UPSC-র নির্দেশ মেনেই পশ্চিমবঙ্গের সম্ভাব্য ডিজির তালিকায় রাজীব কুমার! কিশোর সাহার কলম

0
1
কিশোর সাহা

এমনও হয়!

যে রাজীব কুমারকে জেরা করা নিয়ে সিবিআই শোরগোল ফেলে দিয়েছিল, ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (ইউপিএসসি) নির্দেশে সেই আইপিএসের নামও পশ্চিমবঙ্গের সম্ভাব্য ডিরেক্টর জেনারেলের তালিকায় ঢুকে পড়ে!

হ্যাঁ, এমনই ঘটতে চলেছে। কারণ, গত জুলাই মাসে ইউপিএসসি-র তরফে রাজ্যের কাছে পাঠানো চিঠিতে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ১৯৮৬ সাল থেকে ১৯৯১ ব্যাচের যে আইপিএস অফিসাররা পশ্চিবঙ্গ ক্যাডারে কর্মরত, তাঁদের সকলেরই নাম সম্ভাব্য ডিজি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে পাঠাতে হবে।

ইউপিএসসির বিধি অনুযায়ী, ডিজি হতে গেলে ন্যূনতম ৩০ বছর চাকরি করতে হবে এবং যে দিন ডিজি হিসেবে নিয়োগ হবে সে দিন থেকে কমপক্ষে ৬ মাস চাকরি থাকতে হবে। সেই হিসেবে অন্তত ২১ জনের নামের তালিকা রাজ্য প্রাথমিকভাবে তৈরি করেছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।

সূত্র অনুসারে, সেই তালিকায় সিনিয়রিটি অনুসারে যে আইপিএসদের নাম রয়েছে তাঁরা হলেন, মনোজ মালব্য, কুলদীপ সিং, শশীভূষণ সিং টোমার, সুমন বালা সাহু, পি নীরজনয়ন, অধীর শর্মা, সঞ্জয় চন্দর, গঙ্গেশ্বর সিং, বি নাগা রমেশ, হরমনপ্রীত সিং, জুলফিকার হাসান, বিবেক সহায়, সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়, রাজীব কুমার, রণবীর কুমার, রাজেশ কুমার, দেবাশিস রায়, জয়ন্ত কুমার বসু, অনুজ শর্মা, জগমোহন ও নটরাজন রমেশবাবু। সরকারি সূত্রের খবর, ওই তালিকা এখনও দিল্লিতে ইউপিএসসির কাছে যায়নি এবং যোগ্যতম হিসেবে যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁদের একজন এখনও রাজ্য সরকারের কাছে যাবতীয় তথ্য জমা করেননি।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা অনুযায়ী, যে কোনও রাজ্যে নতুন ডিজি নিয়োগের প্রাক্কালে রাজ্য সরকারকে যোগতমদের তালিকা তৈরি করে ইউপিএসসিকে পাঠাতে হবে। সেই তালিকা থেকে ইউপিএসসি ৩টি নাম বাছাই করে রাজ্যের কাছে পাঠাবে। রাজ্য সরকার সেই তিনটি নাম থেকে যে কোনও একজনকে ডিজি হিসেবে নিয়োগ করতে পারবে। সেই বাছাই পর্বের জন্য সাধারণত দিল্লিতে ইউপিএসসির চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে বা তাঁর প্রতিনিধির উপস্থিতিতে ৫ সদস্য বিশিষ্ট এমপ্যানেলমেন্ট কমিটির বৈঠক হয়। যেখানে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিবও সদস্য। তিনি নিজে বৈঠকে না থাকলেও স্পেশাল সেক্রেটারি পদমর্যাদার কাউকে পাঠাতে পারেন। সেখানে রাজ্যের তরফে বিদায়ী ডিজি এবং মুখ্য সচিবের উপস্থিত থাকাটা বাধ্যতামূলক। কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র দফতর ওই কমিটির পঞ্চম সদস্য হিসাবে কোনও কেন্দ্রীয় পুলিশ বাহিনী অথবা কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর সর্বোচ্চ কর্তাকে মনোনীত করে থাকেন। পাঁচ সদস্যের এমপ্যানেলমেন্ট কমিটির তিনজনই কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি।

তাই তালিকা পাঠানোর সময়ে রাজ্যকে অনেক দিকেই খেয়াল রাখতে হয়। যেমন, যে সিনিয়র আইপিএসদের চাকরির মেয়াদ নতুন ডিজি নিয়োগের দিন থেকে ৬ মাসের কম, তাঁদের নাম তালিকাভুক্ত করা হয় না। তা ছাড়া, সিনিয়র আইপিএসদের মধ্যে কারও বিরুদ্ধে কোনও তদন্তে চার্জশিট হয়ে থাকলে অথবা বিভাগীয় তদন্তে বিরূপ রিপোর্ট থাকলে সেটাও উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক।

রাজ্যের বর্তমান ডিজি বীরেন্দ্র ৩১ অগাস্ট অবসর নেবেন। তার আগেই ইউপিএসসির কাছে রাজ্যকে তালিকা পাঠাতে হবে। সাধারণত, যে মাসে কোনও রাজ্যের ডিজি অবসর নেন, তার শেষ সপ্তাহেই ইউপিএসসি বৈঠকে বসে তিনজনের তালিকা তৈরি করে। সেখানে সিনিয়রিটি, দক্ষতা ও আরও অনেক বিষয় বিবেচনার পরে তালিকাভুক্তদের যে কারও নামই বাছাই তিনজনের মধ্যে ঢুকতে পারে।

সেই তালিকায় কোন তিনজনের নাম থাকবে তা জানতে অগাস্টের শেষ সপ্তাহ অবধি অপেক্ষা করতে হবে।
আপাতত এটাই বড় বিষয় হল, নানা বিষয়ে যতই বিতর্ক থাকুক না কেন, সিনিয়রিটি ও দক্ষতার বিচারে কিন্তু রাজীব কুমারের নামও রাজ্যের সম্ভাব্য ডিজির তালিকাভুক্ত হতে চলেছে। তাও একটি কেন্দ্রীয় সংস্থা মানে ইউপিএসসির চিঠি মেনেই।

এ এক অদ্ভুত সমাপতন বটে!

আরও পড়ুন- সব মাধ্যমিক পাশ পড়ুয়াকে একাদশে ভর্তি নিতে আসন সংখ্যা বাড়ল স্কুলে