একুশে বাংলায় অভূতপূর্ব ফলাফলের পর এবার সর্বভারতীয়স্তরে মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee) বিজেপি (BJP) তথা মোদি বিরোধী মুখ করে তুলতে বদ্ধপরিকর তৃণমূল কংগ্রেস (TMC)। তাই দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ((Abishek Banerjee)নেতৃত্বে চব্বিশের লোকসভা ভোটকে মাথায় রেখে ভিন রাজ্যে সংগঠন তৈরিতে মরিয়া ঘাসফুল শিবির।
সেইমতোই পড়শি রাজ্য বাঙালি অধ্যুষিত ত্রিপুরায় সংগঠন বাড়াতে উঠেপড়ে লেগেছে তৃণমূল। বিজেপি প্রশাসনের বাধার মুখে পড়লেও ত্রিপুরার পলিটিক্যাল গ্রাউন্ড রিয়েলিটি রিসার্চে সেখানে পাঠানো হয়েছিল ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা IPAC-এর সদস্যদের। চলতি সপ্তাহেই আগরতলায় গিয়েছেন ব্রাত্য বসু, মলয় ঘটক, ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, ডেরেক ও’ব্রায়েন এবং কাকলি ঘোষ দস্তিদাদের মতো বাংলার হেভিওয়েট তৃণমূল নেতা-মন্ত্রী-সাংসদরা। তাঁরা ত্রিপুরার স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করে সংগঠনের কাজ খতিয়ে দেখেছেন। সোমবার যাবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
এদিকে আগরতলায় বাংলার নেতৃত্বের উপস্থিতিতেই ত্রিপুরায় খেলা শুরু করে দিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। তৃণমূলে যোগ দিলেন বিরোধী শিবিরের ৭ পরিচিত নেতা-নেত্রী। বিরোধী শিবির থেকে আগত ৭ নেতা-নেত্রীর হাতে তৃণমূলের পতাকা তুলে দেন ব্রাত্যু বসু, মলয় ঘটক, ডেরেক ও’ব্রায়েনরা। বিরোধী শিবির থেকে তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন নেতা-নেত্রীরা সেই ভিডিও টুইট করেছেন রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটক। বিরোধী শিবির থেকে সুবল ভৌমিক, প্রকাশ দাস, ইদ্রিস মিঞা, তপন দত্ত, পান্না দেব, প্রেমতোষ দেবনাথ ও বিকাশ দাস তৃণমূলে যোগ দেন । টুইটে মলয় ঘটক লেখেন, ‘’বিরোধী শিবির থেকে নেতা-নেত্রীরা তৃণমূলে যোগ দিলেন সচ্চে দিনের সন্ধানে। আর বিরোধী শিবির থেকে আজ যাঁরা তৃণমূলে যোগ দিলেন তাঁদের সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি।’’
কেন তৃণমূলে যোগদান? এ প্রসঙ্গে বিরোধী দল থেকে আসা নেতারা জানান, গোটা দেশজুড়ে বিজেপি ও নরেন্দ্র মোদির স্বৈরাচারী শাসনে বিরক্ত মানুষ। দম বন্ধ হয়ে আসছে সাধারণ মানুষের। সেখান থেকে একমাত্র সকলকে মুক্তি দিতে পারেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই আগামী দিনে ত্রিপুরার রাজনীতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বেই পথ চলতে চান তাঁরা। পশ্চিমবঙ্গের মতো ত্রিপুরাতেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নে সামিল হওয়ার জন্যই তৃণমূলের হাত ধরা। আর তেইশের বিধানসভা ভোটে ত্রিপুরা থেকে বিপ্লব দেবের বিজেপি সরকারকে উৎখাত করতে বদ্ধপরিকর।
বাংলার মতোই ত্রিপুরাতেও বামেরা এবং কংগ্রেস নিজেদের প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে এখন অতীত। তাই একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পারেন বিজেপিকে হারাতে। ঘাসফুল শিবিরে যোগ দিয়ে এমনটাই দাবি করেন সুবল ভৌমিক, প্রকাশ দাস-সহ বিরোধী শিবিরের নেতারা। তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের দাবি, এদিন বিরোধী শিবির থেকে ৪২ জন নেতা-নেত্রীর তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোভিড পরিস্থিতির জেরে জেলাশাসক এতজনকে এক জায়গায় রেখে অনুষ্ঠানের অনুমতি দেয়নি। তাই এদিন ৭ জনকে তৃণমূলে যোগ দেওয়ানো হল। বাকিদের পরে যোগদান করানো হবে। এদিকে সোমবার অভিষেকের ত্রিপুরা সফরকে কেন্দ্র করে আগরতলার তৃণমূল কর্মীদের উন্মাদনা চোখে পড়ার মতো। সাজ সাজ রব।
এদিকে বিধানসভা নির্বাচনের দেড় বছর আগে ত্রিপুরায় যখন ঘর গুছিয়ে ঘুঁটি সাজাতে শুরু করে দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস, তখন রাজ্যের অন্যতম চর্চিত নেতা সুদীপ রায় বর্মন (Sudip Roy Barman) কোথায়? বর্তমানে তাঁর রাজনৈতিক অবস্থা কী? ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি তথা প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা দলবদলে এখন গেরুয়া শিবিরে। গত বিধানসভায় বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর মন্ত্রিত্বও পেয়েছিলেন সুদীপবাবু। কিন্তু বিপ্লব দেবের ক্যাবিনেটে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেননি। বিজেপি না ছাড়লেও সরকারের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক কার্যত বিচ্ছিন্ন। সংগঠনের কোনও পদেও নেই তিনি। একদা মুকুল রায় ঘনিষ্ঠ এই নেতা বিজেপিতে কোণঠাসা থাকার পর মনে করা হয়েছিল তৃণমূলে ফিরতে পারেন। কিন্তু দিল্লি থেকে ঘুরে আসার পর সুদীপ রায় বর্মন-এর দলবদলের চর্চা এখন ঠান্ডা ঘরে। তাছাড়া তিনি এতবার দলবদল করেছেন যে, রাজ্য রাজনীতিতে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায়।
এই আলোচনার মাঝে রাজ্যজুড়ে যখন তৃণমূলের একটা সম্ভাবনা নতুন করে তৈরি হয়েছে, তখনই ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করলেন সুদীপ। অন্তত তাঁর ফেসবুক পোস্ট তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মত রাজনৈতিক মহলের। আজ, শুক্রবার সুদীপ রায় বর্মন নিজের ফেসবুকে অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট করেন। তার পরই শুরু হয়েছে জল্পনা।
এদিন তিনি লেখেন, “রাগ, হতাশা কিংবা আবেগতাড়িত হয়ে চটজলদি নেওয়া কোনও সিদ্ধান্ত জাতীয়তাবাদ বিরোধী শক্তির হাত শক্ত করে। জাতীয়বাদি শক্তির সঙ্গে থাকুন। শীর্ষ নেতৃত্বের উপর ভরসা রাখুন।” তাঁর এমন পোস্ট দেখে রাজনৈতিক মহল মনে করছে, দল বদলে তৃণমূলে যাওয়ার হিড়িক দেখেই পরোক্ষে নিজের মতামত প্রকাশ করলেন তিনি।
আরও পড়ুন:বিজেপির হাতছাড়া হতে চলেছে জলপাইগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত