অস্ত্রপচারের সময় রক্তচাপের ওঠানামা যেন ‘জোয়ার ভাটা’, রোগ সারালেন কলকাতার চিকিৎসকরা

0
2

এ যেন রক্তচাপের ‘জোয়ার ভাটা’। অস্ত্রোপচারের সময় ঘনঘন রক্তচাপ ওঠানামা করায় কার্যত চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন উত্তরপ্রদেশের চিকিৎসকরা। কী করবেন তাঁরা বুঝেই উঠতে পারছিলেননা তাঁরা। অস্ত্রোপচারের সময় ঘনঘন রক্তচাপ ওঠানামার ব্যারাম সারিয়ে দিলেন কলকাতার চিকিৎসকরা।

সম্প্রতি মনোজ ঝার (Manoj Jha) শরীরে ডেঙ্গুর সংক্রমণ মেলে। তাঁর বয়স ৩৯ বছর। মনোজ ডেঙ্গু সংক্রমিত হলেও উপসর্গের সঙ্গে একেবারেই মিল ছিল না অসুখের গতি। ভাইরাল এ অসুখে রক্তচাপ কমে যাওয়াই দস্তুর। তবে মনোজের শরীরে রক্তচাপের ওঠানামা দেখে একরকম বিস্মিত হন চিকিৎসকরা। কখনও ৩১০/২৪০ তো আবার কখনও ৭০/৪০। কোনো সময় স্থির থাকছে না। প্লেটলেট সংখ্যাও কম। এরপর মনোজ (Manoj Jha) নিউ আলিপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন।  সেখানকার চিকিৎসকরা জানান, “ডেঙ্গু হেমারেজিক ফিভারে তো এমনটা হয় না।” তারপরই সেখান থেকে রোগীকে নিয়ে আসা হয় বাইপাসের ধারের এক হাসপাতালে। শুরু হয় পরীক্ষা নিরীক্ষা। চিকিৎসক সুমন মিত্র রোগীকে পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু করেন। একাধিক রক্তপরীক্ষা, প্রস্রাব পরীক্ষা, তলপেটের আল্ট্রাসাউন্ড করে দেখা যায় মনোজের ফিওক্রোমোসাইটোমা হয়েছে।

আরও পড়ুন: নিজেদের চেষ্টায় ফিরেছি: মন্ত্রীর আবেদনে ‘মোদি জিন্দাবাদ’ বললেন না ইউক্রেন ফেরতরা

কী এই ফিওক্রোমোসাইটোমা?

চিকিৎসকরা জানান, ফিওক্রোমোসাইটোমা আদতে কিডনির উপর অবস্থিত অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির বিশেষ টিউমার। চিকিৎসক ধৃতিমান মৈত্র বলেন, “১০০ জনের শরীরে ফিওক্রোমোসাইটোমা হলেও সাধারণত ৯০ জনের একটি অ্যাড্রিনাল গ্রন্থিতে টিউমার দেখা যায়। দু’টি অ্যাড্রিনাল গ্রন্থিতেই টিউমার অত্যন্ত বিরল। অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি একটি অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি যা অ্যাড্রেনালিন, অ্যালডোস্টেরন ও কর্টিসল-সহ নানাবিধ হরমোন তৈরি করে। সাধারণত দুঃখ, ভয়, মানসিক চাপে অ্যাড্রিনালিন হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। আবার বলা যায়, অ্যাড্রিনালিন হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয় রক্তচাপ। টিউমারের চাপে কোনও মানসিক চাপ না নিয়েও তাই মনোজ ঝা-এর রক্তচাপ ওঠানামা করছিল। ৬৮ গ্যালিয়াম ডোটানক পেট সিটি স্ক্যান করা হয় রোগীর। দেখা যায় বাইল্যাটেরাল ফিওক্রোমোসাইটোমা।”

এরপর চিকিৎসক ধৃতিমান মৈত্রর তত্ত্বাবধানেই হয় অস্ত্রপচার। অস্ত্রোপচারে সাহায্য করেন চিকিৎসক হেমাভ সাহা, চিকিৎসক অন্তরীপ ভট্টাচার্য। সম্পূর্ণ অস্ত্রোপচার করতে সময় লাগে ৩ ঘণ্টার মতো। চিকিৎসক মৈত্র জানান,”এ অস্ত্রোপচার সহজ নয়। অস্ত্রোপচারের সময় রক্তচাপ পৌঁছে গিয়েছিল ৩১০/২৪০-এ। পরক্ষণেই নেমে হয়েছিল ৭০/৪০। বিশেষ পদ্ধতিতে তা নিয়ন্ত্রণে রেখে ছিলেন চিকিৎসকরা। বাদ দেওয়া হয় টিউমার দু’টি।”