প্রাণ হাতে কাবুল থেকে ফেরা: তালিবানদের কী বুঝিয়েছিলেন? জানালেন সাংবাদিক নয়নিমা

0
3

খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেক সময়ই উপস্থিত বুদ্ধিকে কাজে লাগাতে হয় সাংবাদিকদের। তবে, কাবুলে গিয়ে প্রাণ বাঁচাতে আর দেশে ফিরতে সেই উপস্থিত বুদ্ধিকে কাজে লাগালেন সাংবাদিক নয়নিমা বসু (Nayanima Basu)৷ কীভাবে তালিবানদের (Taliban) বুঝিয়ে দেশে ফিরেছেন? কানের পাশ দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছে গুলি। দিল্লি ফিরে সেই কথাই লিখেছেন দ্য প্রিন্ট-এর প্রতিবেদনে।

আরও পড়ুন-কাবুলে আটক রাজ্যবাসীকে ফেরাতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বিডিও-দের নির্দেশ নবান্নের  

সাংবাদিকতার জন্যই নয়নিমা গিয়েছিলেন আফগানিস্তান (Afghanistan)। তালিবানের দখলে দেশ চলে যাওয়ার পরেই ভারতে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন তিনি৷ এয়ার ইন্ডিয়ার (Air India) বিমানে ১৬ অগাস্ট সকাল এগারোটায় কাবুল থেকে ফেরার কথা ছিল নয়নিমার৷ কিন্তু বিমানবন্দরে পৌঁছে দেখেন, ততক্ষণে তালিবানরা সেখানকার দখল নিয়ে নিয়েছে৷ ভয় দেখাতে বিমানবন্দরের গেট আটকে মুহুর্মুহু শূন্যে গুলি চালাতে শুরু করে তালিবানরা৷ বিমানবন্দরের বাইরে রাস্তার উপরেই বসে পড়েন সবাই। কোনওমতে গুলি থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে প্রাণ হাতে করে বসে থাকেন নয়নিমা৷ অনেক আফগান পরিবারও তখন শিশুদের নিয়ে ওইভাবেই অপেক্ষা করছে৷ শেষ পর্যন্ত বিমানবন্দরে ঢোকার অনুমতি মেলে৷ কিন্তু অনুমতি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গুলি চালানোর মাত্রা বাড়িয়ে দেয় তালিবানরা। এদিকে বিমানবন্দরে ভিতরে ঢোকার জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে যায়।

গুলি এড়িয়ে কোনওক্রমে বিমানবন্দরে ঢুকতে পারলেও, হতাশ নয়নিমা। কারণ, সব বিমানই বাতিল করে দেওয়া হয়েছে৷ চারিদিকে বিশৃঙ্খলা। এর মধ্যেই ভারতীয় দূতাবাস এবং দিল্লির বিদেশমন্ত্রকের তরফে নয়নিমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাঁকে তিনটি বিকল্প দেওয়া হয়৷ হয় তিনি যে হোটেলে ছিলেন, সেখানেই ফিরে যান। না হলে বিমানবন্দরের টেকনিক্যাল এরিয়ায় গিয়ে থাকুন। না হলে ভারতীয় দূতাবাসে আশ্রয় নিন।

নয়নিমা ভারতীয় দূতাবাসে যাবেন বলে মনস্থির করেন কিন্তু বিমানবন্দর থেকে বেরোবার সময় বিপদ। কয়েকজন তালিবান রক্ষী চিৎকার করতে করতে তাঁকে ঘিরে ধরে৷ তাঁর ব্যাগ ছুড়ে ফেলার চেষ্টা করে৷ এখানেই উপস্থিত বুদ্ধি কাজে লাগান নয়নিমা। তালিবানদের জানান, তিনি একজন ভারতীয় সাংবাদিক এবং আফগানিস্তানের পরিস্থিতি তুলে ধরতেই কাবুলে এসেছেন৷ এর পরেই তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়৷

এদিকে, বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ অনেকেই অধৈর্য হয়ে বিমানবন্দরের মূল গেট ভেঙে ভিতরে প্রবেশের চেষ্টা করতেই তালিবান রক্ষীরা গুলি চালাতে শুরু করে৷ নয়নিমা লিখেছেন, ঠিক পাশে দাঁড়ানো একজনের গুলি লাগে৷ বিমানবন্দর থেকে প্রাণ হাতে নিয়ে বেরিয়ে ভারতীয় দূতাবাসে যাওয়ার জন্য একটি ট্যাক্সিতে ধরেন ওই সাংবাদিক৷ কিন্তু মাঝরাস্তায় ফের তাঁর গাড়ি আটকায় তালিবানরা। শেষ পর্যন্ত কথা বলে দূতাবাসে যাওয়ার অনুমতি পান তিনি৷

আরও পড়ুন-বিচারপতি বিভি নাগরথনা হতে পারেন ভারতের প্রথম মহিলা প্রধান বিচারপতি

বুলেট প্রুফ গাড়িতে তুলে নয়নিমা-সহ অন্যান্য ভারতীয় সাংবাদিক এবং নাগরিকদের বিমানবন্দরে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়৷ ভারতীয় বায়ুসেনার সি-১৭ গ্লোবমাস্টার বিমানটি দাঁড়িয়েছিল কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টেকনিক্যাল এরিয়ায়। সেটিকে পাহারা দিচ্ছিল মার্কিন বাহিনী। প্রথমে গুজরাতের জামনগর। সেখান থেকে মঙ্গলবার বিকেলে দিল্লির কাছে হিন্দন বায়ুসেনা ঘাঁটিতে পৌঁছন তাঁরা৷ অবশেষে দেশের মাটি ছুঁয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন নয়নিমা। তারপরেই কলমে উঠে আসে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা।

advt 19