কৃতী মেয়েকে নার্সিং পড়াতে না পেরে অবসাদে আত্মঘাতী বাবা

0
2

ছোট থেকেই নার্স হওয়ার স্বপ্ন ছিল তার। সেই মতো প্রস্তুতিও নেওয়া শুরু করেছিল।উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার পরেই নার্সিং পড়তে আবেদনও করেছিল। ১৮ অক্টোবরই  ছিল  সেই সিলেকশন।সবই ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু মেয়ের পড়ার খরচ জোগানোর চিন্তায় মাথায় হাত পড়েছিল বাবার।
তার ধারনা ছিল, নার্সিং পড়তে প্রচুর খরচ। যদি সরকারি কলেজে না হয়, তাহলে আরও বিপদ। তাই মেয়ের স্বপ্নপূরণ করার চিন্তা তাঁকে কুরেকুরে খাচ্ছিল। আর সেই মানসিক অবসাদে মেয়ের নার্সিংয়ে সিলেকশনের আগের রাতে আত্মহত্যা করলেন বাবা। মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে বালুরঘাট ব্লকের চিঙ্গিশপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কালিকাপুর এলাকায়।
প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন,শনিবার রাতে বাড়িতেই গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হন রতন চৌধুরী (৪০)। একটি ছোট মুদিখানার দোকান চালাতেন তিনি। তার সঙ্গে সংসার সচল রাখতে ইলেকট্রিকেরও অল্পস্বল্প কাজ করতেন। কিন্তু কিছুতেই সামাল দিতে পারছিলেন না। মেয়ের স্বপ্নপূরণ করতে পারবেন না, এই ‘অপরাধবোধ’-শেষপর্যন্ত আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন তিনি।
রবিবার সকালে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করেন পরিবারের লোকজন। খবর দেওয়া হয় বালুরঘাট থানার পুলিশকে। পরে পুলিশ গিয়ে দেহটি উদ্ধার করে তা ময়নাতদন্তের জন্য বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে পাঠায়। ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে আসে এলাকায়।
কালিকাপুরের বাসিন্দা রতন চৌধুরীর স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে আছেন। এছাড়াও বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা রয়েছেন। কালিকাপুরে তাঁদের বাড়ি থাকলেও আরেকটি বাড়ি রয়েছে বালুরঘাট শহরের খাদিমপুর এলাকায়। ছেলেমেয়েকে নিয়ে কোনওরকমে সংসার চালাতেন। মেয়ে ছোট থেকেই পড়াশোনায় ভাল। মাধ্যমিকে ভাল রেজাল্ট করার পরও বাবার কাছে সে জানায় নার্স হবে। খুশি হয়েছিলেন বাবা। স্বপ্ন দেখতেন মেয়ে বড় হয় হাল ধরবে সংসারের। উচ্চ মাধ্যমিকেও ভাল রেজাল্ট করে মেয়ে।

আরও পড়ুন- বৃষ্টিতে নাজেহাল দিল্লি, উত্তরাখণ্ডে জারি রেড অ্যালার্ট
সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল। তার মধ্যেই রতনবাবু জানতে পারলেন নার্সিং পড়তে গেলে খরচ কেমন হবে। এদিকে তাঁর যা আর্থিক অবস্থা তা দিয়ে মেয়েকে কীভানে নার্স করবেন এ নিয়ে ভাবনায় পড়েন বাবা। মেয়ের উচ্চশিক্ষায় বাধ সেধেছে আর্থিক অনটন। সরকারি হাসপাতালে সুযোগ না পেলে বেসরকারি হাসপাতালে নার্সিং পড়ার খরচ তো অনেক বেশি। সেই টাকার যোগান কোথা থেকে করবেন, সেই চিন্তাতেই মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন প্রৌঢ়। কোনওকিছু উপায় না খুঁজে পেয়ে আত্মঘাতী হলেন তিনি।

advt 19