
গত মঙ্গলবার নতুন এই মন্ত্রকটি গঠন করেছেন নরেন্দ্র মোদি। অর্থ, পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র বা প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মতো সাংঘাতিক গুরুত্বপূর্ণ কোনও মন্ত্রকও এটি নয়৷ নতুন এই মন্ত্রকের নাম, Ministry of Co- operation বা সমবায়মন্ত্রক৷
আর প্রথমবারই এই মন্ত্রকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দেশের মেগাওয়েট স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে। অমিত শাহ এখন থেকে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সমবায়মন্ত্রীও৷
রহস্য এখানেই এবং একাধিক প্রশ্নও আছে৷
প্রথম প্রশ্ন, পৃথক সমবায়মন্ত্রক গঠন করে প্রধানমন্ত্রী কি আরও একবার দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো বা ফেডারেল স্ট্রাকচারে আঘাত হানলেন ?
সংবিধানের সপ্তম তফসিলে স্পষ্ট বলা আছে, যে কোনও সমবায় সংস্থা রাজ্যের তালিকাভুক্ত৷ সমবায় সংস্থার ভালোমন্দ সবই রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণে৷ তাহলে রাজ্যের তালিকাভুক্ত কোনও ক্ষেত্রের জন্য দেশের প্রধানমন্ত্রী নিজের মন্ত্রিসভায় আলাদা মন্ত্রক কেন বানালেন? কেন যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো বা ফেডারেল স্ট্রাকচারে ফের একবার পরিকল্পিত আঘাত হানা হলো ?
দ্বিতীয়ত, আর পাঁচটা নতুন ঘোষণার সময় যেমন বেলাগাম ভালো ভালো কথা বলা হয়, এই নতুন সমবায়মন্ত্রক ঘোষণার সময়ও তার ব্যতিক্রম হয়নি৷ কেন্দ্রের তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘দেশের সমবায় আন্দোলনকে শক্তিশালী করতে এই মন্ত্রকটি যে কোনও ধরনের প্রশাসনিক, আইনি ও নীতিগত সহায়তা দেবে। সমাজের তৃণমূলস্তরে সমবায় আন্দোলনকে পৌঁছে দিতে কাজ করবে এই মন্ত্রক।’ বলা হয়, ‘আগামী দিনে সমবায়ভিত্তিক উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ নির্ধারণ ও ঘোষণার ক্ষেত্রেও নয়া মন্ত্রক সহযোগিতা করবে’৷ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন এক ট্যুইটেও জানান, ‘দেশের সমবায় আন্দোলনকে আরও শক্তপোক্ত করতে পৃথকভাবে প্রশাসনিক, আইনি ও নীতিগত সহযোগিতা প্রদান করবে নতুন এই মন্ত্রক’ ৷ কেন্দ্রের দাবি, সমবায় আন্দোলনে জোর দিয়ে একাধিক রাজ্যে ছড়িয়ে থাকা সমবায় সংস্থাগুলির উন্নয়ণের জন্যই পৃথক সমবায় মন্ত্রকের গঠন৷ সরকারি পরিভাষায় এর নাম ‘সহকারিতা মন্ত্রক’৷ এতদিন এই সব বিষয়গুলি কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রকের অধীনে ছিলো৷ এবার এসব দেখবেন শাহ৷
শুনতে খুবই ভালো কথাগুলি৷ তবে আকাশ থেকে চাঁদ পেড়ে আনার মতো কঠিন কিছু কাজও এসব নয়৷ তাই প্রশ্ন উঠেছে প্রধানমন্ত্রী এই মন্ত্রকের ভার অমিত শাহকে দেওয়ার পরই৷ মোদি মন্ত্রিসভায় বা দল হিসাবে বিজেপিতে ঘোষিত এই বাণী-র রূপায়ণ করার দক্ষতা একজনেরও নেই, এটা মানতে একটু সমস্যা তো হচ্ছেই৷ কেন এই ‘ছোটখাটো’ এক মন্ত্রকের ঠাণ্ডা মাথায় ছক কষে তুলে দেওয়া হলো অমিত শাহের মতো এক ‘মেগা’ মিনিস্টারের হাতে ? বহু রাজ্যেই আলাদা সমবায় দফতর আছে৷ সে সব রাজ্যের শাসক দলের এক বা দুই নম্বর ব্যক্তি এই দফতরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী নন৷ কাউকে ছোট না করেই বলা যায় মন্ত্রিসভার তালিকার একটু পিছন দিকেই থাকেন এই দফতরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী৷ তাহলে কেন অমিত শাহ ?
বিজেপি ইতিমধ্যেই বলা শুরু করেছে, আমেদাবাদের সমবায় ব্যাঙ্কের সঙ্গে অমিত শাহ দীর্ঘদিন যুক্ত ছিলেন৷ তিনি অভিজ্ঞ, তাই তিনি দেশের সমবায়মন্ত্রী৷
সরকারি ব্যাখ্যা যত সহজ বলে দেখানো হচ্ছে, বিষয়টি এত সহজ নয়৷ কেন্দ্রের আস্তিনে অন্য তাস লুকানো আছে বলেই রাজনৈতিক মহলের ধারনা৷ এভাবে আলাদা সমবায়মন্ত্রক গঠনের পিছনে সিঁদুরে মেঘ রয়েছে৷
কেন্দ্রের শাসক দলের পরম সুহৃদ নীরব মোদি, চোকসি, বিজয় মালিয়াদের সৌজন্যে ইতিমধ্যেই দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির গণেশ প্রায় উল্টেছে৷ একের পর এক এই ব্যাঙ্কের সঙ্গে সেই ব্যাঙ্ক মিশিয়ে, কিছু ব্যাঙ্ক তুলে দিয়েও মোদিবাবু পরিস্থিতি সামাল দিতে শোচনীয় ব্যর্থ হচ্ছেন৷ ওদিকে দেশের অর্থনীতির নৌকো ফুটো হয়ে হু হু করে জল ঢুকছে৷ টাকা কোথায় ?
টাকা আছে দেশের সমবায় ব্যাঙ্কগুলিতে৷ নিম্নবিত্তের টাকা৷ সেই টাকায় কি তাহলে চোখ পড়েছে কেন্দ্রের ? সে কারণেই ‘যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো’ পিছনে বাঁশ ঢুকিয়ে আলাদা সমবায়মন্ত্রক? তাহলে কি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি লুঠ করার পর এবার সমবায় ব্যাঙ্কের সঞ্চিত অর্থ লুঠ করার কৌশল করেছে কেন্দ্র ? সেই চেষ্টারই প্রথম ধাপ নতুন এই সমবায়মন্ত্রক ? এবং বিষয়টি গুরুতর বলেই এই মন্ত্রকের দায়িত্বে অমিত শাহ ?
গোটা বিষয়টির গায়ে একটা আঁশটে গন্ধ রয়েছে৷ সেই গন্ধ ভেসেও বেড়াচ্ছে৷ এখন দেখার কোন পারফিউম দিয়ে সমবায়মন্ত্রী অমিত শাহ এই গন্ধ ঢাকা দেন !
আরও পড়ুন- নিশীথের বিরুদ্ধে 13টি ক্রিমিনাল কেস! টুইটারে বোমা ফাটালেন কুণাল