বাংলার রাজনীতির বর্ণময় চরিত্র সুব্রত মুখোপাধ্যায়

0
6

বাংলার রাজনীতির বর্ণময় চরিত্রদের অন্যতম সুব্রত মুখোপাধ্যায়। ছাত্র রাজনীতি দিয়ে শুরু হয়েছিল তাঁর জীবন। ক্রমে তাঁর প্রভাব ছড়িয়েছিল শ্রমিক সংগঠনের মধ্যেও। আজীবন বাম-বিরোধী রাজনীতিতে বিশ্বাসী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে সব দলের নেতৃত্বের সুসম্পর্ক বজায় ছিল। প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ সুব্রত চলে গেলেন দীপাবলির আলোকিত রাতে।

সুব্রত মুখোপাধ্যায় জন্ম ১৯৪৬ সালের ১৪ জুন, দক্ষিণ ২৪ পরগণার বজবজে। লেখাপড়া বঙ্গবাসী কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর্কিওলজিতে এমএসসি। মিউজিওলজিতে ডিপ্লোমা। বঙ্গবাসী কলেজে পড়ার সময় তার সঙ্গে আলাপ হয় প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির। সত্তরের দশকে প্রিয়-সুব্রত জুটি বাংলার ছাত্র রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত নাম।

বাংলার গণ্ডি পেরিয়ে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের নাম পৌঁছয় দিল্লিতে। ইন্দিরা গান্ধীর প্রিয় পাত্র হয়ে ওঠেন তিনি। যদিও ভোটে জিতে দিল্লির রাজনীতিতে কখনও যেতে পারেননি। তিনি তবে রাজ্যের নেতা হয়েও কংগ্রেসের হাই কমান্ডের প্রিয় পাত্র ছিলেন তিনি।

১৯৭১ সালে প্রথম বালিগঞ্জের বিধায়ক। ১৯৭২ সালেও বিধায়ক বালিগঞ্জ থেকেই। ১৯৭২-১৯৭৭ পর্যন্ত তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের মন্ত্রিসভায় মাত্র ২৬ বছর বয়সে সর্বকনিষ্ঠ মন্ত্রী হিসেবে স্বরাষ্ট্র, তথ্যসংস্কৃতি, পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী ছিলেন। ১৯৭৭ সালে বিধানসভা বালগঞ্জ কেন্দ্রে ভোটে পরাজিত হন। ১৯৮২-১৯৯৬ পর্যন্ত জোড়াবাগান থেকে বিধায়ক হন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। ১৯৯৬-২০০১ পর্যন্ত চৌরঙ্গি থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৬ সালে চৌরঙ্গি কেন্দ্রে কংগ্রেসের বিধায়ক ছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। পরবর্তী সময় ২০১১, ২০১৬ ও ২০২১ সালে তিনটি নির্বাচনেই বালিগঞ্জ কেন্দ্রে বিধায়ক নির্বাচিত হন সুব্রত মুখোপাধ্যায়।

২০০০ সালে কলকাতা পুরসভায় ক্ষমতায় আসে তৃণমূল কংগ্রেস। কলকাতা পুরসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের প্রথম মেয়র ছিলেন বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ। ২০০০-২০০৫ সালে কলকাতা পুরসভায় মেয়র পদের দায়িত্ব পালন করেন।

দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে ১৯৬৯-১৯৯৯ সাল পর্যন্ত কংগ্রেসে ছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। ১৯৯৯ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৈরি তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদেন তিনি। ২০০৫ সালে তিনি যোগ দেন শারদ পাওয়ারের এনসিপি-তে। ২০০৫-২০০৯ পর্যন্ত তিনি আবার কংগ্রেসের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। এরপর ২০১১ সাল থেকে তিনি আমৃত্যু তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। একইসঙ্গে সামলেছেন একাধিক দফতরের প্রশাসনিক গুরুদায়িত্ব। ২০১২ সালে আইএনটিইউসির সর্বভারতীয় সভাপতি হন। আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠন আইএলও-তে প্রতিনিধিত্ব করেন। ২০০৪, ২০০৯ ও ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও পরাজিত হন। একসময় এক ব্র্যাকেটে উচ্চারিত হত প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি, সৌমেন মিত্র এবং সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের নাম। দুজন প্রয়াত হয়েছেন আগেই। এবার চলে গেলেন সুব্রতও। বাংলার দীপাবলি নিষ্প্রভ।

আরও পড়ুন- ‘সুব্রতদার মরদহে দেখতে পারব না, এত বড় দুর্যোগ জীবনে আসেনি’, ভেঙে পড়লেন মমতা