মাত্র ১৩৩ টাকা খরচে মিললো পুলিশের চাকরি 

0
1

খায়রুল আলম, ঢাকা

ময়মনসিংহ পুলিশ লাইন্স চত্বরে ট্রেইনি রিক্রুটিং কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল যখন ঘোষণা করা হয়, তখন রাত ১২টা। ফল ঘোষণা করছিলেন জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মোহা. আহমার উজ্জামান। তার ঠিক সামনেই জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে অধীর আগ্রহে সেই ঘোষণা শুনছিলেন চাকরিপ্রত্যাশীরা।

মাইকে নিজের রোল নম্বর ও নাম শোনার সঙ্গে সঙ্গেই উত্তীর্ণরা ‘ইয়েস স্যার’ বলে উত্তর দিচ্ছিলেন।

এ সময় আনন্দে কেঁদে ফেলেন কাঙ্ক্ষিত চাকরি পাওয়া ব্যক্তি ও তাদের অভিভাবকরা।

জেলার গৌরীপুর উপজেলার ভাংনামারী গ্রামের মেয়ে সানজিদা। এক বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনিই বড়। পড়াশোনা করছেন ময়মনসিংহ নগরীর মুসলিম গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে। পরিবারে আর্থিক সংকট থাকায় লেখাপড়ার খরচ চালান টিউশনি করে। সেই কষ্ট ঘোচানোর দিন এসে গেছে তার। চূড়ান্ত নিয়োগ তালিকায় এসেছে তার নাম।

বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত ফল ঘোষণায় নিজের নামটি শোনার পর সানজিদা ও তার বাবা নজরুল ইসলামের চোখ অশ্রুতে ভরে যায়।

সানজিদা বলেন, সাত সদস্যের পরিবারে বাবা ছাড়া উপার্জনক্ষম কোনো ব্যক্তি নেই। তাই চাকরির খুব প্রয়োজন ছিল।

তবে ঘুষ ছাড়া কোথায় চাকরি পাব, এমন চিন্তা মাথা থেকে দূর হচ্ছিল না। জানতে পারি, কোনো তদবির ছাড়াই পুলিশে চাকরি হয়। তাই আবেদন করে বিভিন্ন ধাপ পার হয়েছি। অবশেষে সেটিই সত্য হলো।

আবেদন ফরম তিন টাকা, ব্যাংক ড্রাফট ১০০ টাকা ও অনলাইন চার্জ ৩০ টাকা দিয়েই পেয়ে গেছি কাঙ্ক্ষিত পুলিশের চাকরি। এখন আমিই সংসারের হাল ধরতে পারব।

ময়মনসিংহ সদরের দাপুনিয়া গ্রামের দিনমজুরের ছেলে আলমগীর হোসেন। পুলিশে চাকরি করা স্বপ্ন ছিল তার। তবে স্বপ্নের পথে সবচেয়ে বড় বাধা ছিল দরিদ্রতা।

বাবা বিল্লাল হোসেনের যেখানে নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা, সেখানে চাকরি যেন ছিল সোনার হরিণ। তবে আলমগীর জানতে পারেন, পুলিশে চাকরি পেতে লাগে না কোনো বাড়তি টাকা। মেধা-যোগ্যতা হলেই মোট ১৩৩ টাকা খরচ করেই মিলবে চাকরি। পরে আবেদন ফরম পূরণ করে লাইনে দাঁড়ান। এরপর সব বাছাইয়ে মেধা ও যোগ্যতায় উত্তীর্ণ হলেন। এখন তিনি বাংলাদেশ পুলিশের গর্বিত একজন সদস্য।

ফলাফল ঘোষণা হওয়ার পর বাবাকে ধরে কেঁদে ফেলেন আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আমার বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। তিন বেলা ঠিকমতো খেতে পারি না। আমার তো লোক ধরার কোনো সুয়োগ নাই। নিয়োগে স্বচ্ছতা না থাকলে এটা সম্ভব হতো না।’

আলমগীরের বাবা বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘আমি খুব গরিব। আমার পোলা পুলিশে টিকছে। আমার জীবনে এত খুশি আর কোনোদিন অই নাই।’

আলমগীর, সানজিদার মতোই মোট ১০৭ জন শুধু মেধা ও যোগ্যতায় মাত্র ১৩৩ টাকায় পুলিশে চাকরি পেয়েছেন। যাদের কারও বাবা কৃষক, কারও বাবা দিনমজুর-শ্রমিক, কারও বাবা রিকশাচালক, কেউবা আবার নিজেরাই গার্মেন্টকর্মী।

জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে এবার দুই হাজার ৯৩০ জন শারীরিক পরীক্ষায় অংশ নেন। এর মধ্যে ৭১৬ জন উত্তীর্ণ হয়ে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন। লিখিত পরীক্ষায় পাস করেন ১৮৫ জন। এর মধ্য থেকে ১৯ জন অপেক্ষমাণসহ ১২৬ জন উত্তীর্ণ হন। ১০৯ জন পুরুষ ও ১৭ নারী।