গোয়েন্দা গোয়েন্দা গন্ধ…

0
2

বছর শুরুতেই কোভিড বিধির কারণে সিনেমামোদী মানুষ খানিক ধাক্কা খেলেও একই সঙ্গে আশাবাদী আগের মতো এ যুদ্ধেও জয়ী হবে সকলে সচেতনতা ও ধৈর্য দিয়ে। কারণ সোজা, যে সয়, সে রয়। আর সিনেমা থাকবেই। ২০২২ যেমন শুরুতেই জানান দিয়েছে এ বছর দর্শক তাঁদের দুই প্রিয় গোয়েন্দার গল্প দেখতে পাবেন পর্দায়। ফেলুদা ও সোনাদা। দর্শক ধৈর্য ধরতে রাজি। বিস্তারিত জানাচ্ছেন প্রীতিকণা পালরায়।

আরও পড়ুনসোশ্যাল মিডিয়ায় বিজেপি আইটি সেলের নয়া হাতিয়ার ‘Tek Fog’, পর্দা ফাঁস!

একজন অভিজ্ঞ, ক্ষুরধার, তীক্ষ্ণধী ও কালজয়ী গোয়েন্দা দাদা, অন্যজন তুলনায় নবীন, সরাসরি নিজেকে গোয়েন্দা বলে দাবিও করে না, কিন্তু বুদ্ধি-বৃত্তি, ভাবনা, আচরণ ও ব্যবহারে মন কেড়েছে গত কয়েক বছরে। দুই প্রিয় পরিচালক যখন সুখবর দিলেন, কাজ শুরু করতে চলেছেন তাঁদের গোয়েন্দা দফতর নিয়ে সকলে তরতাজা হয়ে উঠেছিলেন শুনেই। কে না জানে বাঙালি, রহস্য আর অ্যাডভেঞ্চারের গন্ধ পেলে সত্যিই চনমনিয়ে ওঠে। কারণ তার সাহিত্য ভাণ্ডারে অফুরন্ত গোয়েন্দার স্টক, যাদের সে গোগ্রাসে গেলে কিন্তু সামান্য কয়েকজনকেই চোখের সামনে দেখতে পায়, তাও আবার লম্বা ব্যবধানে। প্রথমে পরিচালক সন্দীপ রায় জানিয়েছেন, ২০২২-এই বড় পর্দায় মুক্তি পাবে সত্যজিৎ রায়ের কাহিনি অবলম্বনে ‘হত্যাপুরী’। প্রযোজনা সংস্থা এসভিএফ-এর তরফেও এই ঘোষণা করে জানানো হয়েছে, এবার শুধু ফেলুদা আর তোপসে নয়, সঙ্গী হিসেবে দেখা যাবে জটায়ুকেও। অর্থাৎ সকলের প্রিয় থ্রি মাস্কেটিয়ার্স একসঙ্গে। প্রায় এক দশক পর।


দ্বিতীয়টির পরিচালক ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়। নাম ‘কর্ণসুবর্ণের গুপ্তধন’। ২০২১- এ ‘গোলন্দাজ’-এর সাফল্য তাঁকে আরও উজ্জীবিত করবে সন্দেহ নেই। আর যে ছবির হাত ধরে ২০১৮- য় তাঁর বাংলা সিনেমা জগতে পা রাখা ও দর্শকের মনযোগ কেড়ে নেওয়া সেই ‘গুপ্তধনের সন্ধানে’ ও ২০১৯-এ পরবর্তী ছবি ‘দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন’ দুটি ছবিই ছোট-বড় সব বয়সি দর্শককে মুগ্ধ করেছিল। ধ্রুব্রর ইতিহাসপ্রীতির কথা এতদিনে দর্শকেরা জেনে গেছেন। পরপর প্রতিটা ছবিতেই গল্পের মোড়কে বাংলার ইতিহাস-কৃষ্টি-সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে সচেষ্ট থেকেছেন ধ্রুব। ‘কর্ণসুবর্ণের গুপ্তধন’ও তার ব্যতিক্রম হবে না নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে। অর্থাৎ এবার ইতিহাসের অধ্যাপক সোনাদার অ্যাডভেঞ্চারের নেপথ্যে থাকবে কর্ণসুবর্ণ ও তার গৌরবময় অধ্যায়। শুধু তো সোনাদা নয়, সঙ্গী হবে আবির আর ঝিনুকও। মূল চরিত্রের কাস্ট এই গুপ্তধন ফ্র্যাঞ্চাইজির তৃতীয় ছবিতেও এক থাকছে, বলাই বাহুল্য। আবির চট্টোপাধ্যায়, অর্জুন চক্রবর্তী ও ইশা সাহা।

এই জায়গাটিতে অবশ্য ‘হত্যাপুরী’ সম্পূর্ণ বিপরীত স্থানে। কারণ শ্রী প্রদোষ চন্দ্র মিত্র ওরফে ফেলুদা কিংবা তাঁর সহকারী তপেশ রঞ্জন বা রহস্য-রোমাঞ্চ সিরিজ-লেখক লালমোহন গাঙ্গুলি তথা জটায়ু কে হবেন তা নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, জিতু কামাল এরকম কিছু নাম নিয়ে চর্চা চললেও পরিচালক ও প্রযোজকের তরফে মুখে কুলুপ আঁটা হয়েছে। কাজটা কঠিন নিঃসন্দেহে। কারণ ফেলু মিত্তির নিয়ে বাঙালির অবসেশনের কথা সবাই জানে। একই সঙ্গে তোপসে বা জটায়ু’র প্রতি তাদের ভালবাসাও সুবিদিত।

তবে কাস্টিং ছাড়া কাহিনির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের দিক থেকেও ছবি দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। ‘কর্ণসুবর্ণ’ নিয়ে ধ্রুব যেমন বলেছেন, “আমাদের ইতিহাসের অনেক ঘটনা আছে যেগুলি নিয়ে তেমন চর্চা হয়নি। গুটিকয়েক বহুলচর্চিত ঘটনাই তো শুধু বাংলার মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি অঞ্চলের সার্বিক ইতিহাস হতে পারে না। কর্ণসুবর্ণ তেমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। বাংলার প্রথম স্বাধীন শাসক শশাঙ্কের রাজধানী ছিল কর্ণসুবর্ণ। যার চলতি নাম ছিল ‘কানাসোনা’। মুর্শিদাবাদ অঞ্চলে অবস্থিত ছিল। এই সময়ের অজানা ইতিহাস জানলে মানুষ যেমন চমকে যাবে, তেমনই উৎসাহীও হবে। প্রথম দুটি গল্পের পর আমি তাই একটু হাত খুলে গুপ্তধন সিরিজের তিন নম্বর গল্পটিকে এমনকিছু ঘটনা দিয়ে সাজাতে চাইছি যা দেখে মানুষ শুধু একটি অ্যাডভেঞ্চারের গল্পের স্বাদই শুধু পাবেন তা নয়, মুগ্ধ হয়ে ভাববেন, আমাদের বাংলা এরকমও ছিল!” আরও একটা ব্যাপারে এতদিনে আত্মবিশ্বাসী হয়ে গেছেন পরিচালক যে, তাঁর কাহিনির প্রোটাগনিস্ট তিনজনকে দর্শক পছন্দ করে ফেলেছেন। এমনকী আবিরকে ফেলুদা, ব্যোমকেশ দুটি চরিত্রে দেখা সত্ত্বেও সোনাদা ভাবতে দর্শকের কোনও কষ্ট হয়নি। ধ্রুব জানালেন, “এর মূল কারণ তিনটি চরিত্রের বিশ্বাসযোগ্য বাঙালিয়ানা। আর এরা কেউই টিপিক্যাল গোয়েন্দা নয়, গোয়েন্দাগিরির উদ্দেশ্যেও কোথায় যায় না। নিছকই বেড়াতে গিয়ে জড়িয়ে পড়ে কোনও অ্যাডভেঞ্চারের সঙ্গে। দর্শক এই কারণেই হয়তো সহজে আপন করে নিতে পেরেছে।” ছবির সঙ্গীত পরিচালনা করছেন বিক্রম ঘোষ। আপাতত ছবির চিত্রনাট্য লেখার কাজ করছেন ধ্রুব।
চিত্রনাট্য লেখার কাজ করছেন সন্দীপ রায়ও। ‘হত্যাপুরী’র কাহিনির পেক্ষাপট পুরী। পুরীর সমুদ্র সৈকতে প্রথমে এক অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির লাশ খুঁজে পাওয়া যায়। আর এর সূত্রেই ফেলুদা পান নতুন রহস্যের সন্ধান। জড়িয়ে যান রহস্য উন্মোচনে। আর উঠে আসে একের পর এক রোমহর্ষক ঘটনা। মাঝে আরও একটি খুনের ঘটনা ঘটে। ফেলুদা নিজেও টার্গেট হন। সব মিলিয়ে জমজমাট গল্প ‘হত্যাপুরী’। এবার ছবির চিত্রনাট্য ও পরিচালনার পাশাপাশি সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্বও নিয়েছেন সন্দীপ রায় নিজে। সাজসজ্জার দায়িত্বে ললিতা রায় এবং চিত্রগ্রহণ সৌমিক হালদারের। কোভিড পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেই ফের হইহই করে শুরু হয়ে যাবে ছবির কাজ।