বাংলাদেশের ঘটনা নিয়ে বাংলায় অশান্তির চেষ্টা বিজেপির! তীব্র প্রতিবাদ তৃণমূল মুখপাত্রের

0
1

বাংলাদেশের কুমিল্লার ঘটনা নিয়ে এ রাজ্যে প্ররোচনা দিয়ে অশান্তির ছড়াতে চাইছে গেরুয়া শিবির। এই তালিকায় রয়েছেন বিজেপির ছোট-বড় কয়েকজন নেতাও। অথচ ইতিমধ্যেই বিষয়টির নিন্দা করে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বাংলাদেশের (Bangladesh) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে, এ রাজ্যে সেই বিষয় নিয়ে অযথা উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টার তীব্র বিরোধিতা করেছে তৃণমূল (Tmc)। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh) সোশ্যাল মিডিয়ায় (Social Media) লেখেন, বাংলাদেশের এই অবাঞ্চিত ঘটনা জানার পর তিনিই প্রথম এ বিষয়ে টুইট (Tweet) করেন। তার বহু ঘণ্টা পরে বিজেপি বিধায়ক বিষয়টির নিয়ে সরব হন।

আরও পড়ুন: বিজয়ায় মিষ্টির জন্য দোকানে দোকানে লম্বা লাইন 

ফেসবুক পোস্টে তৃণমূল নেতা লেখেন
“বাংলাদেশের দুর্গাপুজো ঘিরে কিছু বাধা এবং অশান্তির অভিযোগ আসছিল। এসব অবাঞ্ছিত ও আপত্তিকর। গতকাল সকালে এনিয়ে আমি টুইট করি।

তার আগে পর্যন্ত বিজেপির মেকি হিন্দুত্বের ব্যবসায়ীদের দেখা মেলেনি।
আমার ট্যুইটের পর তারা ভাবল, এই রে, তৃণমূল মুখপাত্র প্রতিবাদ জানাল। আমরা কই?
চার ঘন্টা পরে এলো পেগাসাস অধিকারীর ট্যুইট। তিনি নাকি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখলেন। তারপর আর দুচারটি চার আনার তৎকাল বিজেপি নেতাদের সস্তা নাটক। আহা, এই ইস্যুতে ঢুকতে না পারলে তো শেষ!

ঘটনা হল, দায়িত্বশীল যে কেউ বুঝবেন, এসব ক্ষেত্রে সস্তা নাটকের প্ররোচনা এড়ানো উচিত। হিতে বিপরীত হয়।

আমি স্পষ্ট বলি, টুইট বা ফেস বুক পোস্টের পর বাংলাদেশ থেকেও ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি প্রচুর।
সেখানকার মানুষও তো এসব অশান্তি চান না।

বলা হয়েছে, পুজোর মূর্তির সঙ্গে কে বা কারা অন্য ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ রেখেছিল। তাতেই ভাবাবেগে আঘাত ও পুজোয় আক্রমণ।

প্রথমত, যারা পুজো করছেন, তাঁরা ওই কাজটি করতে পারেন না, নিশ্চিত।
দ্বিতীয়ত, এটি করা হয়েছে প্ররোচনা হিসেবে, অশান্তির আগুন ছড়ানোর জন্য।

প্রশ্ন হল, করল কে?
বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ, ধর্মে মুসলমান হতেই পারেন, একাজ করবেন না। অসম্ভব।

এটা করবে ওখানকার কিছু দুষ্কৃতী এবং এখানকার ধর্মান্ধ শক্তির উল্টো মেরুর মৌলবাদী শক্তি।

মনে রাখুন, ওখানেও মেরুকরণ আছে।
আমাদের এখানে হিন্দুত্ব উস্কে ভোটের পার্টি আছে।
ওখানে ঠিক উল্টোটি।

শেখ হাসিনা ধর্মনিরপেক্ষ, পরধর্মসহিষ্ণু। সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী।
কিন্তু এখন ওখানে ভোটমুখী বাজারে উগ্র উল্টোশিবির ধর্ম ঘিরে মেরুকরণের কুৎসিত রাজনীতি করছে না, এমন গ্যারান্টি নেই।
পুজোয় অন্য ধর্মগ্রন্থের ইস্যু নিয়ে উগ্রতা তৈরির চেষ্টা।
পিছনে রাজনীতির কারবারিদের খেলা।

হাসিনা প্রশাসন যথাযথভাবে সামাল দিচ্ছেন।

আমরা বাজে ঘটনার প্রতিবাদ করব। নজর টানব। কিন্তু এমন কিছু করব না, যাতে আমাদের প্রচার হলেও আসলে বাংলাদেশে সেটি প্ররোচনা হয়ে বিপদ বাড়াবে।

বাংলাদেশের মৌলবাদী শক্তিকে বলি, দেশে দেশে তোমরা একে অপরের পরিপূরক।
তোমরা ওখানে ইসলামিক উগ্রতা দেখিয়ে এমন কিছু করোনা, যাতে এটাকে ইস্যু করে ভারতের বা এই বাংলার বিপরীতমুখী হিন্দু মৌলবাদী শক্তি তাদের রাজনৈতিক ব্যবসায় ফায়দা তুলতে নামে।

বাংলাদেশে যা হয়েছে, সেটা দুর্ভাগ্যজনক। প্রতিবাদযোগ্য। ভারত সরকার কথা বলুন। এটা অন্য জেলা নয় যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কথা বলবে। এটা অন্য দেশের বিষয়।
তবে হাসিনা সরকার এবং বাংলাদেশের মানুষের উপর আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে। তাঁরা সম্প্রীতি ও সংখ্যালঘু সুরক্ষা অটুট রাখবেন।

মনে রাখুন, বাংলায়, ভারতে আমরা বিজেপির মেকি হিন্দুত্বের রাজনীতির বিরুদ্ধে লড়ছি।
বাংলাদেশের এইসব ঘটনা তো ঘুরিয়ে তাদেরই সাম্প্রদায়িক প্রচারের আর সস্তা নাটকের সুযোগ করে দেয়। এতে কী লাভ?

আমরা ভারতে যেমন সংখ্যালঘু সুরক্ষায় বিশ্বাসী, বাংলাদেশেও চাইব একইরকম সুরক্ষিত থাকুক সংখ্যালঘুরা। তার জন্য সরব আমরাও।

অটুট থাকুক দুই বাংলার বন্ধুত্ব।

এই বাংলার মানুষের কাছে অনুরোধ, কোনো পোস্ট করার আগে ভাবুন।
গোটা বাংলাদেশ সম্পর্কে ধারণা করবেন না।
তাদের ভেতরের রাজনীতি, সমীকরণ না দেখে সরলীকৃত সিদ্ধান্ত ভুল হবে।

দরকারে প্রতিবাদ হবে। কিন্তু সেটা দায়িত্বশীল।

আর বিজেপির প্রতিবাদ?
যারা অসমে গুলিতে গণহত্যার পর মৃতদেহের উপর পৈশাচিকভাবে লাফায়; যারা উত্তরপ্রদেশে আন্দোলনরত কৃষকদের উপর গাড়ি তুলে দেয়; তাদের কোনো অধিকার নেই এসব বিষয়ে কথা বলার।

ওই তো মুরোদ।

আমার টুইট দেখে চার ঘন্টা পর নামে। তাদের আবার বড় বড় কথা!

বাংলাদেশের মৌলবাদীদের বলব, এমন কিছু কোরো না তোমরা যাতে বিজেপি এখানে নাটক করার সুযোগ পায়।
ভারতে আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মীয় তান্ডব চাই না। চাই সংহতি। চাই সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা। বাংলাদেশেও সংখ্যালঘুরা সুরক্ষিত থাকুক।

মনে রাখুন, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে মুসলিমদের অবদান অপরিসীম।
আবার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে হিন্দুদের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
দুই দেশের নাড়ির টান বহুযুগের।

এখন হিন্দু-মুসলমান রেষারেষির কোনো মানে আছে?”

আরও পড়ুন: বিজয়া দশমীর শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রীর, রাজ্যবাসীকে শুভেচ্ছাবার্তা অভিষেকেরও

স্পষ্টই বিজেপির (Bjp) নেতাদের নিশানা করেছেন কুণাল। একই সঙ্গে বাংলাদেশের ঘটনা এখানে মৌলবাদী শক্তিকে ইন্ধন জোগাতে পারে বলেও সতর্ক করেছেন তিনি। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গে যাতে কোনওরকম প্ররোচনামূলক অশান্তি সৃষ্টি হতে না পারে, তার জন্য সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।

advt 19