আগামী ২২ জানুয়ারি রাজ্যের চার পুরনিগমের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। তার আগে একমাত্র দল হিসেবে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস বৃহস্পতিবার রাতে একইসঙ্গে প্রতিটি পুরসভার পূর্ণাঙ্গ প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করল। এদিন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে বিকেলে কালীঘাটে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের বৈঠকে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হয়। তারপর রাত ১০টা নাগাদ শিলিগুড়ি, বিধাননগর, চন্দননগর এবং আসানসোল পুরনিগমের প্রার্থী তালিকা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে ঘাসফুল শিবির।
সকলের নজর ছিল কলকাতার উপকণ্ঠে বিধাননগর পুরসভার প্রার্থী তালিকার দিকে। কে থাকে, কে যায়, নতুন কে আসে, সেদিকেই ছিল আগ্রহ। অবশেষে অপেক্ষার অবসান। অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের সংমিশ্রণে তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হল ৪১ ওয়ার্ড বিশিষ্ট বিধাননগর পুরনিগমের। এক্ষেত্রও মহিলাদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
প্রাক্তন মেয়র সব্যসাচী দত্ত টিকিট পান কিনা, তা নিয়ে আগ্রহ ছিল তুঙ্গে। দলে ফিরে ফের তৃণমূলের টিকিট পেলেন সব্যসাচী। ৩১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে প্রার্থী হয়েছেন তিনি। ২০১৫ সালে নতুন করে বিধাননগর পুরসভার তৈরি হওয়ার পর ওই বছর অক্টোবর মাসে তৃণমূলের হয়ে লড়ে ভোটে জিতে মেয়র হয়েছিলেন সব্যসাচী। কিন্তু ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের পর তৃণমূল-সব্যসাচী দূরত্ব তৈরি হলে মেয়র পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি। পরে অমিত শাহের হাত ধরে যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে। একুশের ভোটের বিধাননগর থেকে প্রার্থীও হয়েছিলেন বিজেপির টিকিটে। এবং ভেবেছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী সুজিত বসুর কাছে। এরপরও কিছুদিন গেরুয়া শিবিরে ছিলেন তিনি। তবে একটা সময় দলে কোণঠাসা হয়ে পড়েন তিনি। এবং বেসুরো মন্তব্য করতে থাকেন বিজেপি সম্পর্কে। অবশেষে গেরুয়া শিবিরে মোহভঙ্গ তাঁর। পুজোর আগে ফের ভুল স্বীকার করে তৃণমূলে ফিরে আসেন। গত ৭ অক্টোবর বিধানসভায় তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাত ধরে ফিরহাদ হাকিমের উপস্থিতিতে যোগ দেন তৃণমূলে।
এদিকে সব্যসাচী যখন তৃণমূলের টিকিটে ফের বিধাননগর পুরভোটে লড়তে চলেছেন তখন হাহাকার বিজেপি শিবিরে। শিলিগুড়িতে পূর্ণাঙ্গ প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করলেও এখনও বিধাননগরের জন্য প্রার্থী খুঁজে পাচ্ছে না গেরুয়া শিবির।
অন্যদিকে, ২০১৫ সালে বিধাননগর পুরসভার ভোটে জয়ী হয়ে চেয়ারপার্সন হন কৃষ্ণা চক্রবর্তী। সব্যসাচী মেয়র পদ ছাড়তে কৃষ্ণার ওপরেই আস্থা রেখেছিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মেয়রের পদ সামলেছেন তিনি। হয়েছেন মুখ্য প্রশাসকও। আবারও তিনি বিধাননগর পুরভোটে নিজের ২৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকে প্রার্থী হলেন।
এদিকে রাজারহাট-নিউটাউটের বিধায়ক তাপস চট্টোপাধ্যায় বিধাননগরের বিদায়ী বোর্ডের ডেপুটি মেয়র ছিলেন। কিন্তু এবারের পুরভোটে তিনি নিজেই নাকি প্রার্থী হতে চাননি। পরিবর্তে তাঁর কন্যা আরাত্রিকা ভট্টাচার্যকে ৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে প্রার্থী করল তৃণমূল।
উল্লেখযোগ্যভাবে এবার বিধাননগর পুরনিগমের প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ গিয়েছেন বিদায়ী কাউন্সিলর কিংবদন্তি ফুটবলার শৈলেন মান্নার কন্যা নীলাঞ্জনা। চর থাকা ২১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে প্রার্থী হয়েছেন মনোরঞ্জন ঘোষ। যুবনেতা দেবরাজ চক্রবর্তী প্রার্থী হয়েছেন ৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে। বাণীব্রত বন্দোপাধ্যায় প্রার্থী হচ্ছেন ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে।