নবীন-প্রবীণে একজোট হয়ে কাজ করার বার্তা দিয়ে শুক্রবার রাতে প্রকাশিত হল কলকাতা পুরভোটে তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা। উন্নয়নই যে লক্ষ্য তা ১৪২ জনের তালিকায় স্পষ্ট করে দিয়েছেন তৃণমূল (Tmc) সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Bandopadhyay)। ৩৬ ও ১১৯ নম্বর ওয়ার্ডের (Ward) প্রার্থীর নাম পরে জানানো হবে বলে জানিয়েছে তৃণমূল।

একুশের বিধানসভা নির্বাচনে তৃতীয়বার বিরাট সাফল্যের পর প্রশ্ন ছিল কলকাতার ছোট লালবাড়ির নির্বাচন নিয়ে। নির্বাচন ঘোষণার পরেই সবাই অপেক্ষায় ছিলেন তৃণমূলের প্রার্থী তালিকার। সমাজের ভিন্ন শ্রেণির মানুষকে যেমন প্রার্থী তালিকায় জায়গা দিয়েছেন দলনেত্রী, পাশাপাশি দ্বিতীয় প্রজন্মকে তুলে আনার কাজটিও সেরে রেখেছেন এই পর্বে। এই প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন চিকিৎসক, আছেন রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য, আছেন সমাজের পিছিয়ে পড়া প্রতিনিধি, ক্রীড়া জগতের মানুষ, আইনজীবীদের প্রতিনিধি। কারণ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর রাজনৈতিক জীবনে বরাবরই রিজার্ভ বেঞ্চকে গুরুত্ব দিয়েছেন। ফিরহাদ হাকিম, শশী পাঁজা, দেবাশিস কুমার এঁরা তো ছিলেনই। এঁদের সঙ্গে এবার উঠে এলেন পূজা পাঁজা, সৌরভ বসু, সন্দীপন সাহা, অমিত সিং, শক্তিপ্রতাপ সিং, অয়ন চক্রবর্তীদের মতো নতুন মুখ।


দলের প্রয়োজনে কয়েকজন বিধায়ককেও একইসঙ্গে জায়গা দেওয়া হয়েছে এই তালিকায়। তার মধ্যে ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim), দেবাশিস কুমার (Debashis Kumar), দেবব্রত মজুমদার (Debabrata Majumder), অতীন ঘোষ (Atin Ghosh), পরেশ পাল (Pares Paul), রত্না চট্টোপাধ্যায় (Ratna Chatterjee)। পরিষদীয় রাজনীতিতে এই বিধায়করা যেমন দক্ষ তেমন বহু বছর ধরেই কলকাতার পুরসভায় পোড়খাওয়া জন প্রতিনিধি। এঁদের মধ্যে একমাত্র ব্যতিক্রম রত্না চট্টোপাধ্যায়। তবে তিনি রাজনৈতিক পরিবারেরই সদস্য। তাঁর ১৩১ ওয়ার্ডটির বাসিন্দারা পুরপরিষেবার ক্ষেত্রে সবসময় কাছে পাবেন তাঁদের বিধায়ককে।


একইসঙ্গে এই তালিকায় জীবন সাহা, স্বপন সমাদ্দার, বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়, মালা রায়, সুশান্ত ঘোষ, রত্না শূর, অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়, মানজার ইকবাল, সন্দীপ বক্সী, শাম্মি জাহান রয়েছেন যাঁরা কলকাতার নাগরিক পরিষেবার সঙ্গে বহু দশক ধরে জড়িত।

ভবানীপুরের ৭৩ নম্বর ওয়ার্ড দলনেত্রীর নিজের জায়গা। সেখানে এবার তিনি দায়িত্ব দিয়েছেন নিজেরই ভ্রাতৃজায়া কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায়। ক্রিকেট প্রশাসনে দীর্ঘদিন ধরে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন বিশ্বরূপ দে। তিনি এবার পুরভোটের লড়াইয়ে। আবার একইসঙ্গে যুব তৃণমূলের উত্তরে শান্তিরঞ্জন কুণ্ডু, অনিন্দ রাউত, ডা: মীণাক্ষী গঙ্গোপাধ্যায় যেমন আছেন তেমনই দক্ষিণের বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্ত ও, দেবলীনা বিশ্বাসও আছেন। তালিকায় আছেন বামফ্রন্টের প্রয়াত প্রাক্তন মন্ত্রী আরএসপির ক্ষিতি গোস্বামীর কন্যা মনোবিদ বসুন্ধরা গোস্বামী।


দীপাবলির আলো ঝলমলে রাতে আচমকা সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে অন্ধকার নেমে এসেছিল। মুষরে পড়েছিলেন স্বয়ং দলনেত্রীও। এবার প্রার্থী তালিকায় জায়গা পেলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বোন তনিমা চট্টোপাধ্যায়।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বরাবরই মহিলা ও সংখ্যালঘুদের সামনের সারিতে এনেছেন। পুরভোটের প্রার্থী তালিকাতেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। ৩৩ শতাংশ ছাড়িয়ে প্রার্থী তালিকায় ৪৫ শতাংশ উপস্থিতি মহিলাদের। একইসঙ্গে সংখ্যালঘু মুখ ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের দু’জন মিলিয়ে রয়েছে ২৩জন প্রার্থী। তপশিলি জাতির প্রার্থী রয়েছেন ১৯ জন।


এবারের প্রার্থী তালিকায় চোখ বোলালে দেখা যাচ্ছে, সমাজের সব অংশের সব শ্রেণির মানুষের প্রতিনিধি জায়গা পেয়েছেন এই তালিকালয়। সামাজিক ভারসাম্য বজায় রেখেই দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতার কয়েক কোটি মানুষের পরিষেবার জন্য বাছাই করেছেন তাঁর টিম। যাঁরা আগামিদিনে প্রাণপাত করবেন আপনার-আমার জন্য। প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হলো। এবারে মানুষের দরবারে যেতে হবে। পৌঁছতে হবে প্রতিটি মানুষের কাছে।
































































































































