Oranges : সৌন্দর্যের সব সমাধানই কমলালেবু!

0
1

শীত মানেই চারপাশ শুধু কমলায় কমলা। রসাল আবেশে মাখামাখি। মুখে দিলে চুপচুপে মিষ্টি বা মিঠেকড়া অনুভূতির একেবারে মর্মে প্রবেশ। বাঙালি, অবাঙালি, দেশি, বিদেশি সকলের আত্মার আত্মীয় কমলাফল (Oranges)। শীত পড়তে না পড়তে তার দেখা মেলে। রসবতীর কোয়াগুলো জড়াজড়ি করে কাটিয়ে দেয় গোটা শীত। এক একটি কোয়া জীবনদায়ী। সুস্থ থাকার সব রসদ লুকিয়ে আছে তার মধ্যে। এই ফলেই প্রকৃতি উজাড় করে দিয়েছে তার সেরাটুকু। কমলালেবুর বৈজ্ঞানিক নাম সাইট্রাস রেটিকুলাটা। আদি বাড়ি সেই সূদুর চিন। আজ থেকে প্রায় চার হাজার বছরেরও আগে চিনেই প্রথম কমলালেবুর চাষ শুরু হয়েছিল। এখন গোটা পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র কমলালেবুর চাষ হয়। বিশ্বে কমলালেবু উৎপাদনে ভারতের স্থান তৃতীয়। পৃথিবী বিখ্যাত যত কমলালেবু আছে তার মধ্যে নাগপুরের কমলালেবু অন্যতম। এখানকার কমলালেবুর অপূর্ব স্বাদ আর গুণমানের জন্য নাগপুরকে কমলালেবুর শহর আখ্যা দেওয়া হয়েছে। এ যেন এক অমৃতফল।

আরও পড়ুন-Katrina Kaif-Vicky Kaushal Mehendi: রাজস্থানের সোজাত থেকে ভিকি-ক্যাটের বিয়েতে এল লক্ষ টাকার ‘জৈব মেহেন্দি’

একটা গোটা কমলালেবু (Oranges) কী কী জোগান দেয় মানবদেহে, দেখে নেওয়া যাক। একটি মাঝারি মাপের (১৪০ গ্রাম) কমলালেবুতে রয়েছে মোটামুটি তার ওজনের প্রায় ৮৬ শতাংশ জল, ৬৬ কিলো ক্যালরি, প্রোটিন ১.৩ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ১৪.৮, সুগার ১২ গ্রাম, ফাইবার ২.৮ গ্রাম, ফ্যাট ০.২, ভিটামিন সি ৯২ শতাংশ দৈনিক অনুপাতে, এছাড়া ক্যালসিয়াম ৫ শতাংশ দৈনিক অনুপাতে, পটাশিয়াম ৫ শতাংশ দৈনিক অনুপাতে, ফোলেট ৯ শতাংশ দৈনিক অনুপাতে। এছাড়াও রয়েছে ফসফরাস, ফ্ল্যাভনয়েড, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যারটিনয়েড, থায়ামিন, রাইবোফ্লোবিন, নায়াসিন, ভিটামিন ই, ভিটামিন বি, জিঙ্ক ও আরও অনেক উপাদান। আমাদের শরীরে প্রতিদিন যে পরিমাণ ভিটামিন সি প্রয়োজন তার পুরোটাই কমলালেবু (Oranges) থেকে পাওয়া যায়।

কমলালেবুর পাতলা ত্বকে রয়েছে আঁশ। এই আঁশই হল পেকটিন। যে কারণে একে ফাইবার জাতীয় খাদ্যের তালিকায় প্রথম সারিতেই রাখা হয়। সেই কারণে এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং ওজন না বাড়িয়ে পেট ভরায়। ফ্যাটের পরিমাণ খুবই কম থাকে কমলালেবুতে।

কমলালেবুতে (Oranges) রয়েছে ফোলেট যেটা বি ভিটামিন। এই বি ভিটামিন আমাদের দেহে মেটাবলিজম, মাতৃগর্ভে ভ্রূণের বিকাশ, সুস্থ গঠনে সাহায্য করে। কমলালেবুর মধ্যে থাকা ফ্ল্যাভনয়েড-এর দুটি মূল উপাদান হেসপারডিন এবং নারিনজেনিন হল অন্যতম অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। এই ফ্ল্যাভনয়েড উচ্চ রক্তচাপকে প্রশমিত করে, অ্যান্টিইনফ্লামেটরি বা প্রদাহজনিত সমস্যা প্রতিরোধ করে,রক্ত সংবাহী নালির ক্রিয়াশীলতা বৃদ্ধি করে এবং রোগপ্রতিরোধ শক্তিবৃদ্ধি করে।

কমলালেবুর (Oranges) উচ্চমাত্রার ক্যারোটিনয়েড খুব শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। এই অ্যান্টি অক্সিডেন্টের জন্য কমলালেবুর রং এত আকর্ষণীয়। এটি হার্ট ডিজিজ জনিত রিস্ক কমাতে ভীষণ কার্যকরী। গবেষণা অনুযায়ী কমলালেবুর রস শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। ব্লাড সুগার বা ডায়াবেটিসের মতো লাইফস্টাইল ডিজিজ বিশেষ করে টাইপ টু ডায়াবেটিস এবং যে কোনও ক্রনিক রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। ক্যানসার রোগে কার্যকরী কমলালেবু। এর মধ্যে থাকা ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট ক্যানসার প্রতিরোধ করে। যেমন, লাং ক্যানসার, মাউথ ক্যানসার, স্টমাক ক্যানসার, হেড এবং নেক ক্যানসার। লিউকেমিয়া বা ব্লাড ক্যানসার প্রতিরোধে কমলালেবুর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। শুধু তাই নয়, ত্বকের ক্যানসার, ব্রেস্ট ক্যানসারও প্রতিরোধ করে কমলালেবু।

কমলালেবুর (Oranges) মধ্যে থাকা ভরপুর ভিটামিন সি অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ করে। এই ফল খেলে লোহিত রক্তকণিকার উৎপাদন বৃদ্ধি পায় ফলে রক্তাল্পতার সমস্যা থাকে না। এর মধ্যে ভিটামিন সি ছাড়াও রয়েছে কোলিন, পটাশিয়াম এবং ডায়েটরি ফাইবার যা স্ট্রোক, অ্যারিথমিয়ার, সেরিব্রাল অ্যাটাকের সম্ভাবনা কমায়। সেল ড্যামেজ প্রতিরোধ করে। যে কোনও প্রদাহকে প্রশমিত করে। ভিটামিন সি প্রচুর থাকার ফলে যে কোনও সংক্রমণের বিরুদ্ধে দারুণ কাজ করে। রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি আর সংক্রমণ থেকে বাঁচা যা করোনা অতিমারি থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে জরুরি তা সম্পূর্ণ রয়েছে কমলালেবুতে।

যাঁদের ইনসমনিয়া বা নিদ্রাহীনতার সমস্যা রয়েছে বা দীর্ঘদিন ভুগছেন, তাঁরা রোজকার ডায়েটে কমলালেবু অবশ্যই রাখুন। এই ফলে থাকা ফ্ল্যাভনয়েড অনিদ্রা দূর করতে সাহায্য করে। স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। পেটের যে কোনও ধরনের আলসার প্রতিরোধে কমলালেবুর জুড়ি মেলা ভার। ডিমেনশিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা কমে যায়, যাঁরা নিয়মিত কমলালেবুর রস খান।

কিডনি স্টোনের সমস্যা রয়েছে যাঁদের, তাঁদের জন্য এই ফল খুব উপকারী। কারণ এটি ইউরিনে পি এইচ বৃদ্ধি করে এবং ইউরিনকে ক্ষারযুক্ত করে ফলে কিডনিতে পাথর হতে দেয় না। তবে হার্ট এবং কিডনির রোগে যাঁদের হাই পটাশিয়াম যুক্ত খাবার খাওয়া মানা, তাঁরা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবেই কমলালেবু খাবেন। ওবেসিটির সমস্যায় যাঁরা ভুগছেন, তাঁরা নিয়মিত ডায়েটে কমলালেবু রাখুন। ডায়েটরি ফাইবার রয়েছে তাই ক্যালরি কম এই ফলে। কোলেস্টেরল কমাতে এর জুড়ি নেই। খিদে বাড়ায়। খাবারে রুচি তৈরি হয়।

বিশেষজ্ঞের মতে, কমলালেবুতে রয়েছে ভিটামিন বি ৬ যা মানবদেহে প্রয়োজনীয় হিমগ্লোবিন তৈরি করে। স্ট্রেস হরমোন ক্ষরণ কমায় ফলে মানসিক অবসাদ কমে। স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে। হাইপারটেনশনের রোগীদের জন্য কমলালেবু খুব কার্যকরী। কমলালেবুর মধ্যে থাকা ভিটামিন এ যা বিটা ক্যারোটিন আকারে থাকে, এটি শরীরের কোষগুলিকে ক্ষতিকর ফ্রি রাডিকলস থেকে মুক্ত রাখে। আয়রন রোগপ্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করে। শিশুদের বদহজম, পাচনতন্ত্রের সমস্যা কমাতে কমলালেবু খুব কার্যকরী। তাদের সর্দিকাশি এমনকী হুপিং কাশির প্রবণতাকে কমিয়ে দেয়। প্রতিদিন কমলালেবুর রস, এক চিমটে নুন আর এক চামচ মধু মিশিয়ে খাওয়ালে শিশুদের সর্দিকাশি ও আরও নানা সমস্যা থেকে মুক্ত রাখা যাবে।

কমলালেবুর খোসা
কমলালেবু শুধু নয়, এর খোসাও অনেক গুণের। এর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টিইনফ্লামেটরি, অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান। এর মধ্যে রয়েছে প্রোভিটামিন এ, ফোলেট, রাইবফ্লোবিন, থিয়ামিন, ভিটামিন বি সিক্স, এবং ক্যালসিয়াম, কপার, ম্যাগনেসিয়াম ও ডায়েটরি ফাইবার।
কমলালেবুর খোসায় রয়েছে পলিফেনল, যা টাইপ টু ডায়াবেটিস, অ্যালঝাইমার রোগ, ওবেসিটি থেকে মুক্তি দেয়। ওজন কমাতে ভীষণভাবে সাহায্য করে।
হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে কমলালেবুর খোসা অনবদ্য। এর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিইনফ্লামেটরি প্রপার্টি যা গ্যাসট্রোইনটেস্টিনাল সমস্যা, ডায়েরিয়া, অ্যাসিডিটি থেকে সুরক্ষা দেয়। মুখের দুর্গন্ধনাশক এই খোসা ক্যাভিটির সঙ্গেও লড়াই করে। মাড়ির রক্তক্ষরণ প্রতিরোধ করে।
কমলালেবুর খোসা ঠান্ডা লাগা, সর্দিকাশি থেকে মুক্ত রাখে। শীতে যাঁরা শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভোগেন, তাঁরা কমলালেবুর খোসার রস খেলে এই কষ্ট কমবে। কমলালেবুর খোসা জুলিয়ন করে কেটে বিভিন্ন স্যালাডে, টক দইয়ে, ওটমিলে দিয়ে খেতে পারেন। অরেঞ্জ পিল দিয়ে মার্মালেডও বানিয়ে নিতে পারেন।
কমলালেবুর খোসায় রয়েছে ভিটামিন সি, সাইট্রিক অ্যাসিড বায়ো-ফ্ল্যাভনয়েড, পেকটিন ইত্যাদি যা বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় কার্যকরী। যেমন, স্ট্রেস কমাতে সহায়ক, ফ্যাট বার্ন করতে, ওজন কমাতে সাহায্য করে।

সুন্দরী কমলা
সৌন্দর্যের চাবিকাঠি রয়েছে কমলালেবুতে। অরেঞ্জ পিল পাউডার বা কমলালেবুর খোসার গুঁড়ো ত্বকের কোলাজেন এবং ইলাস্টেন গঠনে সহায়ক। তাই এই পাউডার, সামান্য জল এবং দুধ মিশিয়ে একটু প্যাক করে লাগালে এটি স্কিন টাইটনিং-এ ভীষণ সহায়ক। ত্বকে যৌবনদীপ্তি ধরে রাখতে এটি অনবদ্য।
ব্রণ অনেকেরই খুব বড় সমস্যা। কমলালেবুর খোসার গুঁড়ো ব্রণ কমাতে কার্যকরী। একই সঙ্গে এটি প্রাকৃতিক ক্লেনজার, অ্যাস্ট্রিনজেন্ট, স্ক্রাবার, ময়েশ্চারাইজার এবং টোনার। কমলালেবুর খোসার গুঁড়ো, পুদিনাপাতার রস এবং শাঁখের গুঁড়ো একসঙ্গে মিশিয়ে প্যাক করে মুখে লাগিয়ে রাখুন। এটি সপ্তাহে তিনদিন লাগালে ব্রণর জন্য খুব উপকার পাবেন।
শীতকালে ত্বকের কালচে ভাব কমাতে এর জুড়ি নেই। দু’চামচ কমলালেবুর খোসা বাটা বা গুঁড়ো সঙ্গে মধু অল্প এবং এক চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনিগার মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে নিন। দশ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের কালচে ভাব কেটে যাবে উজ্জ্বল হবে মুহূর্তে।
দাঁত ঝকঝকে সাদা করতে কমলালেবুর খোসা দারুণ কার্যকরী। কমলালেবুর খোসা বাটা জলের সঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট করে দাঁতে লাগিয়ে রাখুন পনেরো মিনিট। ঠান্ডা জলে ধুয়ে নিন।
কমলালেবুর রস এক কাপ, জল দু’ কাপ, এক চামচ মধু একসঙ্গে মিশিয়ে ঘরেই বানিয়ে ফেলুন দারুণ কন্ডিশনার। চুলে শ্যাম্পু করার পর ধুয়ে নিয়ে এই কন্ডিশনার লাগিয়ে দশ মিনিট লাগিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
কমলালেবুর রস এবং বেসন একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে মেখে রেখে দিন দশ মিনিট তারপর ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের বার্ধক্যের ছাপ কমাতে অনবদ্য। এর সঙ্গে ত্বকের শীতকালীন ড্রাই- ডালনেস কমাতে সাহায্য করবে।

আরও পড়ুন-আসছে ‘Tejas’, প্রকাশ পেল ছবির প্রথম লুক

পুষ্টিকর কমলার জ্যুস

কমলালেবু দুটো, চিনি এক চামচ বা চিনি ছাড়া, টকদই দু’ চামচ, অল্প বিট লবণ। ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিন। রোজ খেতে পারেন এই জ্যুস। এই রস শুধু রোগব্যাধির সম্ভাবনা কমায় এমন নয়, এর সঙ্গে শরীরে এনার্জি বুস্ট করে। ওজন কমাতে সাহায্য করে। প্রচুর ক্যালরি এতে অথচ ফ্যাটহীন। এর পেকটিন ও লিমিনয়েড খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে হার্ট সুস্থ রাখে।