‘CBI নয়, কসবা ভুয়ো- ভ্যাকসিন কাণ্ডের তদন্ত চালিয়ে যাবে কলকাতা পুলিশই৷ এইমুহূর্তে CBI- তদন্তের কোনও প্রয়োজনই নেই’।
ভুয়ো-ভ্যাকসিন কাণ্ডের CBI-তদন্ত দাবিতে কলকাতা হাইকোর্টে রুজু করা সব ক’টি জনস্বার্থ মামলার আর্জি খারিজ করে শুক্রবার এই রায় ঘোষণা করেছে
হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ৷
ডিভিশন বেঞ্চ বলেছে, “প্রাথমিকভাবে কলকাতা পুলিশের তদন্তে গাফিলতি আছে বলে আদালত মনে করছে না৷ রাজ্যের তদন্তে এই মুহূর্তে হস্তক্ষেপ করবে না আদালত”। ভ্যাকসিন- কাণ্ডের এই মামলাগুলি ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি এজলাসেই শুনানি চলছিলো৷ কিন্তু জরুরি পারিবারিক কারণে তাঁকে বাড়ি যেতে হওয়ায় এদিন শুনানি হয় বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় এবং বিচারপতি অনিরুদ্ধ রায়ের ডিভিশন বেঞ্চে৷
আরও পড়ুন:কোভ্যাক্সিন ডেল্টা প্রজাতি রুখতে তেমন না হলেও কার্যকরী, জানালো হু
এদিনের শুনানির শুরুতেই ভুয়ো-ভ্যাকসিন কাণ্ড নিয়ে নিজেদের বক্তব্য জানিয়ে হলফনামা জমা দেয় রাজ্য। এক মামলাকারীর তরফে কৌঁসুলি বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য সারদা মামলায় CBI তদন্তের নির্দেশের উল্লেখ করে বলেন, “এই টিকাকাণ্ডের তদন্ত গভীরে গিয়ে করছে না কলকাতা পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল। এর পিছনে রাজনৈতিক যোগাযোগের আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ এই ঘটনায় বৃহত্তর ষড়যন্ত্র রয়েছে৷ গভীরে গিয়ে তদন্ত করতেই তদন্তভার CBI- কে দেওয়া প্রয়োজন”৷
এর উত্তরে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত (AG) বলেন:
◾AG – তদন্ত সঠিক পথে চলছে৷ গত ৩০ জুন দেবাঞ্জন দেবকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। এ পর্যন্ত ৫০ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে৷ মেডিক্যাল বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে আমরা তদন্ত নিয়ে এখনই প্রকাশ্যে কিছু বলছি না।
◾AG – এই আবেদন সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এই বিষয়ে অন্য কোনও তদন্তের প্রয়োজন নেই। আদালত কলকাতা পুলিশের তদন্তের উপর ভরসা রাখতে পারে। আমরা তদন্তের গতিপ্রকৃতি আদালতে জানাবো৷
◾বিচারপতি ইন্দ্র প্রসন্ন মুখোপাধ্যায় – অভিযুক্ত এখন কোথায় আছে? পুলিশ হেফাজতে না জেল হেফাজতে?
◾AG – জেল হেফাজতে৷
◾AG – আমরা খুব দ্রুত এই মামলায় চার্জশিট পেশ করব। তদন্ত দ্রুত হচ্ছে। কয়েকটি রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে, সেগুলো চলে এলেই চার্জশিট পেশ করা হবে৷
◾AG – ধৃত দেবাঞ্জন দেব কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তির সঙ্গে ছবি তুলেছেন মানেই ওই রাজনৈতিক ব্যক্তি অপরাধী হতে পারেন না৷ ওই লোকটি তো বিচারকের সঙ্গেও ছবি তুলেছেন৷ তার মানে ওই বিচারকও অপরাধী ? এই অভিযোগ এবং মামলা ‘পলিটিক্যালি মোটিভেটেড’, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত৷ সংবাদ মাধ্যমে খবরের জন্য এই মামলা। রোজই তো টক-শো হচ্ছে।
◾AG – মাননীয় রাজ্যপালের সঙ্গে বেশ কিছু মহিলার একটি ছবিতে এক ব্যক্তিকে দেখা গিয়েছে। ওই ব্যক্তির সঙ্গে দেবাঞ্জনের সম্পর্ক ছিল।
কারুর সঙ্গে ছবি তুললে সেই ব্যক্তিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো ঠিক নয়৷
◾আর এক মামলাকারীর তরফে কৌঁসুলি বিল্বদল ভট্টাচার্য – ধৃত ব্যক্তির নামে পূর্ব-বিধাননগর থানায় চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা নেওয়ার অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। কিন্তু কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। ধৃতের প্রভাব এতটাই বিস্তৃত৷
◾আর এক মামলাকারীর তরফে কৌঁসুলি স্মরজিত রায়চৌধুরি – কসবায় ভুয়ো বা জাল টিকা দেওয়া হয়নি৷ টিকা ভুয়ো বা জাল নয়। কীভাবে জানা গেলো ওই সব টিকা ভুয়ো ? যে রিপোর্ট জমা পড়েছে তাতে বলা আছে ‘সাসপেক্ট-ফেক’। কোনও পরীক্ষাকেন্দ্রের পরীক্ষায় বলা হয়নি যে টিকা জাল বা ভুয়ো ছিলো। তার মানে এই নয়, এটা ভুয়ো-টিকা৷
◾বিচারপতি ইন্দ্র প্রসন্ন মুখোপাধ্যায়, স্মরজিত রায়চৌধুরিকে – আপনার বক্তব্যের যৌক্তিকতা কোথায়? এসব সঠিক নয়। আপনার আবেদন শোনার আর প্রয়োজন নেই৷ আপনি সম্পূর্ণ ভুল বলছেন। যে কেউ, যখন ইচ্ছা হলো, সিরিঞ্জ তুলে নিয়ে ভ্যাকসিন দিতে পারে। এটা সম্ভব?
আর এর পরেই কসবা ভুয়ো-টিকাকাণ্ডের CBI তদন্তের আর্জি খারিজ করে ডিভিশন বেঞ্চের দুই বিচারপতি, ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় এবং অনিরুদ্ধ রায় রায় ঘোষণা করে জানান, “প্রাথমিকভাবে তদন্তে গাফিলতি আছে বলে আদালত মনে করছে না৷ রাজ্যের তদন্তে এই মুহূর্তে হস্তক্ষেপও করবে না আদালত৷ কলকাতা পুলিশের ‘বিশেষ তদন্তকারী দল’ বা SIT ভুয়ো-ভ্যাকসিন কাণ্ডের তদন্তের কাজ চালিয়ে যাবে। এই মুহূর্তে CBI তদন্তের কোনও প্রয়োজনই নেই। পরবর্তীকালে যদি প্রয়োজন হয়, তখন আদালত চিন্তা-ভাবনা করবে।”