‘কংগ্রেস তাঁকে খুনের ষড়যন্ত্র করেছিলো’, নিজের বইয়ে লিখলেন কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়

0
1

কং-বাম জোট এবার বোধহয় ভেন্টিলেশনে যাওয়ার মুখে !

তবে প্রদেশ কংগ্রেস যথারীতি বিষয়টি গায়ে না মেখে হজম করে নিলে, তেমন কিছুই হবে না৷ শুধু কংগ্রেসকে আগামীদিনে বহন করতে হবে ‘ছোট্ট’ একটি অভিযোগ, প্রবীণ সিপিএম নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়কে এক সময় খুন করার চক্রান্ত করেছিল কংগ্রেস। আর এই অভিযোগ এনেছেন স্বয়ং কান্তিবাবুই৷ অভিযোগটি মাথা পেতে মেনে নিলে, দিব্যি ‘সুসম্পর্ক’ থাকবে আলিমুদ্দিন আর বিধান ভবনে৷ চলবে সহবাসও৷

বই লিখেছেন কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়৷ নিজের রাজনৈতিক জীবনের নানা ওঠাপড়ার কথা বলেছেন এই বইয়ে৷ নাম, ‘রক্তপলাশের আকাঙ্খা’। আগামী ৮ জুলাই, জ্যোতি বসুর জন্মদিনে ভার্চুয়ালি এই বইটি প্রকাশ করবেন চিত্র পরিচালক তরুণ মজুমদার৷

এই বইতেই কংগ্রেসকে কার্যত ধুইয়ে দিয়েছেন কান্তিবাবু৷ জোট-শরিক কংগ্রেসের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক বিস্ফোরক মন্তব্য। বাম সরকারের প্রাক্তন মন্ত্রী এমনও লিখেছেন, ‘কংগ্রেস তাঁকে খুন করার চক্রান্ত করেছিলো’৷ সত্তরের দশকে বামকর্মীদের খুন করার জন্য কংগ্রেস এবং নকশালদের অভিযুক্ত করেছেন কান্তি। নিজের জবানবন্দিতে লেখা এই বইতে কান্তি এক জায়গায় বলেছেন, এক কংগ্রেস নেতা তাঁকে বলেছিলেন, “কান্তি, তুই যাদবপুর থেকে পালিয়ে যা। এখানে থাকলে খুন হয়ে যাবি। তোকে আমরা বাঁচাতে পারব না। জানিস তো আমাদের দলটা কেমন।”


এই গুরুতর অভিযোগের পাশাপাশি ১৯৭২-এর নির্বাচন নিয়ে কংগ্রেসকে তুলোধনাও করেছেন কান্তিবাবু৷ পাশাপাশি নিজের এই বইয়ে অনেক অজানা কথাও বলেছেন৷ জ্যোতি বসুকে প্রধানমন্ত্রী হতে না দেওয়ার দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভ, সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তে আপত্তি, সব কথাই লিখেছেন তিনি৷

প্রসঙ্গত, একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পর পরই বেসুরো হন কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের উপর অনাস্থা প্রকাশ করেছিলেন, ISF-এর সঙ্গে জোট নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন৷ বলেছিলেন, ‘এখনই দলের সব কমিটি ভেঙে দেওয়া উচিত। শূন্য থেকে শুরু করতে হবে।’ অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা লিখে রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রকে একটি চিঠিও লিখেছেন তিনি। এই সব ‘বেসুর’ নিয়ন্ত্রণে আনার আগেই নিজের লেখা বইয়ের মাধ্যমে দলকে নতুন একটি সংকট উপহার দিলেন কান্তি৷ কিছুদিন আগে সিপিএম সাংসদ বিকাশ ভট্টাচার্য ‘কংগ্রেসি গুন্ডা’ কথাটি ব্যবহার করে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছিলেন৷ প্রতিবাদ জানায় কংগ্রেস ৷ বিতর্ক ধামাচাপা দিতে ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু জানিয়েছিলেন, ওই মন্তব্য দলের নয়। বিষয়টি নিয়ে কংগ্রেসও নীরব হয়ে যায়৷


কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের নতুন বই ‘রক্তপলাশের আকাঙ্খা’ বইটি জোটের ভবিষ্যৎকে অনিশ্চিত করতে পারে, এমন আশঙ্কা করছে আলিমুদ্দিন৷ ‘কান্তিবাবুকে খুন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল কংগ্রেস’, এই অভিযোগ ঘিরে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস নতুন দ্বন্দ্বে জড়াতে পারে, এমন আশঙ্কা করছে সিপিএম
নেতৃত্ব৷ শোনা যাচ্ছে, কান্তিবাবুকে আজ, মঙ্গলবারই ডেকে পাঠানো হয়েছে আলিমুদ্দিনে। বিমান বসু এবং সূর্যকান্ত মিশ্র না’কি কথা বলবেন কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে। জানতে চাইবেন, এতদিন পর, বর্তমান পরিস্থিতিতে কেন হঠাৎ এমন অভিযোগ তুললেন কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়?

ওদিকে, প্রশ্ন উঠেছে, এবার কংগ্রেস কী করবে ? এবারও কী বিমান বসু বলবেন, “ওই মন্তব্য দলের নয়।” আর তারপর কংগ্রেসও হজম করে নেবে সিপিএমের এক নেতাকে খুন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার গুরুতর অভিযোগটি ?