একুশের ভোটে বিজেপির পরাজয়ের পোস্টমর্টেম করেছেন তথাগত রায় ৷
যে একাধিক কারণ তিনি তুলে ধরেছেন তার অন্যতম, “ভোটপ্রচারে বিজেপি খুবই অশালীন, অশিষ্ট ভাষা প্রয়োগ করেছিলো৷” দৃষ্টান্ত তুলে তথাগত বলেছেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বারমুডা পরার কথা পর্যন্ত বলা হয়েছে। একথা কোনও মহিলাকে কখনই বলা যায় না। বাংলার সংস্কৃতি কখনও এসব অভদ্র কথা মেনে নেয় না, এবারও মানেনি৷”
বিজেপির পরাজয়ের একাধিক কারণ তিনি খুঁজে বার করেছেন৷ এক টিভি সাক্ষাৎকারে এ সব নিয়ে বিশদে ব্যাখ্যাও দিয়েছেন৷ স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে তোপ দেগেছেন গেরুয়া নেতাদের দিকেও৷
নির্বাচনে বিজেপির এই পরাজয়ের কারণ হিসাবে তথাগত রায়ের বয়ানেই ব্যাখ্যা –
◾ বিজেপির এই লজ্জাজনক পরাজয়ের সবথেকে বড় কারণ হল প্রার্থী বাছাই৷ দলীয় প্রার্থী বাছাই এতটাই খারাপ হয়েছে যে তা আলোচনার উর্ধ্বে ৷ প্রার্থী হিসাবে মোট ১৪০ জন দলবদলুকে বাছাই করা হয়েছিলো৷ এদের মধ্যে ৫-৬ জন জিততে পেরেছেন৷ বাকি সবাই হেরেছেন। এই বিষয়টি মানুষের মনে ভুল বার্তা দিয়েছে।
◾ এ রাজ্যে বিজেপির একটা বাঙালি চেহারা রয়েছে৷ সেটা আমরা মোটেই প্রকাশ করতে পারিনি। উল্টে মানুষের মাথায় ঢুকে গিয়েছে যে এটা একটি হিন্দিভাষীদের পার্টি। কারণ, ক্রমাগত হিন্দিভাষী নেতারা এসেছেন। ভোট- সংগঠনের মাথায় হিন্দিভাষী নেতারা বসে ছিলেন। তাঁরা পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করছেন। সমস্ত ভাষণ হিন্দিতে হয়েছে, যা গ্রামবাংলার মহিলাদের বেশিরভাগই বোঝেন না। এই হিন্দিতে প্রচার মানুষের মাথার উপর দিয়ে চলে গিয়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবে তৃণমূলকে ‘বাংলার মেয়ে’ নামক অস্ত্র বিজেপিই যেন তুলে দিয়েছে।
◾ নির্বাচনী ভাষণে খুব অশালীন, অশিষ্ট ভাষা প্রয়োগ করা হয়েছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বারমুডা পরার কথা বলা হয়। এটা একটা মহিলাকে কখনই বলা যায় না। বাংলার সংস্কৃতি কখনও এই কথা মেনে নেয় না। এছাড়াও, ‘সব কটাকে মেরে ফেলব’, ‘সব কটাকে শুইয়ে দেব’, ‘শবদেহের লাইন লাগিয়ে দেব’, ভোটপ্রচারে এগুলো কী ধরনের কথা? এগুলো বলা একদম ঠিক হয়নি৷ মানুষও একেবারেই ভালোভাবে নেয়নি।
আরও পড়ুন-আমি সোমেন মিত্রের ছেলে বলেই ওনার “ইগো”! অধীরের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক রোহন
◾ তৃণমূল জিতলে যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই যে মুখ্যমন্ত্রী হবেন, তা সবাই জানতো৷ কিন্তু বিজেপি যদি জিতে যায়, তখন কে মুখ্যমন্ত্রী হবে, তা নিয়ে মানুষ অনেকটাই ধাঁধায় ছিলো। অথচ, একজনের বা একাধিক নামও তখন কিন্তু বলা যেত। বলা যেতো দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায়, জয়প্রকাশ মজুমদার বা লকেট চট্টোপাধ্যায়ের নাম। এরকম কোনও নাম বলাই যেত। এটা আমরা করিনি, না করার ফলে আমাদের ক্ষতি হয়েছে।
◾আমরা যেভাবে হেরেছি, বিশেষত কলকাতার আসনগুলিতে, তা খুবই দুশ্চিন্তার। নগরীর-নটিদের কেন প্রার্থী করা হলো, আমি তাও ভেবে পাই না। এই নটি-রা এতটাই নির্বোধ যে মদন মিত্রর সঙ্গে জলকেলি করতেও দু’বার ভাবেননি। করতে হলে লুকিয়ে লুকিয়ে কর। এরা জলকেলির ছবি আবার সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোডও করেছে। এতে মানুষের মনে কী প্রভাব পড়ে, তা বোঝায় ক্ষমতাও এদের ছিলো না৷
◾ CAA, NRC, এই দুই
বড় পদক্ষেপ প্রচারের বাইরে ছিলো৷ নাগরিকত্ব দেওয়ার এই বিষয়টি ভালোভাবে প্রচার করা উচিত ছিল। তা হয়নি৷ সেটা শুধু মতুয়া বেল্টে প্রচার করা হয়েছিল। যে কারণে ওখানে আমরা সাফল্য পেয়েছি। কিন্তু বাকি বাংলায় সেটা প্রচার করা হয়নি।
◾ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের আদর্শকে সামনে আনা হয়নি। যে ৪ জন নির্বাচনের দায়িত্বে ছিলেন, দিলীপ, কৈলাস, শিবপ্রকাশ, অরবিন্দ মেনন, তাঁরা এই বিষয়ে অবগত ছিলেন বলে মনে হয় না।