কাবুলে দেশের সব থেকে বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়ে গেল। পড়ুয়া, শিক্ষিকা বা শিক্ষাকর্মী, কোনও মহিলাই আর ঢুকতে পারবেন না কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ে। বুধবার এই ফরমান জারি করে কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত উপাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘যত দিন পর্যন্ত দেশে ইসলামি আবহ তৈরি না-হচ্ছে, তত দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে আমি মেয়েদের এখানে প্রবেশ করতে দিতে পারি না। আগে ইসলাম, পরে অন্য সব কিছু।’’ দিন কয়েক আগে উচ্চশিক্ষিত ও বর্ষীয়ান মহম্মদ ওসমান বাবুরিকে সরিয়ে উপাচার্য করা হয় তরুণ ও শুধু স্নাতকধারী তালিবান-পন্থী আশরফ গৈরাটকে। যার প্রতিবাদে ইস্তফা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ জন শিক্ষক।
বিতর্কিত মন্তব্য করার জন্য আফগানিস্তানের প্রগতিশীল শিক্ষিত মহল আশরফকে আদপেই পছন্দ করে না। মেয়েদের স্কুল প্রসঙ্গে তিনি কয়েক দিন আগেই বলেছিলেন, ‘‘সেগুলো যৌনদাসী তৈরির কারখানা।’’ এই
ধরনের প্রতিক্রিয়াশীল কথাবার্তা বলে থাকলেও খাস কাবুল বিশ্ববিদ্যালয় নিয়েই গৈরাট যে এমন একটা সিদ্ধান্ত নেবেন, তা সম্ভবত কেউ-ই ভাবেনি।
১৯৯৬-২০০১ সালেও শরিয়ত আইনের দোহাই দিয়ে মহিলাদের ঘরবন্দি-সহ নানা নিদান জারি করেছিল তালিবান। যদিও তালিবানের তরফে মুখপাত্র জ়বিউল্লা মুজাহিদ বারবার দাবি করেছিলেন, পূর্বতন তালিবান জমানার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না এ বার। নয়া রূপে তালিবানকে দেখতে পাবে গোটা বিশ্ব। কিন্তু তা যে নিছকই কথার কথা, তা স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে মেয়েদের উচ্চশিক্ষার উপরে কোপ পড়ার মতো ঘটনায়। তা ছাড়া, মহিলাদের নিপীড়ন, সংবাদমাধ্যমের উপরে আক্রমণ থেকে শুরু করে শিশু হত্যা একের পর এক ঘটনা ঘটেই চলেছে।
তালিবানের নৃশংসতার আরও একটি ঘটনা আজ জানা গিয়েছে। বাবা আফগানিস্তানের রেজ়িস্ট্যান্স ফোর্সের সদস্য। তারই খেসারত দিতে হল সন্তানকে। তখর প্রদেশের ওই শিশুকে বাবার ‘অপরাধে’ হত্যা করল তালিবান। পঞ্জশির অবজার্ভারে এই খবর প্রকাশ হতেই চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে সর্বত্র।
তালিবান আফগান-ভূমের দখল নেওয়ার পর থেকেই একের পর এক নৃশংস হত্যাকাণ্ড সামনে এসেছে। প্রতিহিংসা চরিতার্থের জন্য শিশুহত্যা সেই তালিকায় নবতম সংযোজন। অথচ ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনের পর থেকেই গোটা বিশ্বের কাছে ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে তালিবানের তরফে বার্তা দেওয়া হয়েছিল, প্রতিশোধের পথে হাঁটবে না তারা। এমনকি বলা হয়েছিল, পঞ্জশিরের দখল নিলেও কারও প্রতি অবিচার করা হবে না।
গত সপ্তাহেই আমেরিকার এক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছিল, রেজ়িস্ট্যান্স ফোর্সের সদস্য এবং আশরফ গনি সরকারের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত ছিলেন, তাঁদের নিশানা করছে তালিবান। পঞ্জশিরের এক যুবক জানিয়েছে, পাঁচ বার তালিবান হামলার মুখে পড়েছে তাঁর পরিবার।
পঞ্জশিরের আর এক যুবক জানিয়েছেন, ‘‘ওরা আমার মোবাইল নম্বর নিয়েছিল। তার পরে সমস্ত খোঁজখবর নিয়েছে আমার সম্পর্কে। কারও ক্ষেত্রে সন্দেহ হলে সঙ্গে সঙ্গেই হত্যা করা হচ্ছে।’’
গত কালই জানা গিয়েছিল, দক্ষিণ হেলমন্দ প্রদেশে তালিবানের তরফে ক্ষৌরকারদের হুমকি দেওয়া হয়েছে, তাঁরা যাতে কারও চুল-দাড়ি না কাটেন। গত সপ্তাহে হেরাট প্রদেশে অপহরণকারী অভিযোগে চার জনকে খুনের ঘটনাও সামনে এসেছিল। তবে আরও চাঞ্চল্যকর বিষয় হল, ওই চার জনের মৃতদেহ শহরের চারটি জায়গায় ক্রেনে চাপিয়ে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
































































































































