খায়রুল আলম, ঢাকা
করোনা অতিমারির সংক্রমণ (Covid-19) বেড়ে যাওয়ায় প্রতিদিন বাড়ছে মৃত্যু এবং আক্রান্তর সংখ্যা। এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সারাদেশে সর্বাত্মক লকডাউন (Lockdown) ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সরকার। বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা থেকে শুরু হচ্ছে এই কঠোর বিধিনিষেধ (Restrictions)। ৭ দিনের এই লকডাউনে কেউ বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বাইরে বের হলেই কঠোর শাস্তি (Punishment ) দেওয়া হবে বলে সরকার এক বিজ্ঞপ্তিতে ( circular) জানিয়েছে।
সরকারি আদেশ অমান্য করে বাইরে বের হলে কী শাস্তি-এই প্রশ্ন এখন মুখে মুখে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৮ সালের সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল আইন প্রয়োগ করতেও বাধা নেই লকডাউন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে। ‘সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮ এর ১৬ (গ) ধারার বিধিনিষেধ অনুযায়ী, কোনো স্থানে জন সাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ বা সীমিত করণ করে বা ১৪৪ ধারা জারি করে জনবিচ্ছিন্ন করতে পারে। কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণের জন্য ‘আইসোলেশন’, ‘কোয়ারেন্টিন’ ও ‘লকডাউন’ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে এই আইনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের এক আইনজীবী বলেন, সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮ এর ১১ (২) ধারা অনুযায়ী, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মচারী কোনো এলাকা লকডাউন ঘোষণা করতে পারেন। ১৬ (ক) ধারা অনুযায়ী সন্দেহজনক স্থান জীবাণুমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট স্থানে জনসাধারণের প্রবেশ ও ব্যবহার নিষিদ্ধ বা সীমিতকরণও করা যায়। কোনো ব্যক্তি যদি লকডাউন না মেনে সংক্রামণ ছড়ায় তাহলে ভ্রাম্যমাণ আদালত (Mobile Court ) তাকে এক লাখ টাকা জরিমানা বা ছয় মাসের জেল দিতে পারবেন। এছাড়া আইনের ২৫(৩) ধারা অনুযায়ী, সংক্রামণ নিয়ন্ত্রণে দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তাকে কোনো ব্যক্তি যদি দায়িত্ব পালনে বাধা দেন বা নির্দেশ পালনে অসম্মতি জ্ঞাপন করেন তাহলে তাকে তিন মাসের জেল ( Jail )বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল আইন-২০১৮ এর ২৪(২) ধারা অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি সংক্রামণ জীবানুর বিস্তার ঘটান বা বিস্তার ঘটাতে সহায়তা করেন তাহলে তিনি অনূর্ধ্ব ছয় মাসের কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এই সাজা দেবেন ভ্রাম্যমান আদালত।
সরকারি তথ্য বিবরণে মঙ্গলবার বলা হয়, জনসাধারণ ও যানবাহন চলাচল এবং বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা বন্ধের বিষয়ে সরকার বিধিনিষেধ ও নিষেধাজ্ঞা পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ সময়ে জরুরি পরিষেবা প্রদানকারী কর্মরতরা ছাড়া এবং জরুরি কারণ ছাড়া ঘরের বাইরে কেউ বের হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এতে আরও বলা হয়, বিধিনিষেধ ও নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য সংবলিত প্রজ্ঞাপন বুধবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা হবে। এ ছাড়া মাস্ক (Mask ) পরিধানসহ সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য সবাইকে অনুরোধ জানানো হয়।
এদিকে গত সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, আগামী ১-৭ জুলাই পর্যন্ত কঠোর লকডাউন চলাকালে সাধারণ ছুটি থাকছে না। ৭ জুলাইয়ের পর বিধিনিষেধ বাড়বে কি না- জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আমরা দেখি, আমাদের যে অভিজ্ঞতা সেখানে দেখেছি, ১৫-২০ দিনে সুপারভাইস করছি, যেসব এলাকায় যেমন চাঁপাইনবাবগঞ্জ স্ট্রিক্টলি ব্লক করে দেওয়াতে (করোনা সংক্রমণ) অনেক কমে গেছে। সাতক্ষীরাতে ইম্প্রুভ করেছে। যেখানে যেখানে আইসোলেটেডb( Isolated) করে দিয়েছি, মুভমেন্ট রেস্ট্রিকটেড (Movement restricted )করে দিছি, সেখানে সেখানে ইম্প্রুভ )Improve) করেছে। সরকার যদি মনে করে আরও সাত দিন যেতে হবে, সেটাও বিবেচনায় আছে।’
এদিকে গত সোমবার থেকে গণপরিবহন, শপিং মল, মার্কেটসহ বিভিন্ন কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এটিকে বলা হচ্ছে ‘সীমিত পরিসরের লকডাউন’। তিন দিনের এই লকডাউন বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত চলবে। এরপর শুরু হবে কঠোর বিধিনিষেধ।