সায়ন বসু মল্লিক: বর্তমানে ওলা-উবেরে চড়লে আপনাকে কি কি “বিপদ”এর সম্মুখীন হতেই হবে? “হতে পারে” শব্দ যুগলের পরিবর্তে “হতেই হবে” কেন লিখলাম সেটা শেষে গিয়ে বুঝবেন। বিশেষ করে আপনি যদি বছর দুয়েক আগে অ্যাপভিত্তিক ক্যাবগুলির পরিষেবা নিয়ে থাকেন এবং বর্তমানে আবার ক্যাবে যাতায়াত করতে চান, তবে এই বিষয়গুলো অবশ্যই মাথায় রাখবেন।

সর্বপ্রথম আপনার কিছু ত্যাগ করার পালা। আপনি এসির ভাড়া দেবেন কিন্তু এসি চালাবার কথা ড্রাইভারকে মুখ ফুটে বলার কথা স্বপ্নেও ভাববেন না। দ্বিতীয়ত, ধরুন পেটিএম বা গুগল পে’র মাধ্যমে পেমেন্ট করলে আপনি বেশ অনেকটা ডিসকাউন্ট পাবেন, তবুও আপনাকে ক্যাশের মাধ্যমেই পুরো টাকা মেটাতে হবে। তৃতীয়ত, আপনি হিন্দি না জানলে ক্যাবে চড়ার আগে আপনাকে ভাষাটা রপ্ত করতে হবে। কারণ দশজনের মধ্যে আটজন ড্রাইভারই হবে হিন্দিভাষী। কেননা বাংলার বুকে ওরা বাংলা বলতে বাধ্য নয়, আপনি হিন্দি বলতে বাধ্য। এবং ড্রাইভার বেআইনিভাবে আপনাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করবে যে কত ভাড়া দেখাচ্ছে এবং কোথায় যাবেন, এবং ভদ্রভাবে আপনি সেই উত্তরও দিতে বাধ্য।
আরও পড়ুন:WOUNDS: টালিগঞ্জের ‘চায়ওয়ালা’-য় ইন্দ্রনীল গুপ্তর চিত্র প্রদর্শনীতে পুরনো কলকাতা
এই ত্যাগগুলো করে ফেলেছেন? এই ত্যাগগুলো এখন অতি স্বাভাবিক, এগুলো নিয়ে কোনো অভিযোগই নেই। এবার ধীরেধীরে বিপদের কথায় আসি।
১। আপনি যদি মনে করেন কোথাও যাবার খুব তাড়া রয়েছে কিংবা কোনো পেশেন্টকে এমারজেন্সির ভিত্তিতে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে, এবং আপনি ক্যাব বুক করবেন এবং চট-জলদি পৌঁছে যাবেন, তাহলে আপনার কাজও চৌপাট হতে পারে কিংবা পেশেন্টের ক্ষতিও হতে পারে। কম করে ঘন্টাখানেক আগে ক্যাব বুক করা শুরু করবেন। কারণ অন্তত দশজন ড্রাইভার ট্রিপ ক্যানসেল করবেই করবে।
২। প্রথমে কয়েকজন ড্রাইভার আপনার গন্তব্যস্থলের নাম শুনেই ক্যানসেল করে দেবে। বাকী কয়েকজন টাকার অ্যামাউন্ট শুনে ক্যানসেল করবে। তারপর তৃতীয় দল আপনাকে বলবে বেশি টাকা দিতে। অ্যাপে পাঁচশ দেখালে ওরা সাতশ চাইবে। কয়েকজন “আসছি” বলে দশ পনেরো মিনিট অপেক্ষা করাবার পরে নিজেরাই ক্যানসেল করে দেবে। আপনি হতাশভাবে মাথা চাপড়াবেন, ড্রাইভাররা মজা নেবে।
৩। আপনি ধরুন সবকিছুতে রাজী হয়ে কোনোরকমে গাড়ী পেয়ে গেছেন, নব্বই শতাংশ ক্ষেত্রে ধরে নিন ড্রাইভার ইচ্ছাকৃত ঘুরপথে নিয়ে যাবে যাতে ভাড়া ডাবল হয়ে যায়। আপনি সেই ভাড়াও ধরুণ ক্যাশে পেমেন্ট করেও দিয়েছেন। হয়ত পরবর্তী রাইডে গিয়ে দেখবেন সেই ভাড়া মেটানোই হয়নি, দ্বিতীয়বার পুনরায় আগের ভাড়াটাই দিতে হবে। আর যদি এসবের চক্করে বারবার রাইড ক্যানসেল হতে থাকে তবে ক্যানসেলেশন চার্জটাও কোম্পানি আপনার থেকেই কাটবে। সবই মায়া।
৪। সবচেয়ে বিপজ্জনক এটা, বিশেষ করে মেয়েদের জন্য। ড্রাইভার এসে আপনাকে বলবে আপনি রাইড ক্যানসেল করে দিন, আপনাকে অফলাইনে নিয়ে যাবে। অর্থাৎ আপনি রাজী হলে ড্রাইভার আপনাকে কোথায় নিয়ে যাবে সেটা ওলা-উবের কোম্পানি ট্র্যাক করতে পারবেনা। সে আপনাকে যেখানে ইচ্ছে নিয়ে যেতে পারে, যা খুশি করতে পারে। এই বিষয়ে নিজেরই একটা বাজে অভিজ্ঞতা হয়েছিল। অনেকসময় বাধ্য হয়ে অফলাইনে যেতেই হয়। কিন্তু একবার রাত দুটোর সময় ওলা বাইক বুক করেছিলাম, দুশ’র জায়গায় ড্রাইভার পাঁচশ চেয়েছিল, সেটাও দিতে রাজী হয়েছিলাম। বাইক যখন সামনে এল, তখন দেখি ড্রাইভার নিজেই রাইড ক্যানসেল করে অফলাইনে যেতে চাইছে। আমি স্বাভাবিকভাবে আপত্তি জানাই। ড্রাইভার তখন বাইক থেকে নেমে এসে হাতাহাতি করতে এগিয়ে আসে। কাছাকাছি এক ট্রাফিক সার্জেন ছিল, আমি ডাক দেওয়ায় ড্রাইভার বাইক নিয়ে পালায়। আমি সেদিন থেকে ভাবছি একটাই কথা ভাবছি,চ এই জায়গায় এত রাতে একটা একাকী মেয়ে থাকলে, সে কিভাবে এই পরিস্থিতি সামাল দিত।
বছর দুয়েক আগেও ওলা-উবেরের ভীষণ সুন্দর পরিষেবা ছিল, কিন্তু এখন নরকের চেয়েও বেশি অসহনীয়। তবে একটা আগাম ভবিষ্যৎবানী করে রাখি। ওলা-উবের কোম্পানি এখন থেকেই ড্যামেজ কন্ট্রোলে না নামলে, বছর দুয়েকের মধ্যে অন্য কোনো কোম্পানি ভালো পরিষেবা দিয়ে এই দুটো কোম্পানিকে দেউলিয়া করে দেবে। যেভাবে একসময় জিও সিম আসার জন্য এয়ারসেল কোম্পানি ব্যাঙ্করাপ্ট হয়ে গেছিল। হয়ত আম্বানিই কদিন বাদে জিও-ক্যাব খুলে বসবে। আর মানুষ স্বাভাবিকভাবে একটু সুস্থ আর সিকিওর পরিষেবা যেদিকে পাবে, সেদিকেই দৌড়াবে। আর বিজনেসের এই কম্পিটিশনের মার্কেটে খুব স্বাভাবিক বুদ্ধি দিয়ে বুঝতে পারছি, এই দুই কোম্পানির তরী ডোবার খুব বেশি দেরী নেই। শুধু প্রত্যাশামাফিক পরিষেবাসহ নতুন কোনো কোম্পানি আসুক, সেদিনই ওলা-উবেরের ‘ওম স্বাহা’… ?












































































































































