NB Result: ঘাসফুল ঝড়ে উত্তরবঙ্গে উড়ে গেল গেরুয়া

0
1

উত্তরবঙ্গ তাঁদের শক্তঘাঁটি বলে দাবি ছিল বিজেপির। বিগত কয়েকটি লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে উত্তরই আশা জুগিয়েছে পদ্মশিবিরের বাংলা জয়ের স্বপ্নে। এমনকী, একুশের নির্বাচনে যখন রাজ্যে তৃণমূলের (TMC) বিপুল জয়, তখনে কিছুটা ভালো অবস্থায় উত্তরে ছিল বিজেপি (BJP)। কিন্তু ক্যালেন্ডারের পাতা ওল্টাতেও উল্টে গেল গেরুয়াও। বাইশের পুর নির্বাচনে উত্তরবঙ্গেও ধুয়ে-মুছে সাফ বিজেপি। বুধবার, প্রকাশিত পুরভোটের ফল অনুযায়ী, গত লোকসভা ভোটে উত্তরবঙ্গে সবচেয়ে বেশি আসন ও তারপরে ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটেও বেশ কিচু আসন দখল করলেও আদতে উত্তরবঙ্গের আমজনতা যে বিজেপির উপরে এতটুকুও ভরসা করতে পারছে না সেটাই স্পষ্ট বুঝিয়ে দিল পুরভোট।

শুধু তাই নয়, যে দার্জিলিঙে (Darjeeling) বিমল গুরুং, অনীত থাপাদের হাত ধরে বিজেপি লোকসভায় বিশাল জয় হাসিল করেছিল, সেখানেও বিজেপির হাতে শুধুই পেন্সিল। খাতায় শূন্য! বরং, আড়াই মাস আগে দল তৈরি করে গোটা দার্জিলিং পুরসভা দখল করে ফেলেছেন গ্লেনারিজ বেকারিজ ও রেস্তোরাঁর কর্ণধার অজয় এডওয়ার্ড।

আরও পড়ুন:Actress Srabanti : চেন -বাঁধা বেজি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি, বিপাকে শ্রাবন্তী

কোচবিহার (Cochbehar) দিয়ে শুরু করা যাক। সেখানে গত লোকসভা ভোটে জিতে কেন্দ্রে মন্ত্রী হয়েছেন নিশীথ প্রামাণিক। বেশ কয়েকজন MLA হয়েছেন গত ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে। সেই জেলায় দিনহাটায় বিজেপি প্রার্থীই দিতে পারেনি। বিনা ভোটেই দিনহাটা পুরসভা তৃণমূলের দখলে গিয়েছে। কোচবিহার পুরসভার ফল বেরোনোর পরে দেখা গিয়েছে সেখানে বিজেপি মুছে গিয়েছে। কোচবিহার ছাড়াও হলদিবাড়ি, মেখলিগঞ্জ, তুফানগঞ্জ, মাথাভাঙায় তৃণমূল বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। বলতে গেলে কোচবিহারের সব পুরসভা এখন বিরোধী শূন্য হয়ে গিয়েছে।

পাশের জেলা আলিপুরদুয়ারেও বিজেপি প্রায় হাওয়া হয়ে গিয়েছে। সেখানে বিজেপি বিধানসভা ভোটে জিতেছিল কয়েকটি আসন। কিন্তু আলিপুরদুয়ার পুরভোটে বিজেপি সেখানে নিশ্চিহ্ন। ওই জেলার ফালাকাটাতেও একই ছবি।

গা ঘেঁষে থাকা জলপাইগুড়িতে (Jalpaiguri) বিজেপিকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে পুর-জনতা। সেখানে জলপাইগুড়ি পুরসভায় তৃমমূলের ধারেকাছে কেউ নেই। ময়নাগুড়িতেও তৃণমূল একাই একশো যেন। মাল পুরসভাতেও তৃণমূলের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ের কাছে পর্যুদস্ত বিজেপি।

মালদহের (Maldah) ইংরেজবাজার পুরসভাতেও তৃণমূল বিপুলভাবে জয়ী। সবুজ ঝড়ে উড়ে গিয়োছে বিজেপি। সেখানে কোথাও একটিও আসন মেলেনি তাঁদের। সেখানে ২৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৫টি তৃণমূলের দখলে। ৩টি বিজেপি, ১টি নির্দল। পুরাতন মালদহ পুরসভা ২০টি ওএয়ার্ডে ১৭টি তৃণমূলের দখলে গিয়েছে। ২টি বিজেপি ও ১টি নির্দলের দখলে।

বিজেপির আশার আলো অনেকটাই বেড়েছিল দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাটে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বালুরঘাটের বাসিন্দা। তাঁকে সামনে রেখে অনেক স্বপ্ন দেখেছিল বিজেপি। ভোটের ফল বেরোলে দেখা গেল বিজেপির প্রার্থী সুকান্তবাবুর ওয়ার্ডে অবধি খাতা খুলতে ব্যর্থ। সেখানে ২৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে তৃণমূল ২৩টিতে জয়ী। ২ টি বামেরা দখল করেছে।

২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে উত্তরবঙ্গে সাতটি আসন পাওয়ার পরে বিজেপির নেতারা পাহাড় থেকেই রাজ্য দখলের স্বপ্নে মশগুল ছিলেন। গত বিধানসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গের কোচবিহার, দার্জিলিং, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়িতে বিজেপি তুলনামূলক বেশি আসন পায়। কিন্তু মালদহ ও দুই দিনাজপুরে বিজেপি প্রায় প্রত্যাখাত হয় সে যাত্রায়। সেই শুরু। বিজেপির উপরে উত্তরের আমজনতা যে ভরসা করতে পারছেন না তা এবার দিনের আলোর মতো স্পষ্ট করে দিয়েছেন।

সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল দার্জিলিংয়ের ফলাফল। যেখানে বিমল গুরুংদের সামনে রেখে বিজেপি লাগাতার লোকসভার আসন দখল করেছে। সেই বিমল গুরুং আগেই তৃমমূলকে সমর্থন করেছেন। এবার পাহাড়ে দার্জিলিং পুরভোটে বিমল গুরুংয়ের দল এককভাবে লড়েছে। অনীত থাপার দলও লড়েছে। বিনয় তামাং তৃণমূলে যোগ দিয়ে লড়েছেন। সেখানে সকলকে টপকে পাহাড়ে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের সূচনা করেছে হামরো পার্টি। যে দল গত নভেম্বরে গঠন করেছেন অজয় এডওয়ার্ড। সব দলকে ছাপিয়ে অজয়ের দল দার্জিলিং পুরসভার ২৫ আসনের মধ্য ১৮টি দখল করেছে। তৃণমূল পেয়েছে ২টি, অনীতের দল পেয়েছে ৪টি। সব মিলিয়ে উত্তরে এখনও গেরুয়া মুছে সবুজ দাপট।