নবান্নের ছাপানো ভাষণ, নাকি স্বতঃপ্রণোদিত বক্তব্য? বিধানসভায় আজ নজরে রাজ্যপাল

0
1

প্রথা মেনে রাজ্যপালের (Governor) প্রারম্ভিক ভাষণ দিয়েই আজ, শুক্রবার নবনির্বাচিত বিধানসভার (Assembly) বাজেট অধিবেশন (Budget Session) শুরু হবে দুপুর ২টোয়। নিয়ম-রীতি অনুযায়ী, মন্ত্রিসভার অনুমোদিত ভাষণ (Speech) পাঠ করে শোনাতে হয় রাজ্যপালকে। কিন্তু এবার পরিস্থিতি অনেকটাই আলাদা। কার্যত রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাতের আবহতে শুরু হচ্ছে নতুন বিধানসভার বাজেট ও প্রথম অধিবেশন। ফলে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় (Jagdeep Dhankar) নবান্নের (Nabanna) ছাপানো ভাষণ পড়বেন, নাকি তার বাইরে গিয়ে প্রথা ভেঙে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে “সরকারবিরোধী” বক্তব্য রাখবেব, সেদিকে নজর থাকবে সকলের। সেক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী (CM) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) উপস্থিতিতে শাসকদলের বিধায়করা কী ভূমিকা নেন, তা নিয়েও যথেষ্ট কৌতূহল তৈরি হয়েছে। এদিন বিধানসভার ফ্লোরে রাজনৈতিক উত্তাপ কতটা কী তৈরি হতে পারে সেটাও নির্ভর করছে ওই বিষয়ের উপর।

সম্প্রতি, কেরলের রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খান সরকারের দেওয়া লিখিত ভাষণের বাইরে বাড়তি কিছু কথা বলে বিতর্ক তৈরি করেছিলেন। তাই রাজ্যপাল ধনকড় যদি লিখিত ভাষণের বাইরে কোনও বাড়তি বক্তব্য রাখেন, তা বিধানসভার রেকর্ডে না রাখার পথেই এগচ্ছে অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের সচিবালয়। পাশাপাশি এই “বাড়তি” ভাষণ সংবাদমাধ্যমে ব্যবহারের ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হতে পারে। তৃণমূল ও বিজেপি পরিষদীয় দল অবশ্য সূচনা পর্বের অধিবেশন নিয়ে অভ্যন্তরীণ প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। নেতৃত্বের শেষ মুহূর্তের নির্দেশ মোতাবেক আজ সদন কক্ষে অধিবেশন শুরুর প্রাক্কালেই বিধায়কদের ভূমিকা নিয়ে বার্তা দেওয়া দেওয়া হবে। তৃণমূল ও বিজেপি দুই শিবিরই এজন্য বিধায়কদের আগাম সদনে চলে আসার নির্দেশ দিয়েছে।

এর আগেও পশ্চিমবঙ্গ-সহ বিভিন্ন বিধানসভায় সরকারের তৈরি ভাষণ পড়া নিয়ে রাজ্যপালের মতভেদের নজির আছে। তবে সাধারণত সে সব ক্ষেত্রে রাজ্যপাল তাঁর ‘অসম্মতির’ অংশগুলি বাদ রেখে বাকি অংশ পাঠ করেন। পশ্চিমবঙ্গেই ১৯৬৯ সালে তৎকালীন রাজ্যপাল ধর্মবীর তাঁর ভাষণের একটি অংশ পড়েননি। সেখানে বলা হয়েছিল, অসাংবিধানিক ভাবে অজয় মুখোপাধ্যায়ের সরকার ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। বছর কয়েক আগে ত্রিপুরার রাজ্যপাল থাকাকালীন তথাগত রায়ও সেখানে বামফ্রন্ট মন্ত্রিসভার তৈরি করে দেওয়া ভাষণে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে সাম্প্রদায়িক বলা অংশটি বাদ দিয়েছিলেন। কেরল বিধানসভাতেও রাজ্যপালের ভাষণের অংশ বিশেষ বাদ দিয়ে পড়ার নজির আছে।

অতীত বলছে, রাজ্যপালের প্রারম্ভিক ভাষণ নিয়ে বিরোধীরা সব আমলেই সরব হয়েছে। এবং অভিযোগ তুলে বলেছে, সরকার রাজ্যপালের মুখ দিয়ে “অসত্য” বলিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু এ বারের পরিস্থিতি একেবারেই আলাদা। কারণ, রাজ্যপাল নিজে তাঁর ভাষণের বয়ান নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনা চেয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী তাতে সাড়া দেননি বরং জানিয়ে দিয়েছেন, সাংবিধানিক রীতি অনুযায়ী রাজ্যপালকে মন্ত্রিসভার অনুমোদিত বয়ানই পাঠ করতে হবে। এবং ইতিমধ্যেই তা তৈরি হয়ে গিয়েছে। গত বছরের বাজেট অধিবেশনের সময়ও রাজ্যপালের ভাষণ পড়া নিয়ে সংশয় ও প্রশ্ন উঠেছিল। তবে ধনকড় শেষ পর্যন্ত রাজ্য মন্ত্রিসভার অনুমোদিত বয়ানের বাইরে একটি শব্দও বলেননি। তবে এবার তিনি কী করেন সেটাই দেখার।

অন্যদিকে, স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘বিধানসভার রীতি মেনে সকলেই এ বারের অধিবেশনের উদ্দেশ্য সাধনে ইতিবাচক ভূমিকা নেবেন বলে আশা করছি।’’