নন্দীগ্রামের ভোট- সংক্রান্ত নথি নির্বাচন কমিশনকে সংরক্ষণের নির্দেশ হাইকোর্টের

0
1

নন্দীগ্রাম কেন্দ্রের নির্বাচন সংক্রান্ত সমস্ত নথি মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সংরক্ষণের নির্দেশ নির্বাচন কমিশনকে। বুধবার এই নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্টের বিচারপতি শম্পা সরকার৷

নথি’র পাশাপাশি ওই নির্বাচনে ব্যবহৃত সব EVM, ভিডিয়োগ্রাফ এবং গণনা সম্পর্কিত সমস্ত নথিও উপযুক্ত নিরাপত্তায় সংরক্ষণ করতে বলা হয়েছে রাজ্যের চিফ ইলেকশন অফিসারকে৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রুজু করা হাই-ভোল্টেজ এই ‘ইলেকশন-পিটিশন’-এর পরবর্তী শুনানি হবে ১২ আগস্ট ৷ একইসঙ্গে এদিন মামলার নিয়মমাফিক আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছে নন্দীগ্রামের বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী-সহ মামলায় যুক্ত সব পক্ষকেই৷

 

নন্দীগ্রামের ভোটের পুনর্গণনার দাবিতে হাইকোর্টে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দায়ের করা মামলার প্রথম দিনের শুনানিতে বিচারপতি শম্পা সরকার জানান, হাইকোর্টের ওরিজিনাল সাইডের

রেজিষ্ট্রারের রিপোর্ট অনুযায়ী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবেদনে কোনও ত্রুটি নেই।

 

পুনর্গণনা সংক্রান্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দায়ের করা এই মামলাটি প্রথমে নথিভুক্ত হয়েছিলো বিচারপতি কৌশিক চন্দের এজলাসে৷ কিন্তু বিচারপতি চন্দের বিজেপি-যোগের অভিযোগ এনে মামলাকারী ওই এজলাস বদলের আর্জি জানান৷ বিচারপতি চন্দের এজলাসে নিরপেক্ষতার অভাবের সওয়ালের পরই গত বুধবার নন্দীগ্রাম-মামলা থেকে নিজেই সরে যান বিচারপতি কৌশিক চন্দ৷ ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সোমবার এই মামলা পাঠান বিচারপতি শম্পা সরকারের বেঞ্চে৷ এই বেঞ্চেই এদিন মুখ্যমন্ত্রীর দায়ের করা মূল মামলার প্রথম শুনানি শুরু হয়েছে৷

 

◾এদিনের শুনানিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবী এস এন মুখোপাধ্যায় – গত ২১মে আমরা এই ইলেকশন- পিটিশন দাখিল করি৷ বিধি মেনে ৪৫ দিনের মধ্যেই পিটিশন পেশ করা হয়। ওই সময় মামলাটি বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের এজলাসে ছিলো। গত ১৮ জুন মামলাটি পাঠানো হয়

বিচারপতি কৌশিক চন্দ’র এজলাসে৷ তিনি এই মামলা থেকে সরে যাওয়ার পর এই এজলাসে মামলা নথিভুক্ত হয়েছে৷ এই মামলার আবেদনকারী আদালতে ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন গত ২৪ জুন।

 

◾বিচারপতি শম্পা সরকার – তাহলে আবেদনকারীর উপস্থিতির বিষয়টি হয়ে গিয়েছে৷ ফর্মালিটি অলরেডি ওভার৷

 

◾আইনজীবী এস এন মুখোপাধ্যায় – হ্যাঁ, হয়ে গিয়েছে৷

 

◾বিচারপতি শম্পা সরকার –

ওরিজিনাল সাইডের রেজিষ্ট্রারের রিপোর্ট অনুযায়ী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবেদনে কোনও ত্রুটি নেই। মামলাটি মূলত নন্দীগ্রাম কেন্দ্রের গণনাকেন্দ্রের নিরাপত্তা, গণনা-প্রক্রিয়া ও গণনার ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত৷

 

এর পরই বিচারপতি শম্পা সরকার জানিয়ে দেন, এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে আগামী ১২ আগস্ট ৷

 

প্রসঙ্গত, ‘নন্দীগ্রাম কেন্দ্রের ভোট গণনায় কারচুপি করে জয়ী হয়েছে বিজেপি৷’ গত ২ মে থেকেই এই অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। সেদিনই মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “কারচুপি হয়েছে, আমরা কোর্টে যাবো”৷ সেই অভিযোগকে সামনে রেখেই বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন তৃণমূলপ্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

 

নন্দীগ্রাম কেন্দ্রের পুনর্গণনা সংক্রান্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দায়ের করা ইলেকশন পিটিশনের মূল ভিত্তি মূলত এই রকম –

◾ঘুষ দেওয়া-সহ একাধিক দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে – শুভেন্দু অধিকারী, তাঁর এজেন্ট এবং তাঁর অন্যান্য সহকর্মীরা ভোট আদায়ের জন্য ঘুষ দিয়েছে৷ এই অপরাধ আইনের ১২৩ (১) ধারায় বিচারযোগ্য৷

 

◾ষড়যন্ত্রমূলক প্রভাব বিস্তার করা হয়েছে – শুভেন্দু অধিকারী, তাঁর নির্বাচনী এজেন্ট এবং তাঁর অন্যান্য সহকর্মীরা শুভেন্দুর সম্মতিতে বেপরোয়া হুমকি দিয়েছে ভোটারদের৷ হিংসার হুমকি দিয়ে

ভোটারদের অবাধ ভোটদানকে প্রভাবিত করেছে৷ এই অপরাধ

আইনের ১২৩ (২) ধারায় বিচারযোগ্য৷

 

◾ধর্ম, সম্প্রদায় ইত্যাদির ভিত্তিতে ভোটের জন্য আবেদনের পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়িয়েছে – শুভেন্দু অধিকারী এবং তাঁর লোকজন সাম্প্রদায়িকতায় উসকানি দিয়ে ভোটারদের কাছে আবেদন করেছেন এবং সংখ্যালঘু ভোটারদের বিরুদ্ধে ঘৃণ্য, বিদ্বেষমূলক বক্তব্য রেখেছেন৷ এই অপরাধ আইনের ১২৩ (৩) এবং (৩এ) ধারায় বিচারযোগ্য৷

 

◾ নির্বাচনের জয়লাভ করতে সিআরপিএফ, পুলিশ এবং নির্বাচন কমিশনের কর্তাদের সরাসরি সহায়তা নিয়েছে৷ এই অপরাধ আইনের ১২৩ (৭) ধারায় বিচারযোগ্য৷

 

◾বুথ দখল – শুভেন্দু অধিকারী এবং তাঁর এজেন্টরা শুভেন্দু’র নির্দেশে নির্বিচারে নন্দীগ্রাম কেন্দ্রের বুথ দখল করার মতো অপরাধ করেছেন৷ এই অপরাধ আইনের ১২৩ (৮) ধারায় বিচারযোগ্য৷

 

◾গণনা প্রক্রিয়া আইনমাফিক হয়নি – গণনা প্রক্রিয়া বিধি অনুসারে হয়নি৷ সংশ্লিষ্ট ১৭সি ফর্মে এই বেনিয়ম লক্ষ্য করা গিয়েছে৷ এই পদ্ধতি Conduct of the Election Rules, ১৯৬১-র পরিপন্থী ৷

 

বুধবারের শুনানিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষে আদালতে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী এস এন মুখোপাধ্যায় এবং আইনজীবী সঞ্জয় বসু৷