা করলেও অন্য অংশের নেতারা বাস্তব ছবি তুলে ধরে সেই তত্ত্বকে নস্যাৎ করে।

এদিন মূলত সাংসদ তথা রাজ্য বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক লকেট চট্টোপাধ্যায় শেষ কয়েকটি নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা ছিলেন, সেইসব নেতাদের কার্যত তুলোধনা করেন। এবং ভোটে ভরাডুবির কারণ হিসেবে নিজের অবস্থানে দাঁড়িয়ে অহেতুক তৃণমূল বিরোধিতা নয়, জোরের সঙ্গে “আত্মবিশ্লেষণ” ও “আত্মসমালোচনার” কথা বলেন। লকেটের সুরেই এদিন গলা মেলান বিজেপির একাধিক বিধায়ক ও কার্যকর্তা। লকেট চট্টোপাধ্যায় একের পর এক ব্যর্থতার উদাহরণ তুলে ধরে রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তীকে তুলোধনা করেন।

এদিন তাঁর বক্তব্যের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত লকেট চট্টোপাধ্যায় সন্ত্রাস, ছাপ্পার তত্ত্ব উড়িয়ে যাঁদের অপদর্থতায় ভরাডুবি তাঁদের নিশানা করেন। বর্তমান বিজেপি দলটির মধ্যে না আছে পরিকল্পনা, না আছে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা। বিধানসভা ভোটে সাংসদদের দাঁড় করাচ্ছে, পুরভোটে বিধায়কের টিকিট দিচ্ছে, এবং সব ক্ষেত্রেই সুপার ফ্লপ। যাঁরা বিধানসভা ভোটে পরাজয়ের গ্লানি ধুয়ে ফেলতে “৩ থেকে ৭৭” হয়েছি বলে বুক ফুলিয়ে ছিল, আজ পুরসভায় শূন্য হওয়ার পর তাঁরা কোন যুক্তি খাড়া করবেন? সন্ত্রাস আর ছাপ্পার কথা বলে হারের অজুহাত কি খাড়া করা হচ্ছে না? এদিন এমন একাধিক প্রশ্ন ওঠে বৈঠক থেকে।

যে জায়গা থেকে দাঁড়িয়ে শুধু ছাপ্পা আর সন্ত্রাসের তত্ত্ব খাড়া করে গো-হারের কারণকে দেখাতে চাইছে সুকান্ত মজুমদার শিবির, ঠিক সেই জায়গা থেকে দলের নিচুতলার সংগঠনের ভেঙে পড়ার অবস্থাকে তুলে ধরেন লকেট সহ অন্যান্যরা।

সর্বশেষ ১০৮ পুরভোটের ফলাফল বিশ্লেষণ করে ছবিটা আরও স্পষ্ট করার চেষ্টা করেন লকেট চট্টোপাধ্যায়রা। গণনার শেষে বিজেপির ঝুলি শূন্য। খাতায়-কলমে প্রধান বিরোধী দল হয়েও একটি পুরসভারও দখল পায়নি গেরুয়া শিবির। দাঁত ফোটানো তো দূরের কথা কোথাও আঁচড় পর্যন্ত কাটতে পারেনি বঙ্গ বিজেপি। রাজ্যে ২২৭৪ ওয়ার্ডের মধ্যে বিজেপি জিতেছে মাত্র ৬৩ টিতে।

অন্যদিকে, একুশের বিধানসভা ভোটের পর উপনির্বাচন ও পুরভোট একের পর এক ভোটে দলের গ্রাফ যেভাবে নামছে নেমেছে, সেই জায়গা থেকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, সুকান্ত মজুমদার, দিলীপ ঘোষ, অর্জুন সিং, অগ্নিমিত্রা পালরা দলের ফলাফল কী হতে পারে, তা নিয়ে ভুলে ভরা রিপোর্ট দিয়েছে বলেও অভিযোগ ওঠে। এই রিপোর্টের কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। ফলে বাস্তবের সঙ্গে তার কোনও মিলও নেই বলেও বৈঠক থেকে অভিযোগ ওঠে।

এর আগে একুশের ভোটের সময় থেকেই ফল নিয়ে ও সংগঠন নিয়ে আগাম যে রিপোর্ট বঙ্গ বিজেপি নেতারা দিল্লিকে দিয়েছেন তা বারে বারে ভুল প্রমাণিত হচ্ছে। প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, শুভেন্দু অধিকারীর মতো নেতারা যতই সন্ত্রাসের কথা বলুন, নিজের বুথ-ওয়ার্ডে কী করে বিজেপি প্রার্থীরা হারছেন? যে নেতারা নিজের বুথ, পার্ট সামলাতে পারেন না, সেই নেতারা রাজ্য সামলাবেন কী করে? শুভেন্দুর মতো একই কথা প্রযোজ্য দিলীপ ঘোষ ও সুকান্ত মজুমদারের ক্ষেত্রেও। যাঁরা বাংলার মানুষের মন বুঝতে শুধু ব্যর্থ নয়, নিজেদের দলের নিচুতলার কর্মীদেরও উদ্বুদ্ধ করার ক্ষেত্রে ডাহা ফেল। আগামিদিনে যদি এই ব্যর্থ নেতৃত্বের উপর ভরসা করে গেরুয়া শিবির যদি সামনের দিকে এগোতে চায়, তাহলে বিজেপি ফের মুখ থুবড়ে পড়বে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

ফলে বর্তমান রাজ্য নেতৃত্বের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী যদি এখনও আত্মসমালোচনা না করে হারের অজুহাত হিসেবে শাসক দলের উপর লাগাতার দোষারোপ করতে থাকে, এই বাংলার বুকে অচিরেই বিজেপি জীবাশ্ম-এ পরিণত হবে বলেই দাবি করেন বিদ্রোহীরা।

এদিন বৈঠকে যোগ দেননি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে। যা নিয়ে শোরগোল শুরু হয় বিজেপির অন্দরেই। দলের এক শীর্ষ নেতা বিষয়টিকে আড়াল করতে জানান, শুভেন্দুর নাকি আচমকা ব্যক্তিগত কাজ পড়ে যাওয়ায় তিনি আসতে পারেননি।

আরও পড়ুন- জেলেনস্কির প্ররোচনায় নিউক্লিয়ার প্লান্টে হামলা রাশিয়ার, অভিযোগ ইউক্রেনের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর