সংবাদমাধ্যমে তখন লাইভ সম্প্রচার চলছে। ঠিক সেই সময় গোটা বিশ্বকে চমকে দিন অদ্ভুত ঘটনা ঘটল আফগান সংবাদমাধ্যমের স্টুডিওতে। হুড়মুড়িয়ে সেখানে ঢুকলো তালিবান জঙ্গিরা(Taliban terrorist)। টিভি সঞ্চালকের(TV anchor) মাথায় ঠেকানো হলো বন্দুক। আফগানিস্তানের(Afghanistan) নয়া জমানায় সংবাদমাধ্যমে কণ্ঠরোধের ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখে স্তম্ভিত বিশ্বের গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষ৷
পক্ষকাল আগে আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর তালিবান জানিয়েছিল সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা বহাল থাকবে। কিন্তু সেটা যে আদতে শূন্যগর্ভ বিবৃতি ও দুনিয়াকে বোকা বানানোর চেষ্টা তা ফাঁস হয়ে গেল৷ সোমবার আফগানিস্তানের এক নিউজ চ্যানেলে একটি অনুষ্ঠান চলাকালীন ভিতরে ঢুকে পড়ে সশস্ত্র তালিবান জঙ্গিরা৷ সেসময় অনুষ্ঠানের সঞ্চালকের দিকে বন্দুকের নল তাক করে ঘিরে ধরে সাত জন তালিবান জঙ্গি৷ গানপয়েন্টে রেখে তাঁকে বলতে বাধ্য করা হয়, শেখানো তালিবানি বুলি৷ পিছনে লাইন দিয়ে বন্দুকের নল উঁচিয়ে জঙ্গিরা, আর সামনে বসে সঞ্চালক বলছেন, আফগানিস্তানে তালিবানের কোনও ভয় নেই৷ আপনারা কেউ ভয় পাবেন না৷ মুহূর্তের মধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় এই দৃশ্য ভাইরাল হয়।
আরও পড়ুন:চরৈবেতি: সবপক্ষকে মিলিয়ে শেষ বিদায় বুদ্ধদেবের, শোকবার্তা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর
সংবাদ সঞ্চালক যতই তালিবানদের ভয় না পাওয়ার আহ্বান জানান, এই ঘটনা সামনে আসতেই আফগানবাসীরা ভয়ে কুঁকড়ে গিয়েছে। একদল সশস্ত্র তালিবান যেভাবে ওই নিউজ চ্যানেলের স্টুডিওর শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ে বন্দুক দিয়ে ঘিরে ধরে, তাতে ঠান্ডা ঘরের মধ্যেও রীতিমতো ঘামতে থাকেন ওই সঞ্চালক। এরপরই আতঙ্কিত মুখে তালিবানের প্রশংসা করে তিনি বলেন, তালিবানকে ভয় পাবেন না। তালিবানরা দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি বজায় রাখবে। তাদের সহযোগিতা করুন।
তালিবানরা ক্ষমতা দখলের পর জঙ্গিদের এক মুখপাত্রের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন আফগানিস্তানের টোলো নিউজের মহিলা সঞ্চালক। বেহেস্তা আর্গানান্দ নামে বছর চব্বিশের ওই সঞ্চালিকা তালিবান মুখপাত্রকে লক্ষ্য করে চোখা চোখা কিছু প্রশ্নও করেছিলেন। ওই প্রশ্নের উত্তর দিতে যথেষ্ট অস্বস্তিতে পড়ে ছিলেন তালিবান নেতা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রাণের ভয়ে অকুতোভয় ওই মহিলা সাংবাদিকও দেশ ছেড়েছেন। তবে বেহেস্তা জানিয়েছেন, দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এবং আতঙ্কের পরিবেশ কাটলে তিনি আবারও আফগানিস্তানে ফিরবেন। কারণ তিনি দেশকে খুব ভালোবাসেন। ক্ষমতা দখলের পর তালিবানরা যে ক্রমশই আরও নৃশংস হয়ে উঠছে, সংবাদমাধ্যমের কোনও অধিকার যে তালিবানি জমানায় থাকবে না সেটাও তারা স্পষ্ট করে দিয়েছে। এ দিনের ঘটনা তারই প্রমাণ।
বৃহস্পতিবারের জোড়া বিস্ফোরণের পর রবিবার সন্ধায় কাবুল বিমানবন্দর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে একটি জনবসতিপূর্ণ এলাকায় রকেট হামলা চালায় আইএস-খোরাসন জঙ্গি গোষ্ঠী। ওই হামলার কিছুক্ষণের মধ্যেই পাল্টা প্রত্যাঘাত করে মার্কিন সেনা। মার্কিন সেনা সন্দেহভাজন জঙ্গিদের গোপন ঘাঁটি লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালায়। কিন্তু সেই হামলায় একই পরিবারের ৬ শিশু-সহ মোট ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে ওই পরিবারের এক আত্মীয় জানিয়েছেন। মৃতদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট শিশুটির বয়স ২ বছর। মৃত পরিবারের অপর এক প্রতিবেশী জানিয়েছেন, ওই হামলায় ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে তাঁদের আশঙ্কা। কারণ একাধিক ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়েছে। ওই পরিবারের লোকজনদেরও কোনও খোঁজ মেলেনি। সোমবার মার্কিন সেনার তরফেও ওই দুর্ঘটনার কথা মেনে নেওয়া হয়েছে। মার্কিন সেনা আরও জানিয়েছে, সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আইএস-কে জঙ্গিরা কাবুল বিমানবন্দরে লক্ষ্য করে পাঁচটি রকেট হামলা চালিয়েছে। তবে এই হামলায় কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। উন্নততর প্রযুক্তি ব্যবহার করেই এই রকেটগুলি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।