প্রধানমন্ত্রী (PM) নরেন্দ্র মোদিকে (Narendra Modi) অতীত স্মরণ করালেন তৃণমূলের (TMC) রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh)। হঠাৎ বিজেপির (BJP) BSF প্রীতি দেখে ১০ বছর আগের প্রসঙ্গ টেনে আনলেন কুণাল ঘোষ। তারিখ, সাল উল্লেখ করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে খোঁচা দিলেন কুণাল। ১৪ এপ্রিল, ২০১২, তৎকালীন কেন্দ্রের UPA সরকারের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে (Monmohan Singh) একটি চিঠি দিয়েছিলেন সেই সময়কার গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
২০১২ সালে কংগ্রেস শাসিত ভারতের কেন্দ্রের তরফে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ক্ষমতা বা এক্তিয়ার বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। আর মনমোহন সিং সরকারের সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেই গর্জে উঠে তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। তাঁর অভিযোগ ছিল, বিএসএফের ক্ষমতা বাড়িয়ে কেন্দ্র সরকার যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো দুর্বল করতে চাইছে। আর সেই নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হয়ে ২০১২ সালের UPA সরকারের সেই কাজ করে কী করে ? এদিন তথ্য দিয়ে এমনই প্রশ্ন তোলেন কুণাল ঘোষ।
একইসঙ্গে কুণাল ঘোষ শুভেন্দু অধিকারী ও রাজ্য বিজেপিকে সেদিনের ঘটনা মনে করিয়ে দেন। যখন রাজ্য সরকার ও বাংলার শাসক দল BSF-এর এক্তিয়ার বৃদ্ধির বিরোধিতায় সরব, তখন ইস্যুটিকে নিয়ে রাজনীতিকরণ করছে এ রাজ্যে নরেন্দ্র মোদির দলের নেতারা। এ প্রসঙ্গে একটি টুইটে কুণাল ঘোষ লেখেন, “শুভেন্দু BSF Camp-এ গিয়ে সস্তা নাটক করছে। ও আগে বলুক, ২০১২ সালে গুজরাতের CM মোদিজি তখনকার PM মনমোহন সিংকে BSF-এর ক্ষমতাবৃদ্ধির বিরুদ্ধে চিঠি দিয়েছিলেন কেন?
কেন মোদিজি বলেছিলেন এটা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোতে আঘাত? এর জবাব না দিয়ে নাটক বন্ধ করুক বিজেপি।”
এদিন বিশ্ববাংলা সংবাদের লাইভে এসে ক্ষুরধার বক্তব্য ও তথ্য তুলে যুক্তিগ্রাহ্য মন্তব্যের মধ্যে দিয়ে কুণাল ঘোষ BSF ইস্যুতে নরেন্দ্র মোদিকে কার্যত তুলোধনা করেন। মোদিকে অতীত মনে করিয়ে দিয়ে ধুয়ে দেন। কুণালের কথায়, “বিএসএফ নিয়ে বিজেপির দ্বিচারিতা নাটকের পর্যায়ে চলে গিয়েছে। একতরফাভাবে কেন্দ্র নির্দেশিকা জারি করেছে। যেখানে আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে দেশের অন্দরে বিএসএফের ১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত আওতায় ছিল কার্যক্ষমতা, গায়ের জোরে তা বাড়িয়ে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত করা হয়েছে। এর ফলে ভারতের অঙ্গরাজ্য পশ্চিমবঙ্গের একটি বিরাট অংশ বিএসএফ-এর আওতায় চলে যাচ্ছে। পুলিশের পাশাপাশি বিএসএফ প্রয়োজনে ওই অঞ্চলে নাক গলাতে পারবে। যা যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর পরিপন্থী।”
মোদি প্রসঙ্গ টেনে এরপরই রাজ্য বিজেপির দ্বিচারিতা তুলে ধরেন কুণাল। তিনি বলেন, “কেন্দ্র ও তাদের শাসক দল বিজেপি এখন এই বিষয়ে যুক্তি খাড়া করছে, যে বর্ডার সুরক্ষিত রাখতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সীমানা যদি সুরক্ষিত রাখতে হয়, বিএসএফ তা সুরক্ষিত রাখুক। কেউ তো বারণ করেনি কিন্তু তার জন্য ওদিক থেকে কোনও ব্যক্তি বা কোন ধরণের জিনিস যাতে এদিকে না আসে সেটা সীমান্তে আটকে দিলেই এই সমস্যা মিটে যায়। তার জন্য ৫০ কিলোমিটার ভিতরে কেন ঢুকতে হবে? তাছাড়া কেন্দ্র যে অনুপ্রবেশের কথা বলছে, তাহলে বিএসএফ কেন সীমান্ত সুরক্ষার কাজ সঠিকভাবে পালন করছে না। এটা তো তাদের দায়িত্ব। এটা তো রাজ্য পুলিশের দায়িত্ব নয়।”
এদিন ফের কেন্দ্রের তুঘলকি সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করলেও BSF ক-কে কিন্তু অসম্মান করেননি কুণাল ঘোষ। তৃণমূল নেতা বলেন, “BSF-কে তো আমরা ভালবাসি। তৃণমূল কংগ্রেস BSF-কে, দেশের জওয়ানদের সম্মান করে। অথচ তাদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে, অনভিপ্রেতভাবে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করতে গিয়েই বিতর্কগুলো তৈরি হচ্ছে এবং এই বিতর্ক তৈরি করছে বিজেপি।”
এদিন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তাঁর বক্তব্যের মধ্যে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষকেও কটাক্ষ করেন। কুণাল ঘোষ বলেন, “দীলিপবাবু ঠিক করে নিয়েছেন তাঁদের বর্তমান রাজ্য সভাপতি ঘুম থেকে ওঠার আগেই তিনি এমন কিছু বক্তব্য রাখবেন যাতে অন্য বর্জ্য পদার্থ ত্যাগ করার আগে সারাদিন তিনি চর্চায় থাকেন। আসলে লড়াইটা বিজেপি নেতাদের নিজেদের মধ্যেই।”
আরও পড়ুন- Khel City: হাওড়ায় আন্তর্জাতিক মানের খেল নগরী তৈরির ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর