বাবার জন্মদিনে খোলা চিঠি লিখলেন অভিনেত্রী ঊষশী চক্রবর্তী

0
2

ঊষশী চক্রবর্তী

আজ ২২ ফেব্রুয়ারি। বাবার জন্মদিন। অনেক দিন ধরে কয়েকটা কথা বলব ভাবছিলাম। আজ বাবার জন্মদিন উপলক্ষে বলেই দিই।বামপন্থী পরিবারে বড় হওয়ার সুবাদে এবং প্রায় সাত বছর বামপন্থী রাজনীতি ও লিঙ্গরাজনীতি নিয়ে গবেষণা করার সুবাদে (এম ফিল ও পি এইচডি করার সূত্রে) আমি এটাই বুঝেছি ও শিখেছি যে মেয়েদের পোশাক নিয়ে অযথা খাপ পঞ্চায়েত খোলা আর যাই হোক বাম রাজনৈতিক ঘরানার সংস্কৃতির মধ্যে পড়েনা।

আরও পড়ুন:Taslima Nasreen: ফেসবুক এবার বয়কট করল বাংলাদেশি লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে  

পঞ্চায়েত খোলা আর যাই হোক বাম রাজনৈতিক ঘরানার সংস্কৃতির মধ্যে পড়েনা।

আমার বাবা কে যাঁরা ঘনিষ্ট ভাবে চিনতেন তাঁরা অবশ্যি জানেন যে উনি কতটা উদার মনের মানুষ ছিলেন আর এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের সাথে কতটা সহজভাবে মিশতে পারেন। সে কারণেই বোধহয় ওঁর বন্ধু তালিকা ছিল দীর্ঘ এবং তাঁদের মধ্যে অনেকের বয়স এমনকি আমার চেয়েও কম ছিল। আমার বাবা কোনোদিন আমার জীবনকে কোনোভাবে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেন নি এবং আমি কি পোষাক পরব এই নিয়ে কোনও মতামত ও দেন নি। তাই বামপন্থী পরিবারের মেয়েরা হাফপ্যান্ট পরতে পারবেন না বা সমুদ্র স্নানে গিয়ে সাঁতারের পোষাক পরতে পারবেন না এ-হেন হাসির কথা আমার বাবা তো দূরস্থান কোন আন্তর্জাতিক বা জাতীয় বামপন্থার বইতেও আমি কস্মিনকালে শুনিনি বা পড়িনি।

বামপন্থা সমাজতন্ত্রের কথা বলে, খেটে খাওয়া মানুষের দাবি আদায়ের কথা বলে, লিঙ্গ সাম্যের কথা বলে এবং সমাজের রক্তচক্ষু বা অঙ্গুলি হেলনকে তোয়াক্কা না করে মেয়েদের নিজের শর্তে বেঁচে থাকার কথা বলে এবং আমিও আমার বাবার কাছে তাই-ই শিখেছি।শিখেছি স্বাধীনভাবে পোশাক নির্বাচন করতে এবং রবীন্দ্রজয়ন্তীতে,শিক্ষাঙ্গনে, আইন সভায় বা সমুদ্র তটে পরিবেশের সাথে মানানসই ভাবে সাজতে।আর হ্যাঁ,সেই সঙ্গে ঘৃণা করতে শিখেছি সেই সব সিউডো বামপন্থার ধবজাধারীদের যাঁরা নিজেদের ভিতরে পিতৃতন্ত্রের বিজ বহন করে মেয়েদের চালচলন পষাক আষাক নিয়ে অযাচিত মন্তব্য করে যেখানে সেখানে খাপ পঞ্চায়েত খোলেন। এই জাতীয় চিন্তাভাবনা দক্ষিণপন্থীদের শোভা পায়, বামপন্থীদের নয়।

ফ্যাসিজম নিপাত যাক। পিতৃতন্ত্র দূর হটুক। পাড়ায় পাড়ায় গ্রামে গ্রামে কলে কারখানায় খেটে খাওটা মানুষদের দুর্ভেদ্য ব্যরিকেড সমস্ত ধরণের আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলুক, তোমার জন্মদিনে বাবা এর থেকে বেশী আর কি-ই বা চাইতে পারি।

আমার মধ্যে থেকো। স্পষ্ট কথা স্পষ্ট করে বলার শক্তি দিও।